অ্যানথ্রাক্স কী?
অ্যানথ্রাক্স (Anthrax) হলো একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ, যা Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এই ব্যাকটেরিয়া মাটি, পশুর দেহ ও তাদের নির্গত বর্জ্যে স্পোর আকারে বহু বছর ধরে জীবিত থাকতে পারে।
এই রোগ সাধারণত গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মধ্যে দেখা যায়। তবে সংক্রমিত পশুর সংস্পর্শে এলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং কিছু ধরণে প্রাণঘাতী হতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স কীভাবে ছড়ায়?
অ্যানথ্রাক্স মূলত ব্যাকটেরিয়ার স্পোরের মাধ্যমে ছড়ায়। এই স্পোরগুলো সহজে মাটি, পশুর চামড়া, লোম ও পরিবেশে টিকে থাকে এবং মানবদেহে প্রবেশ করলে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
মানবদেহে সংক্রমণের প্রধান ৪টি উপায়:
-
১. চর্ম অ্যানথ্রাক্স (Cutaneous Anthrax)
সংক্রমিত পশুর চামড়া, লোম বা রক্তের সংস্পর্শে এলে চামড়ায় ফোসকা পড়ে যা পরে একটি কালো ঘা (eschar) এ পরিণত হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরন এবং চিকিৎসা করলে কম বিপজ্জনক।
-
২. শ্বাসনালী অ্যানথ্রাক্স (Inhalation Anthrax)
স্পোর বাতাসে ভেসে থাকলে এবং তা শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে এই সংক্রমণ হয়। এটি সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা না হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
-
৩. আন্ত্রিক অ্যানথ্রাক্স (Gastrointestinal Anthrax)
দূষিত বা অর্ধেক রান্না করা সংক্রমিত পশুর মাংস খেলে এই সংক্রমণ হয়। এতে পেট ব্যথা, বমি, রক্তবমি এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
-
৪. ইনজেকশন অ্যানথ্রাক্স (Injection Anthrax)
দূষিত ইনজেকশন ড্রাগ (যেমন হেরোইন) শরীরে প্রবেশ করালে সংক্রমণ ঘটে। এটি ইউরোপে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তবে বাংলাদেশে খুবই বিরল।
অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ
- চর্ম অ্যানথ্রাক্স: চুলকানি, ফোসকা, পুঁজপূর্ণ ঘা, কালো দাগ
- শ্বাসনালী: গলা ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে প্রদাহ
- আন্ত্রিক: পেট ব্যথা, বমি, রক্তপাত, ডায়রিয়া
- ইনজেকশন: ইনজেকশন স্থানে ফোলাভাব, ব্যথা, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে করণীয়
- গবাদি পশুদের নিয়মিত টিকা প্রদান করুন।
- পশুর চামড়া ও রক্তের সংস্পর্শে এলে হাত ধুয়ে ফেলুন।
- চামড়া ও পশুর পণ্য ব্যবহারে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
- মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করুন।
- সংক্রমণের সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা
অ্যানথ্রাক্স হলে দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগের ধরন ও সংক্রমণের স্তরের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রধান চিকিৎসা:
- অ্যান্টিবায়োটিক: যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ডক্সিসাইক্লিন, পেনিসিলিন।
- অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়।
- সাপোর্টিভ কেয়ার: ইনফেকশন বেশি হলে স্যালাইন, অক্সিজেন বা অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়।
উপসংহার
অ্যানথ্রাক্স একটি মারাত্মক কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ। সঠিক সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চললেই এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খামার, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও মাংস বাজারে যারা কাজ করেন, তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।