ক্লাউড কম্পিউটিং কাকে বলে, এর প্রকারভেদ ও ব্যবহার

ক্লাউড কম্পিউটিং কী, এর প্রকারভেদ, সুবিধা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। IaaS, PaaS ও SaaS সহ ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের
cloud-computing

ক্লাউড কম্পিউটিং কাকে বলে? প্রকারভেদ, সুবিধা ও ব্যবহার

ক্লাউড কম্পিউটিং হলো একটি প্রযুক্তি যেখানে ডেটা সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং সফটওয়্যার ব্যবহার ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়, স্থানীয় কম্পিউটারে না রেখে। সহজভাবে বললে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং তথ্য ব্যবহার করতে পারেন, তা আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল না করেই।

ক্লাউড কম্পিউটিং কী?

ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে এমন এক সেবা, যা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ, ডেটা বিশ্লেষণ, অ্যাপস চালানো ও ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এটি সাধারনত অন-ডিমান্ড ভিত্তিতে প্রদান করা হয় এবং ব্যবহারকারীরা শুধুমাত্র ব্যবহৃত রিসোর্স অনুযায়ী মূল্য প্রদান করে।

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর প্রকারভেদ

১. Public Cloud

এই ধরনের ক্লাউড সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকে। Amazon Web Services (AWS), Microsoft Azure, এবং Google Cloud Platform এর উদাহরণ।

২. Private Cloud

এটি একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং বাইরের কেউ এটি ব্যবহার করতে পারে না। এটি নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়।

৩. Hybrid Cloud

এই মডেলটি Public এবং Private Cloud এর সংমিশ্রণ, যা ব্যবহারকারীদের আরও বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি ও কন্ট্রোল দেয়।

৪. Community Cloud

ক্লাউড কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফটওয়্যার, ডেটা এবং সার্ভার রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে দেয়। এটি অনেক সুবিধা নিয়ে আসে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে।

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. অন-ডিমান্ড সেলফ-সার্ভিস (On-Demand Self-Service)

ব্যবহারকারীরা যখনই প্রয়োজন তখনই সার্ভার, স্টোরেজ বা অন্য রিসোর্স নিজেরাই চালু বা বন্ধ করতে পারেন, কোনো মানুষের সাহায্য ছাড়াই।

২. ব্রড নেটওয়ার্ক একসেস (Broad Network Access)

ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে ক্লাউড সেবা ব্যবহার করা যায় – মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কিংবা ট্যাবলেট দিয়ে।

৩. রিসোর্স পুলিং (Resource Pooling)

একটি সার্ভার অনেক ব্যবহারকারীর রিসোর্স চাহিদা একসাথে পূরণ করতে পারে। এটি ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে করে থাকে।

৪. র‌্যাপিড এলাস্টিসিটি (Rapid Elasticity)

প্রয়োজন অনুযায়ী খুব দ্রুত রিসোর্স বাড়ানো বা কমানো যায়, যেমন কোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইটে হঠাৎ ট্রাফিক বেড়ে গেলে সিস্টেম নিজেই রিসোর্স বাড়িয়ে দেয়।

৫. পরিমাপযোগ্য সেবা (Measured Service)

ব্যবহারকারীরা যতটা ব্যবহার করবে ঠিক ততটাই খরচ করতে হয়। যেমনঃ ঘণ্টা ভিত্তিক সার্ভার রেন্টাল, স্টোরেজ পরিমাণ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ।

৬. স্কেলেবিলিটি (Scalability)

ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ক্লাউড রিসোর্স সহজেই আপগ্রেড বা ডাউনগ্রেড করা যায়।

৭. হাই এভেইলেবিলিটি (High Availability)

ক্লাউড সেবা সাধারণত ৯৯.৯৯% সময় অন থাকে এবং যেকোনো সময়ে অ্যাক্সেসযোগ্য।

৮. মাল্টি-টেনেন্সি (Multi-Tenancy)

একই সার্ভারে একাধিক ইউজার তাদের নিজ নিজ ডেটা ও অ্যাপ্লিকেশন সম্পূর্ণভাবে আলাদাভাবে ব্যবহার করতে পারে।

একাধিক প্রতিষ্ঠান যারা একই প্রয়োজনে থাকে, তারা একত্রে এই ক্লাউড ব্যবহার করে। যেমন: ব্যাংক, হসপিটাল ইত্যাদি।

Related Posts

ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস মডেল

১. IaaS (Infrastructure as a Service)

এই মডেলে ক্লাউড প্রদানকারী কোম্পানি ইউজারদের ভার্চুয়াল সার্ভার, নেটওয়ার্ক ও স্টোরেজ সুবিধা দেয়।

২. PaaS (Platform as a Service)

এই সার্ভিসে ইউজাররা একটি পূর্ণাঙ্গ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম পায়, যেখানে তারা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, পরীক্ষা ও চালু করতে পারে।

৩. SaaS (Software as a Service)

এটি সবচেয়ে পরিচিত ক্লাউড সার্ভিস, যেখানে সফটওয়্যার সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। যেমন: Gmail, Google Docs, Microsoft Office 365।

4.NAAS (Network as a Service)

NAAS হলো এমন একটি ক্লাউড সার্ভিস, যেখানে ব্যবহারকারী ক্লাউডের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সেবা যেমন: ভার্চুয়াল রাউটার, ফায়ারওয়াল, লোড ব্যালেন্সার, VPN ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন — একদম ভাড়ার মতো।

সহজভাবে বললে: আপনার নিজের রাউটার, সুইচ, VPN সেটআপ না করেই, ক্লাউড থেকে সব নেটওয়ার্ক ফিচার ব্যবহার করতে পারা

NAAS কী কী দেয়?

1.VPN (Virtual Private Network)
2.Firewall & Security Services
3.Load Balancing
4.Bandwidth on Demand
5.Network Monitoring & Management
6.Virtual Router/Switch

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা

  • কম খরচ: নিজের হার্ডওয়্যার/সার্ভার না কিনেই রিসোর্স ব্যবহার করা যায়।
  • স্কেলেবিলিটি: প্রয়োজনে রিসোর্স বাড়ানো/কমানো যায়।
  • ডেটা রিকভারি: ডেটা লস হলে ব্যাকআপ থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব।
  • একসেসিবিলিটি: যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়।

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর অসুবিধা

  • ইন্টারনেট নির্ভরতা: সংযোগ না থাকলে সেবা বন্ধ থাকে।
  • নিরাপত্তা: তৃতীয় পক্ষের কাছে ডেটা থাকায় হ্যাকিং ঝুঁকি থাকে।
  • সীমিত কাস্টমাইজেশন: অনেক সময় ক্লাউড সিস্টেম ইউজার অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায় না।

ক্লাউড কম্পিউটিং কোথায় ব্যবহৃত হয়?

  • ব্যবসায়িক সফটওয়্যার: CRM, HRM, এবং ERP সফটওয়্যার ক্লাউডে চলে।
  • স্টোরেজ সেবা: Google Drive, Dropbox, OneDrive ইত্যাদি।
  • শিক্ষা খাতে: অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মে যেমন Google Classroom, Zoom ইত্যাদি।
  • হেলথ কেয়ার: রিমোট পেশেন্ট মনিটরিং ও রেকর্ড সংরক্ষণ।

উপসংহার

ক্লাউড কম্পিউটিং বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সময়, অর্থ এবং পরিশ্রম সাশ্রয় করে। তবে নিরাপত্তা ও ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতাও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।

About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.