অন্তরাত্মা সিনেমা রিভিউ: ব্যাকডেটেড গল্পে নতুনত্বের অভাব
সিনেমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
‘অন্তরাত্মা’ ২০২১ সালের একটি বাংলাদেশি সিনেমা যা পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন শাকিব খান, দর্শনা বণিক ও শাহেদ শরীফ খান। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা সিনেমাটি শেষমেশ মুক্তি পেলেও দর্শকদের মধ্যে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
ভালো লাগার কিছু দিক
দর্শনা বণিকের উপস্থিতি
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক বলা যায় দর্শনা বণিককে। পুরো সিনেমা জুড়েই তার লুক ও স্ক্রিন প্রেজেন্স মনোমুগ্ধকর ছিল। যদিও তিনি নিজে ডাবিং করেননি, তবুও অভিনয়ের সাবলীলতা বেশ প্রশংসনীয়।
সঙ্গীতের গুণগত মান

অন্তরাত্মা সিনেমা রিভিউ: ব্যাকডেটেড গল্পে নতুনত্বের অভাব
সিনেমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
‘অন্তরাত্মা’ ২০২১ সালের একটি বাংলাদেশি সিনেমা যা পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন শাকিব খান, দর্শনা বণিক ও শাহেদ শরীফ খান। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা সিনেমাটি শেষমেশ মুক্তি পেলেও দর্শকদের মধ্যে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
ভালো লাগার কিছু দিক
দর্শনা বণিকের উপস্থিতি
এই সিনেমার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক বলা যায় দর্শনা বণিককে। পুরো সিনেমা জুড়েই তার লুক ও স্ক্রিন প্রেজেন্স মনোমুগ্ধকর ছিল। যদিও তিনি নিজে ডাবিং করেননি, তবুও অভিনয়ের সাবলীলতা বেশ প্রশংসনীয়।
সঙ্গীতের গুণগত মান
সিনেমার তিনটি গানই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে জুবিন নটিয়ালের গাওয়া ‘অন্তরাত্মা’ টাইটেল সং এবং ‘একা আড়ালে’ গানটি শ্রোতাদের ভালো লেগেছে। গানগুলো সিনেমার বাকি অংশের তুলনায় অনেক বেশি মানসম্মত।
Related Post
দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের উন্নতি
প্রথমার্ধ একঘেয়ে হলেও দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গল্পের উন্নতি দেখা যায়। কয়েকটি মুহূর্তে কনফ্লিক্ট তৈরি হয়, তবে সেটাও খুব বেশি গভীর নয়।
নেগেটিভ দিকগুলো বিশ্লেষণ
পুরনো দিনের সিনেমার ট্রিটমেন্ট
‘অন্তরাত্মা’ পুরোপুরি ব্যাকডেটেড একটি সিনেমা। ২০১২-১৩ সালের কনসেপ্ট এবং ট্রিটমেন্ট নিয়ে তৈরি হওয়া এই সিনেমা বর্তমান যুগের দর্শকদের সাথে একেবারেই সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি।
পরিচালনার দুর্বলতা
ওয়াজেদ আলী সুমনের মেকিং এই সিনেমার অন্যতম দুর্বল দিক। শুরুটা এতটাই এলোমেলো যে বোঝা যায় না কে কেমন চরিত্রে। কোন সংলাপ কখন কে দিচ্ছে সেটার মধ্যে নেই কোনো যৌক্তিকতা।
সম্পাদনার দুর্বলতা
সিনেমাটির এডিটিং হতাশাজনক। দৃশ্যান্তরের কোনো রিদম নেই। মনে হয়েছে যে, একাধিক ফুটেজ না পাওয়ায় ব্যাকআপ শট দিয়ে সিনেমা বানানো হয়েছে।
অভিনয় পারফরম্যান্স ও চরিত্রায়ণ
শাকিব খানের বিভ্রান্তিকর চরিত্র
শাকিব খানের চরিত্রটি একেবারেই অস্পষ্ট। চরিত্রে তার কি উদ্দেশ্য ছিল বা তিনি কীভাবে উন্নতি লাভ করছেন—তা বোঝা যায় না। ফার্স্ট হাফে তাকে ভারী দেখালেও সেকেন্ড হাফে হঠাৎ স্লিম হয়ে যাওয়া প্রশ্ন তোলে, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
শাহেদ শরীফ খানের অতিরিক্ত নাটকীয়তা
এই চরিত্রে তার ওভারঅ্যাক্টিং পুরো সিনেমার ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ইমোশনাল সিনে তিনি যেভাবে অভিনয় করেছেন, তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।
অন্যান্য চরিত্রের অনুপস্থিতি
বাকি চরিত্রগুলোর জন্য পর্যাপ্ত স্ক্রিনটাইম বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে তারা দর্শকদের মনে কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি।
প্রযুক্তিগত দিক বিশ্লেষণ
চিত্রগ্রহণ ও কালার গ্রেডিং
সিনেমাটির ক্যামেরার কাজ খুবই সাধারণ। কোনো ইনোভেটিভ ফ্রেমিং নেই। কালার গ্রেডিংও অস্বাভাবিক এবং সময়ের সাথে মানানসই নয়।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও আবহ
সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক একঘেয়ে এবং বেশ কয়েকটি দৃশ্যে তা বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। বারবার একই সুর ব্যবহার করা হয়েছে যা ক্লান্তিকর।
সংলাপ ও স্ক্রিপ্টের দুর্বলতা
ফেরারী ফরহাদের সংলাপগুলো অত্যন্ত কাব্যিক, কিন্তু তা সিনেমার প্রেক্ষাপটে বেমানান। অপ্রয়োজনীয়ভাবে সব চরিত্রকে কবি বানিয়ে তোলা হয়েছে।
গল্প ও ক্লাইম্যাক্স
‘খাইরুন সুন্দরী’র আধুনিক এডাপটেশন?
দ্বিতীয়ার্ধে গল্প যতই উন্নতির দিকে এগোয়, ততই মনে হয়েছে এটি যেন ‘খাইরুন সুন্দরী’ সিনেমার মডার্ন সংস্করণ। ট্রেইলার থেকেই ক্লাইম্যাক্স বোঝা গিয়েছিল, তাই চমক ছিল না।
সমাপ্তির অনুভূতি
শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি চোখের এক অংশ খোলা রেখেই শেষ করেছি। কিছু চেষ্টার পরেও এটা ঘুমপাড়ানি না হলেও, সিনেমা দেখার পর আত্মা নিয়ে বাড়ি ফেরাটা ছিল প্রাপ্তি।
উপসংহার
‘অন্তরাত্মা’ এমন একটি সিনেমা যা বহু বছর আগে মুক্তি পেলে হয়তো কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পেত। কিন্তু বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেখতে গেলে এটি একেবারেই সময়ের পিছনে পড়ে থাকা একটি উদাহরণ। সিনেমার কিছু গান আর দর্শনা বণিকের উপস্থিতি ছাড়া খুব বেশি কিছু বলার মতো নেই। শাকিব খানের মতো একজন তারকার সিনেমাতে এমন দুর্বল স্ক্রিপ্ট, ফ্ল্যাট ক্যারেক্টারাইজেশন ও দুর্বল পরিচালনা সত্যিই হতাশাজনক। একঘেয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, এলোমেলো সংলাপ, এবং প্রেডিক্টেবল ক্লাইম্যাক্স পুরো অভিজ্ঞতাটাকেই ফিকে করে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা উত্তরণ ঘটলেও সেটি যথেষ্ট নয় এই ব্যাকডেটেড ট্রিটমেন্টকে রক্ষা করার জন্য। যদি সত্যিই হাতে সময় ও ধৈর্য থাকে, তবেই কেবল এই সিনেমাটি দেখার কথা চিন্তা করা যায়। না হলে ‘অন্তরাত্মা’ শুধুই সময়ের অপচয়।