ইসরাইলি পণ্য চেনার উপায় ও পণ্যের তালিকা | Identify Israeli Products

ইসরাইলি পণ্য চেনার উপায় ও পূর্ণ তালিকা, বিকল্প পণ্য, বর্জনের ইসলামিক দৃষ্টিকোণসহ বিস্তারিত তথ্য পড়ুন ও সচেতন থাকুন।
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

কেন ইসরাইলি পণ্য বর্জন জরুরি?

বর্তমান সময়ে অনেক মুসলিম দেশ এবং মানবতাবাদী মানুষ ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছেন। ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরাইলের আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে মানুষ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, অর্থনৈতিকভাবে ইসরাইলকে দুর্বল করার একটি উপায় হলো তাদের উৎপাদিত ও রপ্তানীকৃত পণ্য বর্জন করা। আমরা যদি দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যের দিকে তাকাই, তাহলে দেখি অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ইসরাইলের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।

বর্জনের অর্থ হলো শুধু ব্যবহার না করা নয়, বরং অন্যদেরও সচেতন করে তোলা এবং বিকল্প পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা। পণ্য বর্জনের মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষও বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকেই জানেন না কোন পণ্য ইসরাইলি বা কোন কোম্পানির সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক আছে। এই জন্য এই আর্টিকেলে আলোচনা করব কীভাবে আপনি ইসরাইলি পণ্য চিনবেন এবং সেগুলোর তালিকা কী কী।

israel

ইসরাইলি পণ্য কীভাবে চেনা যায়?

বারকোড থেকে পণ্য শনাক্তকরণ

প্রথমেই জানা দরকার, পণ্যের পেছনে থাকা বারকোড অনেক সময় দেশ চেনার একটি মাধ্যম হতে পারে। প্রতিটি পণ্যের উপরে একটি ইউনিক বারকোড থাকে এবং এই বারকোডের শুরুর ৩টি সংখ্যা সেই পণ্যের উৎপত্তি দেশের পরিচয় দেয়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • ৭২৯ দিয়ে শুরু হওয়া বারকোডগুলো সাধারণত ইসরাইলি পণ্য নির্দেশ করে।
  • ৭৩০ থেকে ৭৩৯ সাধারণত সুইডেন বা আশেপাশের দেশের হয়।

তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বারকোডে দেশ কোড থাকা মানেই সেটি সেই দেশেই তৈরি হয়েছে তা নয়। অনেক কোম্পানি বিভিন্ন দেশে প্রোডাকশন করে কিন্তু হেড অফিস থাকে ইসরাইলে। তাই বারকোড দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্যান্য দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে।

ব্র্যান্ড নাম ও কোম্পানির ইতিহাস যাচাই

অনেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পেছনে ইসরাইলি কোম্পানির মালিকানা থাকতে পারে বা তারা ইসরাইলকে সরাসরি অর্থ সহায়তা দেয়। ব্র্যান্ডের ইতিহাস ও মালিকানার সম্পর্ক জানলে বোঝা যায় তারা কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের লাভ কোথায় যায়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • Ahava: ডেড সি এর প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে কসমেটিকস তৈরি করে, এটি ইসরাইলি কোম্পানি।
  • SodaStream: ঘরে পানীয় প্রস্তুত করার মেশিন উৎপাদন করে, এদের হেডকোয়ার্টার ইসরাইলে।
  • Teva Pharmaceuticals: বিশ্বের অন্যতম বড় ঔষধ কোম্পানি, এটি ইসরাইলে ভিত্তিক।

এই ধরনের ব্র্যান্ডগুলো বর্জন করার আগে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। গুগল সার্চ, উইকিপিডিয়া, অথবা কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য পাওয়া সম্ভব।

অনলাইন ও অ্যাপ ব্যবহার করে চেনার উপায়

বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে আপনি সহজেই ইসরাইলি পণ্য শনাক্ত করতে পারেন মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে। অনেক অ্যাপ আছে যেখানে আপনি শুধু প্রোডাক্টের নাম টাইপ করলেই জানাতে পারে এটি ইসরাইলি কিনা।

কিছু জনপ্রিয় টুল:

  • Buycott: এই অ্যাপে আপনি বিভিন্ন ক্যম্পেইনে যোগ দিয়ে স্ক্যান করে দেখতে পারেন পণ্যটি কোনো ক্যম্পেইনের বিপরীতে যায় কিনা।
  • Boycott Scanner: স্ক্যান করে জানিয়ে দেয় কোম্পানিটি ইসরাইলি নাকি সমর্থক।
  • Barcode Scanner: সাধারণ বারকোড স্ক্যান করে উৎপত্তি ও নির্মাতা কোম্পানির তথ্য দেয়।

এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজে সচেতন হতে পারবেন এবং অন্যদেরও সচেতন করতে পারবেন। বিশ্বের লাখো মানুষ এখন এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করছে সচেতন বর্জনের জন্য।

বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইসরাইলি পণ্যের তালিকা

খাদ্য ও পানীয়

খাদ্য ও পানীয়র মধ্যে ইসরাইলি পণ্য অনেক সময় আমাদের অজান্তে ব্যবহৃত হয়ে যায়। কারণ অনেক পণ্যের প্যাকেজিংয়ে স্পষ্টভাবে দেশের নাম থাকে না। নিচে কিছু ইসরাইলি খাদ্য ও পানীয়র উদাহরণ দেয়া হলো:

  • Strauss Group: দই, চকলেট, স্ন্যাকস প্রস্তুতকারী কোম্পানি।
  • Osem: সুপ, স্ন্যাকস, পাস্তা প্রভৃতি তৈরি করে, এটি ইসরাইলের জনপ্রিয় খাদ্য ব্র্যান্ড।
  • Tivall: ভেজেটেরিয়ান ফুড প্রস্তুত করে।
  • Sabra: হুমাস এবং ডিপ প্রস্তুতকারী কোম্পানি, এটি ইসরাইলি অংশীদারিত্বে পরিচালিত।

এইসব ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য সচেতনভাবে এড়িয়ে চললে আপনি ইসরাইলের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে সহায়তা করতে পারেন।

প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স

প্রযুক্তির দুনিয়াতেও ইসরাইলি কোম্পানিগুলো বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য কোম্পানি:

  • Intel (Israel Branch): যদিও ইন্টেল আমেরিকান কোম্পানি, তাদের একটি বিশাল অংশের R&D ইসরাইলে হয়।
  • Check Point Software: সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যারে ইসরাইলি কোম্পানি।
  • Waze: এটি একটি ন্যাভিগেশন অ্যাপ যা গুগল কিনে নেয়, কিন্তু মূলত এটি ইসরাইলে তৈরি।

এই পণ্যগুলো প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহৃত হয়, তাই বিকল্প খোঁজা ও সচেতন থাকা জরুরি।

বিউটি ও কসমেটিক্স

ইসরাইলি কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের বাজার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুবই শক্তিশালী। ডেড সি’র খনিজ পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি পণ্যগুলো তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তোলে। তবে অনেক ব্যবহারকারী জানেন না যে, এসব পণ্যের পেছনে ইসরাইলি কোম্পানির সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। নিচে কিছু বিউটি পণ্যের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে:

  • Ahava: এটি অন্যতম বিখ্যাত ইসরাইলি কসমেটিক ব্র্যান্ড, যা মূলত ডেড সি’র খনিজ উপাদান ব্যবহার করে ফেসিয়াল মাস্ক, স্ক্রাব, ময়েশ্চারাইজার তৈরি করে।
  • Laline: ইসরাইলি স্কিন কেয়ার ও পারফিউম কোম্পানি।
  • Yes to: শ্যাম্পু, ফেস ওয়াশ, ওয়াইপসসহ নানা প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ পণ্য বিক্রি করে, যেটির মালিকানায় ইসরাইলি অংশীদার রয়েছে।

এইসব কোম্পানির পণ্য সরাসরি বর্জন করে তাদের বাজার দুর্বল করা সম্ভব। বাজারে অনেক ভালো বিকল্প রয়েছে যেমন The Body Shop, Himalaya, এবং Biotique। ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত কোন পণ্যে টাকা খরচ করছি এবং সেই অর্থ কোথায় যাচ্ছে।

পরিধান ও ফ্যাশন

যদিও ফ্যাশন ও পোশাক খাতে ইসরাইলি কোম্পানির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম, তবে কিছু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে ইসরাইলি সম্পর্ক রয়েছে বা ইসরাইলে উৎপাদন হয়। নিম্নোক্ত ব্র্যান্ড ও প্রোডাক্ট গুলো নজরে রাখা উচিত:

  • Delta Galil Industries: এটি একটি বড় ইসরাইলি পোশাক কোম্পানি, যারা Calvin Klein, Tommy Hilfiger ইত্যাদি ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে।
  • Fox-Wizel: ইসরাইল ভিত্তিক ফ্যাশন কোম্পানি, যারা নিজেদের এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি করে।
  • Castro: ইসরাইলের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড, যা আন্তর্জাতিকভাবে পোশাক রপ্তানি করে।

বিকল্প হিসেবে স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন Yellow, Texmart, Ecstasy ইত্যাদি থেকে পোশাক কিনলে একই সঙ্গে দেশীয় শিল্পও সমর্থন করা সম্ভব। ফ্যাশনে সচেতনতা এখন কেবল স্টাইলের ব্যাপার নয়, বরং নৈতিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিকল্প হিসেবে কোন পণ্য ব্যবহার করা যায়?

ইসরাইলি পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ, কিন্তু বাস্তবে তার বিকল্প খোঁজা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সৌভাগ্যবশত, বাজারে অনেক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলোর নৈতিক মানদণ্ড ভালো এবং ইসরাইলের সঙ্গে কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।

নিচে কিছু বিকল্পের তালিকা:

পণ্যের ধরণ ইসরাইলি ব্র্যান্ড বিকল্প ব্র্যান্ড
কসমেটিকস Ahava The Body Shop, Biotique
খাদ্য ও পানীয় Osem, Strauss Pran, Radhuni, Nestlé (নিরীক্ষা সহ)
পোশাক Castro, Fox Texmart, Artisan, Yellow
প্রযুক্তি SodaStream, Waze Google Maps, Local brands

বাংলাদেশি ও মুসলিম দেশগুলোর অনেক কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করে। তাদের ব্যবহারকে উৎসাহিত করলে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং একই সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া হবে।

পণ্য কেনার সময় সামান্য সময় নিয়ে লেবেল, উৎপাদক দেশের নাম ও কোম্পানির ইতিহাস যাচাই করা অভ্যাস করলে ভবিষ্যতে সচেতন বর্জন সহজ হবে।

অনলাইনে ইসরাইলি পণ্য বিক্রির মাধ্যমে কীভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়?

বর্তমানে অনেক মানুষ অনলাইন শপিং এর প্রতি আগ্রহী হওয়ায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ইসরাইলি পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। আপনি নিজেই একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে অন্যদের জানাতে পারেন কোন পণ্যগুলো এড়ানো উচিত। নিচে কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:

  • রিভিউ এবং কমেন্ট: যখনই কোনো ইসরাইলি পণ্য দেখবেন, সেটির রিভিউতে লিখে জানাতে পারেন কেন এটি বর্জন করা উচিত। এতে অন্য ক্রেতারাও সচেতন হবেন।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার: বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ বা ফেসবুক পেজে ইসরাইলি পণ্যের লিস্ট ও বিকল্প নিয়ে পোস্ট করতে পারেন।
  • ভিডিও ও কনটেন্ট তৈরি: ইউটিউব, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে পণ্যের বিস্তারিত তথ্যসহ কনটেন্ট তৈরি করলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
  • ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট: কোনো ইসরাইলি পণ্য চোখে পড়লে সেটি রিপোর্ট করে প্ল্যাটফর্মকে জানান দিতে পারেন।

অফলাইনে যেমন প্রচারণা দরকার, তেমনি অনলাইনেও সচেতনতা ছড়ানো আজকের যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে তথ্যভিত্তিক আলোচনা, সোর্স সহ প্রমাণ প্রদান ও বিকল্প তুলে ধরা বেশি কার্যকর।

ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ইতিহাস ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ধারণাটি নতুন নয়। Boycott, Divestment, Sanctions (BDS) আন্দোলন ২০০৫ সালে ফিলিস্তিন থেকে শুরু হয় এবং এরপর তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলে তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধ করা।

বিশ্বের অনেক দেশ ও সংগঠন এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ইউরোপের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসরাইলি পণ্যের বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
  • দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক প্রতিষ্ঠান বর্জনের আওতায় এসেছে।
  • আমেরিকায় কিছু চার্চ ও সংগঠন ইসরাইলি পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই আন্দোলন শুধু মুসলিমদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং যেকোনো মানবতাবাদী ব্যক্তি এই পণ্য বর্জনের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন। এটি শান্তিপূর্ণ ও নাগরিক পর্যায়ে পরিচালিত একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা সরাসরি রাজনীতি প্রভাবিত করতে পারে।

ছদ্মবেশী ইসরাইলি কোম্পানি ও সতর্কতা

অনেক ইসরাইলি কোম্পানি বর্তমানে অন্যান্য দেশের শাখা বা সাব-ব্র্যান্ড ব্যবহার করে পণ্য বাজারজাত করে। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারী সহজে বুঝতে পারেন না যে পণ্যটি ইসরাইলি কিনা। নিচে কিছু সতর্কতার বিষয় তুলে ধরা হলো:

  • কোম্পানির মালিকানা যাচাই করুন: কোনো কোম্পানি কে মালিক সেটি জেনে নেওয়া জরুরি।
  • সাব-ব্র্যান্ডগুলো খুঁজে বের করুন: একটি কোম্পানির অধীনে অনেক ছোট ব্র্যান্ড থাকতে পারে।
  • কনসালট্যান্ট বা ইনভেস্টরদের প্রোফাইল দেখুন: কেউ কেউ ইসরাইলি বিনিয়োগকারী থাকার কারণে পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ: Nestlé এর অধীনে থাকা অনেক সাব-ব্র্যান্ড আছে যেগুলোর মধ্যে কিছু ইসরাইলি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বে রয়েছে। তাই কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত রিসার্চ ছাড়া সিদ্ধান্তে না আসাই ভালো।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে কীভাবে ভূমিকা রাখা যায়?

আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগই সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আপনি যদি নিজে সচেতন হন এবং অন্যদের সচেতন করতে পারেন, তবে তা হবে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। নিচে কিছু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের কথা বলা হলো:

  1. পারিবারিক আলোচনায় পণ্য বর্জনের গুরুত্ব তুলে ধরা।
  2. স্কুল, কলেজ বা অফিসে সচেতনতা গড়ে তোলা।
  3. সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ও গ্রুপ তৈরি।
  4. স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলা ও বিকল্প পণ্য সরবরাহে উৎসাহিত করা।
  5. স্থানীয় শিল্প ও কৃষিপণ্য কেনা যেন অর্থ দেশের মধ্যে থাকে।

একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনি শুধু নিজেকে পরিবর্তন করছেন না বরং অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিলে সমাজে বড় প্রভাব ফেলা সম্ভব।

ইসরাইলি পণ্য চেনার জন্য মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইসরাইলি পণ্য চেনা আরও সহজ হয়ে গেছে মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের কল্যাণে। আপনি যেকোনো পণ্য কেনার আগে একটু সময় নিয়ে যাচাই করে নিতে পারেন এটি কোন দেশের, এর মালিক কারা, এবং এটি কি ইসরাইলি কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত কিনা। নিচে কিছু জনপ্রিয় অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের তালিকা দেওয়া হলো:

  • Buycott: একটি জনপ্রিয় অ্যাপ, যেখানে আপনি বারকোড স্ক্যান করলেই জানতে পারবেন সেই কোম্পানির পেছনের তথ্য। এটি BDS আন্দোলনের সাপোর্ট করে।
  • Boycott Israel Guide: এটি একটি ওয়েবসাইট, যেখানে আপডেটেডভাবে ইসরাইলি পণ্যের তালিকা রাখা হয়।
  • Who Profits: এই ওয়েবসাইটে ইসরাইলি দখলদারিত্বে জড়িত কোম্পানিগুলোর তালিকা থাকে।

এই অ্যাপ ও ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে আপনি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং সহজেই ইসরাইলি পণ্য এড়িয়ে যেতে পারবেন। প্রযুক্তি আমাদের হাতে এখন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যেটিকে কাজে লাগালে ইসরাইলি কোম্পানির বাণিজ্যিক আধিপত্যে আঘাত করা সম্ভব।

ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ইসলামী দৃষ্টিকোণ

ইসলাম ধর্মে ন্যায়-অন্যায়, নির্যাতন ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেসব পণ্য ও কোম্পানি মুসলিমদের উপর দমননীতি চালানো দেশের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলো বর্জন করার ব্যাপারে অনেক আলেম একমত। কোরআন ও হাদিসে জুলুমকারীদের সহায়তা না করার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

  • সূরা মায়েদা: "তোমরা একে অপরকে সৎকাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করো, কিন্তু গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে নয়।"
  • হাদিস শরিফ: "যে জুলুমকারীদের সাহায্য করে, সে জুলুমে শরিক।"

ইসলাম কেবল নামাজ ও রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বও এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, যদি কেউ জানে যে একটি পণ্য এমন একটি দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করছে, যে দেশ মুসলমানদের উপর নির্যাতন করছে, তবে সেই পণ্য বর্জন করা একটি ইসলামী দায়িত্ব।

উপসংহার

ইসরাইলি পণ্য চেনা ও বর্জন করা এখন আর জটিল কোনো বিষয় নয়, বরং এটি আপনার সদিচ্ছা ও সচেতনতার উপর নির্ভর করে। আপনি যখন বুঝে শুনে একটি পণ্য বেছে নেন, তখন আপনি শুধু একটি সামগ্রী কিনছেন না, বরং একটি বার্তা দিচ্ছেন – “আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে”।

ইসরাইলি কোম্পানিগুলোকে আর্থিকভাবে দুর্বল করা সম্ভব, যদি আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের পণ্য বর্জন করি। এটা কোনো সাময়িক আবেগ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধের অংশ। ছোট ছোট পদক্ষেপ মিলেই তৈরি করে বড় পরিবর্তন। এখন সময় এসেছে সেই পরিবর্তনের জন্য একসাথে কাজ করার।

আপনার কেনাকাটার প্রতিটি সিদ্ধান্ত হতে পারে একটি প্রতিবাদ।

About the Author

Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.