মাহে রমযান: রোযার নিয়্যত, ইফতার, তারাবীহ নামাজ ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

মাহে রমযান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, রোযার নিয়্যত, ইফতার, তারাবীহ নামায এবং মাসআলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
Ramadan

রোযা: নিয়্যত, দোয়া, নামায ও বিভিন্ন মাসআলা

মাহে রমযান

শাবান মাসের পর আসে মাহে রমযান। পবিত্র রমযান এক মাসের রোযা রাখা প্রত্যেক বালেগ-আক্কেল মুসলমানের উপর ফরয। কেউ শরীয়তসম্মত কারণে রোযা রাখতে অপারগ হলে প্রত্যেক রোযার জন্য 'ফিদিয়া' দিতে হয়। রোযা পালনের জন্য নিয়্যত করতে হয়। সারাদিন রোযা পালনের পর সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতে হয়।

রোযার নিয়্যত:

نَوَيْتُ أَنْ أَصُومَ غَدًا مِّنْ شَهْرٍ رَمَضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضًا لَّكَ يَا الله فَتَقَبَّلُ مِنِّي إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ -

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ আসূ-মা গাদাম্ মিন শাহরি রামাদ্বা-নাল মুবারাক; ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া-আল্লা-হ, ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী- ইন্নাকা আনতাস সামী 'উল 'আলী-ম।

অর্থ: আমি আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম। হে আল্লাহ! তুমি এটা আমার নিকট থেকে কবুল কর; নিশ্চয় তুমি শ্রোতা, জ্ঞাতা।

ইফতারের নিয়্যত:

اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّحِمِينَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকা সুমতু ওয়া'আলায়কা তাওয়াক্কালতু ওয়া'আলা-রিয্ক্বিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া-আর হামার রা-হিমী-ন।

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমারই (সন্তুষ্টির) জন্য আমি রোযা রেখেছি তোমার উপরই ভরসা করেছি এবং তোমারই রিয্ক্বির উপর ইফতার করছি, তোমার দয়া সহকারে, হে সর্বাধিক দয়ালু।

তারাবীহ নামায:

পবিত্র রমযানের প্রতি রাতে এশা ও বিতরের নামাযের মধ্যভাগে দু'দু' রাকআত করে বিশ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ার বিধান রয়েছে।

তারাবীহর নামাযের নিয়্যত:

نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَّرَاوِيحَ - سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ َتعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ -

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা'আ-লা রাকা'আতাই সোয়ালা-তিত তারা-ভী-হ। সুন্নাতু রসূ-লিল্লা-হি তা'আ-লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারী-ফাতি আল্লা-হু আকবার।

অর্থ: আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বেবলামুখী হয়ে দু' রাক'আত তারাবীহর সুন্নাত নামায সম্পন্ন করছি। আল্লাহু আকবার।

প্রতি দুই রাক'আত তারাবীহ নামাযের পর দরূদ শরীফ:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيعِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَالِهِ وَأَصْحَابِهِ وَبَارِكْ وَسَلِّمُ -

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সল্লি আ'লা- সাইয়্যিদিনা- ওয়া নাবিয়্যিনা- ওয়া শাফী-'ইনা- ওয়া মাওলা-না- মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলায়হি ওয়া আ-লিহী ওয়া আসহা-বিহী ওয়া বারিক্ ওয়া সাল্লিম।

প্রতি চার রাক'আত তারাবীহ নামাযের পর দো'আ:

سُبُحْنَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبُحْنَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ -

উচ্চারণ: সুবহা-না যিল মুললিক ওয়াল মালাকুতি, সুবহা-না যিল্ 'ইয্যাতি ওয়াল্ 'আয্যাতি ওয়াল্ হায়বাতি ওয়াল্ কুদরাতি ওয়াল্ কিবরিয়া-ই ওয়াল্ জাবারূ-তি।

তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাক'আত পর মুনাজাত:

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ، يَا خَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيزُ يَا غَفَّارُ -

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসআলুকাল্ জান্নাতা ওয়া না'ঊ-যুবিকা মিনান্ না-র, ইয়া খা-লিকাল জান্নাতি ওয়ান্ না-র; বিরাহমাতিকা ইয়া- আযী-যু ইয়া গাফ্ফা-রু।

কি কি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে

১. মহিলাদের গর্ভাবস্থায়

২. স্তন্য দান

৩. সফর

৪. অসুস্থতা

৫. বার্ধক্য

৬. জীবন নাশের আশংকা

৭. মস্তিষ্ক বিকৃতি

৮. জিহাদ

এসব কারণে রমযানের রোযা না রাখার অনুমতি আছে এবং এসব কারণ দূরীভূত হওয়ার পর বাদ পড়া রোযাসমূহের প্রতিটি রোযার বদলে একটি করে ক্বাযা আদায় করতে হবে।

মাসআলা:

গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মহিলা যদি রোযা রাখলে নিজের জীবন, গর্ভের শিশু অথবা দুগ্ধপায়ী শিশুর জীবন নাশের আশঙ্কা হয়, তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে। স্তন্যদাত্রী শিশুর মা ও ধাত্রী একই বিধানের আওতাভুক্ত।

তদ্রূপ অসুস্থতার কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে, তবে তা তখনই, যখন রোগ বৃদ্ধির বা বিলম্বে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুস্থ ব্যক্তি নিছক খেয়াল বা বাহানা করে রোযা ছেড়ে দিতে পারবে না। দৃঢ় বিশ্বাসের তিনটি লক্ষণ রয়েছে:

  • এক. রোগ বৃদ্ধির বা জীবন নাশের বাহ্যিক লক্ষণ পাওয়া গেলে।
  • দুই. নিজস্ব অভিজ্ঞতা।
  • তিন. এমন অভিজ্ঞ ও পারদর্শী মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শ, যে ফাসেক্ব নয়।

উক্ত বিষয়সমূহের কোন একটি পাওয়া না গেলে নিছক কল্পনা বা ফাসেক্ব ডাক্তারের পরামর্শক্রমে রোযা ভঙ্গ করলে ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টাই আবশ্যক হবে। [রদ্দুল মুহতার]

মাসআলা:

কোন অনভিজ্ঞ চিকিৎসক সামান্য সর্দির মত রোগের কারণেও রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলে তার পরামর্শ অনুসারে রোযা ভঙ্গ করা যাবে না।

মাসআলা: সফর ও রোযা

শর’ঈ সফরের ক্ষেত্রে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। সাধারণ ৮-১০ মাইলের সফরে রোযা ভঙ্গ করা যাবে না। শর’ঈ সফর বলতে তিন মঞ্জিল (৫৭-৬১ মাইল) বা অধিক পথ অতিক্রম করা বোঝায়। যদি সফরের সময় কোনো সমস্যা না হয়, তবে রোযা রাখা উত্তম ও অধিক সওয়াবদায়ক।

তবে যদি কেউ সফরের সময় সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার আগে স্বদেশে ফিরে আসে এবং কিছু আহার না করে, তবে সে রোযার নিয়্যত করে রোযা পূর্ণ করবে। [কানুনে শরীয়ত]

মাসআলা: জীবন সংকট ও রোযা

অতিমাত্রায় ক্ষুধা ও তৃষ্ণার দরুণ যদি প্রাণহানির বা মস্তিষ্ক বিকৃতির আশঙ্কা হয় অথবা সর্পদংশনের ফলে প্রাণনাশের ভয় হয়, তবে রোযা ভেঙে ফেলা যাবে। তবে পরে ক্বাযা করতে হবে। [রদ্দুল মুহতার]

মাসআলা: বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা

যদি কেউ বার্ধক্যের কারণে এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে, ভবিষ্যতেও রোযা রাখার সামর্থ্য নেই, তবে সে রোযার পরিবর্তে ফিদিয়া প্রদান করবে। ফিদিয়া হলো একজন মিসকীনকে ফিতরার পরিমাণ খাবার বা তার সমমূল্য টাকা প্রদান করা। তবে পরবর্তীতে শক্তি ফিরে এলে ক্বাযা করা উত্তম। [হিদায়া]

নিষিদ্ধ দিনে রোযা:

নিম্নলিখিত ৫ দিনে রোযা রাখা **হারাম**:

  • ঈদুল ফিতর (শাওয়াল ১)
  • ঈদুল আজহা (জিলহজ ১০)
  • জিলহজের ১১, ১২, ১৩ তারিখ

উক্ত দিনে কেউ নফল রোযা রাখলে তা ভেঙে ফেলতে হবে, তবে ক্বাযা লাগবে না। কিন্তু মান্নতের রোযা থাকলে ঈদের পরে তা আদায় করতে হবে। [বাহারে শরীয়ত]

মাসআলা: অতিথি ও মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য রোযা

মেহমানের আপ্যায়নের জন্য দ্বিপ্রহরের আগে নফল রোযা ভাঙা যাবে, তবে পরে ক্বাযা করতে হবে। মা-বাবার নির্দেশে আসরের পূর্ব পর্যন্ত নফল রোযা ভাঙা যেতে পারে। কিন্তু রমযানের ফরয রোযা বা ক্বাযা রোযা মা-বাবার আদেশে ভাঙা যাবে না। [আলমগীরী]

মাসআলা: দাওয়াতের কারণে নফল রোযা ভঙ্গ

কোনো মুসলমানের দাওয়াতে অংশগ্রহণের জন্য দ্বিপ্রহরের আগে নফল রোযা ভাঙা যাবে, তবে পরে ক্বাযা করতে হবে। তবে রমযানের ফরয ও ক্বাযা রোযা ভাঙার অনুমতি নেই। [কানুনে শরীয়ত]

মাসআলা: স্বামীর অনুমতি ছাড়া রোযা

স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী যদি নফল বা মান্নতের রোযা রাখে, তবে স্বামী চাইলে সে রোযা ভাঙতে পারবে, তবে পরে ক্বাযা করতে হবে। তবে রমযানের ফরয রোযা স্বামীর আদেশে ভাঙা যাবে না। [কিতাবুল আশবাহ]

মাসআলা: জ্ঞান হারানো ও রোযা

যদি কেউ এমন অবস্থায় পৌঁছে যেখানে তার হুঁশ বা জ্ঞানের ব্যতিক্রম ঘটে, তবে রোযা ভাঙতে পারবে, তবে পরে ক্বাযা করতে হবে। [বাহারে শরীয়ত]

মাসআলা: বাধ্য হয়ে রোযা ভঙ্গ

যদি কেউ প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির ভয়ে বাধ্য হয়ে রোযা ভাঙে, তবে তা জায়েজ হবে, তবে পরে ক্বাযা করবে। [দুররে মোখতার]

মাসআলা: শপথ ও রোযা

যদি কেউ শপথ করে বলে, "যদি তুমি রোযা ভাঙো না, তবে আমার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে," তাহলে সে রোযা ভাঙতে পারবে, তবে পরে ক্বাযা করতে হবে।

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়:

১. রমযান মাসের ফরয রোযা নিয়্যত করে রাখার পর বিনা প্রয়োজনে ইচ্ছা করে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে।

তবে রমযান ব্যতীত অন্য মাসে মান্নতের রোযা, নফল রোযা, অথবা রমযানের ক্বাযা রোযা রাখা শুরু করার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করা হয়, তবে একটার পরিবর্তে শুধু একটি পরে ক্বাযা করবে, কাফফারা ওয়াজিব হবে না। একইভাবে, যদি কোন মুসাফির, রোগী, নাবালেগ, বা মজনূন (পাগল) রমযানের রোযা শুরু করার পর এবং রোগী সুস্থ হওয়ার পর রোযা ভঙ্গ করে, তবে একটি রোযার পরিবর্তে শুধু একটি ক্বাযা করবে। নাবালেগ যদি রমযানের রোযা ভঙ্গ করে, তার উপর ক্বাযাও ওয়াজিব হবে না, কারণ সে শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতার বাইরে।

২. রমযানের রোযা নিয়্যত করে রাখার পর রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সামনে বা পিছনের রাস্তায় সঙ্গম করলে বা করালে।

৩. সিঙ্গা দেওয়ার দরুণ, সুরমা দেওয়ার দরুণ, চতুষ্পদ জন্তুর সাথে যৌন সঙ্গম করার দরুণ, কিংবা স্ত্রী বা অন্য রমনীকে স্পর্শ বা চুমু দেওয়ার কারণে রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।

ফলাফল: উপরোক্ত কারণে রমযানের একটি রোযার বদলে অন্য সময়ে একটি ক্বাযা রোযা এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে। [জওহারাহ ও বাহারে শরীয়ত ৫ম খন্ড]

কাফফারার বিবরণ:

ক. একজন গোলাম বা বাঁদী আযাদ করা।

খ. যদি তা সম্ভব না হয়, তবে টানা (মাঝখানে বিরতি ছাড়া) ৬০টি রোযা রাখা

গ. যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তবে ৬০ জন মিসকীন ও অভাবীকে পেট ভরে খাওয়ানো অথবা সমপরিমাণ খাবারের মূল্য পরিশোধ করা

কাফফারার ৬০ রোযা যেন একাধারে হয়, কোন কারণে মাঝখানে বাদ দিলে পুনরায় ৬০ রোযা নতুন করে একাধারে আদায় করতে হবে। তবে, কোন মহিলার কাফফারার একাধারে ৬০ রোযা রাখার সময় যদি মাসিক হায়েয বা ঋতুস্রাব শুরু হয়, তবে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর কাফফারার বাকী রোযা আদায় করবে। [রদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয়:

নিম্নলিখিত কারণসমূহে যদি কোন রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে শুধু ক্বাযা অর্থাৎ (একটি রোযার পরিবর্তে একটি রোযা আদায় করা) ওয়াজিব হয়ঃ

১. কোন রোযাদার রোযা অবস্থায় ইচ্ছা করে কোন অখাদ্য বস্তু যেমন মাটি, ঘাস, তুলা, কাগজ, কাঠ ও পাথর ইত্যাদি ভক্ষণ করলে।

২. কুল্লি করার সময় হঠাৎ পানি পেটের ভিতরে প্রবেশ করলে।

৩. জবরদস্তি বা জানের ভয়ে অথবা অঙ্গহানির হুকমি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে পানাহার করলে।

৪. বাধ্য হয়ে স্ত্রী সহবাস বা যৌন সঙ্গম করলে।

৫. নিদ্রাবস্থায় রোযাদারকে কেউ কোন খাদ্যবস্তু আহার করালে। (তবে শর্ত হল যে জাগ্রত হওয়ার পর রোযাদার এ ব্যাপারে ওয়াকিফহাল বা অবহিত হতে হবে।)

৬. বৃষ্টির পানি অথবা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাম বা অশ্রু মুখে পড়ার পর তা গিলে ফেললে।

৭. কানে তরল পদার্থ অথবা তৈল প্রবেশ করালে।

৮. পেট ও মাথার ক্ষতস্থানে তরল ঔষধ লাগানোর ফলে তা পেটে বা মস্তিষ্কে পৌঁছলে।

৯. অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি আসলে অথবা তা পুনরায় গিলে ফেললে।

১০. রাত মনে করে ভোরে অথবা সুবহে সাদিকের সময় সাহরী (পানাহার) অথবা স্ত্রী সহবাস করলে, পরে জানতে পারল যে সাহরী কিংবা স্ত্রী সহবাসের সময় সুবহে সাদিক ছিলো।

১১. সন্ধ্যা মনে করে সূর্য অস্তমিত না হতেই ইফতার করলে।

১২. ভুলক্রমে আহার করায় রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।

১৩. নিদ্রাবস্থায় সঙ্গম করলে।

১৪. বেহুশ অবস্থায় কেউ রোযাদারের সাথে সঙ্গম করলে।

১৫. নিয়্যত ও সাহরী ছাড়া রমযান মাসে দিনের বেলায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস না করলেও পরবর্তীতে এক দিনের একটি রোযা ক্বাযা করতে হবে।

১৬. রোযাদার দাঁত হতে জিহ্বা বা হাত দ্বারা চনা পরিমাণ কোন বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে, অনুরূপ দাঁত হতে রক্ত বাহির হয়ে যদি গলার ভিতরে চলে যায় এবং রক্তের স্বাদ ভিতরে অনুভূত হয়। অনুভূত না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না।

১৭. অল্প বমি মুখে আসার পর তা ইচ্ছা করে গিলে ফেললে।

১৮. যৌন উত্তেজনার সাথে স্ত্রী বা কোন রমনীকে চুমু দেওয়ার পর অথবা শরীর স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে।

১৯. নাকে তরল ঔষধ প্রবেশ করালে ও ইচ্ছা করে নশ টানলে।

২০. রমযান মাসে সকালে রোযার নিয়্যত না করে দ্বিপ্রহরের পর রোযার নিয়্যত করে পানাহার করলে।

২১. ছোট নাবালেগা মেয়ের সাথে (যে সঙ্গমের উপযোগী নয়) বা মৃত লাশ ও পশুর সাথে সঙ্গম করলে, যদি বীর্যপাত হয়।

২২. হস্ত মৈথুন করে অথবা স্ত্রীর রান বা পেটে হাত দিয়ে স্বেচ্ছায় বীর্য বের করলে (তবে হস্ত মৈথুনের ফলে বীর্য বের না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না)।

২৩. সুস্থাবস্থায় নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর পাগল হয়ে গেলে, পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরে আসলে উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করবে।

২৪. নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর রোযাবস্থায় মহিলাদের মাসিক ঋতু (হায়েয) ও প্রসবকালীন রক্ত (নিফাস্) জারী হলে।

২৫. রমযান মাসে সুবহে সাদিকের পূর্বে স্ত্রী সহবাসে নিয়োজিত হলো, সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে রমযানের রোযা শুরু করে দিলে, উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করা ভাল। কাফফারা নয়।

২৬. রোযাবস্থায় ভুলবশতঃ স্ত্রী সঙ্গমে নিয়োজিত হলে, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে গেল, তাহলে ক্ষতি নেই, কিন্তু স্মরণ হওয়ার পরও যদি সহবাস অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে উক্ত দিনের ক্বাযা ওয়াজিব, কাফফারা নয়।

২৭. হুক্কা, তামাক, সিগারেট পান করার দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা অপরিহার্য হয়।

মাসআলা: মুসাফির সফর থেকে রমযান মাসের দিনের বেলায় স্বদেশে ফিরে আসলে, মহিলারা হায়য-নেফাস থেকে রমযানের দিনের বেলায় পবিত্র হলে, মজনূনের (পাগল) জ্ঞান ফিরে আসলে, রোগী রমযানের দিনের বেলায় রোগ হতে মুক্ত হলে, কেউ বাধ্য করে রোযা ভাঙ্গালে, পানি হঠাৎ করে গলার ভিতরে চলে গেলে ভোর (সুবহে সাদিক) হওয়ার পর রাত আছে মনে করে সাহরী গ্রহণ করলে, ইফতারের সময় না হওয়া সত্ত্বেও সূর্য অস্ত গিয়েছে মনে করে ইফতার করলে, এমতাবস্থায় দিনের বাকী অংশ রোযার মত অতিবাহিত করা ওয়াজিব, পরে ক্বাযাও ওয়াজিব।

মাসআলা: মৃত ব্যক্তির যিম্মায় যদি রোযার ক্বাযা থাকে এবং তিনি সম্পদও রেখে যান আর রোযার ফিদিয়া আদায় করার জন্য ওলি-ওয়ারিশানকে ওসীয়ত করে যান তবে অবশ্যই যেন তার পক্ষ হতে প্রতি রোযার বিনিময়ে গরীব-মিসকীনকে ফিদিয়া আদায় করা হয়।

মাসআলা: শিশুর বয়স দশ বছর হওয়ার পর যদি রমযান শরীফের রোযা রাখার শক্তি থাকে, তবে তাকে রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে, না রাখলে বাধ্য করা হবে।

About the Author

Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.