গুলিস্তান সিনেমা হল: ইতিহাস, বর্তমান অবস্থান, এবং ঢাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

গুলিস্তান সিনেমা হল: ইতিহাস, বর্তমান অবস্থান, এবং পরিবর্তনের গল্প
Gulistan Cinema Hall

গুলিস্তান, ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা, যেখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি নাম বহুদিন ধরে ঢাকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে— গুলিস্তান সিনেমা হল। যদিও এই সিনেমা হলটি এখন আর নেই, এর নাম ও ইতিহাস এখনও মানুষের মনে জ্বলজ্বল করছে। আসুন, জেনে নিই এই সিনেমা হলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বর্তমান অবস্থান।

গুলিস্তানের পরিচিতি: কেন এই নাম?

বর্তমান গুলিস্তান এলাকা একসময় পরিচিত ছিল লিবার্টি সিনেমা হল নামে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী খানবাহাদুর ফজলে আহমেদ দোসানি ঢাকায় এসে নির্মাণ করেন একটি অত্যাধুনিক সিনেমা হল। পরে এই হলের নামকরণ করা হয় গুলিস্তান সিনেমা হল। এই সিনেমা হলের নাম অনুসারে পুরো এলাকাটির নাম হয়ে যায় গুলিস্তান

শব্দতাত্ত্বিকভাবে "গুলিস্তান" শব্দের অর্থ ফুলের বাগান। জানা যায়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকে এখানে একটি ফুলের বাগান ছিল, যা সংস্কৃতিপ্রেমীদের আড্ডার জায়গা হিসেবে পরিচিতি পায়। সেই বাগান ও সিনেমা হলের সঙ্গে এলাকাটির পরিচয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।

গুলিস্তান সিনেমা হলের নির্মাণ এবং ইতিহাস

১৯৫২ সালের শেষের দিকে রমনা এলাকায় গুলিস্তান সিনেমা হল নির্মাণ করেন ফজলে আহমেদ দোসানি। এটি ছিল ঢাকার প্রথম আধুনিক এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল। ১৯৫৩ সালে এই হলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আগা খান
প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো:

  • অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলী।
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ।
  • ইংরেজি সিনেমা প্রদর্শনের জন্য একটি ছোট হল নাজ সিনেমা হল নির্মাণ।

গুলিস্তান সিনেমা হলের প্রভাব

এই সিনেমা হলটি শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জায়গা ছিল না; এটি ছিল ঢাকার সংস্কৃতি এবং বিনোদন জগতের একটি কেন্দ্র। বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি ঢাকার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • পঞ্চাশের দশকে এখানে সিনেমাপ্রেমীদের আড্ডা জমত।
  • ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন ও মোঘল আমলের একটি কামানও এই এলাকাকে ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ করেছিল।

১৯৭১ পরবর্তী পরিবর্তন

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গুলিস্তান সিনেমা হলের মালিক পাকিস্তানে চলে যান এবং হলসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাটি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট-এর অধীনে আসে।

  • ১৯৭২ সালে এই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে হস্তান্তর করা হয়।
  • ২০০৫ সালে সিনেমা হলটি ভেঙে সেখানে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স: নতুন রূপ

বর্তমানে গুলিস্তান সিনেমা হলের জায়গায় নির্মিত হয়েছে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স। যদিও এই কমপ্লেক্সটি ২০ তলা হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১০ তলা পর্যন্ত। শীর্ষ ফ্লোরে একটি সিনেমা হল নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

গুলিস্তান হল মার্কেট: নামের রহস্য

যাত্রা পরিবহনগুলোর হেলপারদের মুখে এখনো শোনা যায় "হল মার্কেট" নাম। এই নামটি এসেছে গুলিস্তান সিনেমা হল থেকে, যা একসময় এখানকার প্রধান আকর্ষণ ছিল। যদিও হলটি আর নেই, কিন্তু নামটি এখনও মানুষের মনে অমলিন।

গুলিস্তান: ঐতিহ্য এবং পরিবর্তনের মিশেল

গুলিস্তান এলাকার ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটির অস্তিত্ব আর নেই। তবে এর ইতিহাস ঢাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ। আধুনিক গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এবং আশপাশের পরিবেশ ঢাকার দ্রুত পরিবর্তনশীল চিত্রকে তুলে ধরে।

উপসংহার

গুলিস্তান সিনেমা হল ঢাকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। যদিও এই হলটি আর নেই, তবে এর স্মৃতি এবং ঐতিহ্য এখনও জীবিত। ঢাকার গুলিস্তান এলাকা শুধু একটি স্থান নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.