চলে গেলেন খলনায়ক সাংকো পাঞ্জা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের পরিচিত মুখ, খল অভিনেতা সাংকো পাঞ্জা আর নেই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। গতকাল, ২৯ মে ২০২৫, আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মাহবুবুল ইসলাম সিদ্দিকী থেকে সাংকো পাঞ্জা
সাংকো পাঞ্জার প্রকৃত নাম ছিল মাহবুবুল ইসলাম সিদ্দিকী। তিনি ১৯৯২ সালে ‘চোখের পানি’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে যাত্রা শুরু করেন। প্রায় সব চলচ্চিত্রেই তাকে সহকারী খলনায়ক হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু কিছু বিশেষ চরিত্রে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলেছেন।
‘আমি জেল থেকে বলছি’ – ভয়ংকর খলনায়কের রূপে
২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মালেক আফসারী পরিচালিত ‘আমি জেল থেকে বলছি’ চলচ্চিত্রে সাংকো পাঞ্জা প্রধান খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও এই ছবিতে তার ডাবিং করেছিলেন অন্য কেউ, তবুও পর্দায় তার উপস্থিতি ছিল চরম ভয়ংকর। মান্না, মৌসুমী, ওমর সানী, মিশা সওদাগরসহ অনেক তারকার মাঝে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পর্দার আতঙ্ক।
একই গল্প, আলাদা সিনেমা: ‘নিষ্পাপ কয়েদী’
পরের বছর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘নিষ্পাপ কয়েদী’, যার গল্প ছিল অনেকটাই একইরকম। তবে সেই সিনেমায় মিশা সওদাগরের পারফরম্যান্স ছিল তুলনামূলকভাবে কম ভয়ানক। উল্লেখ্য, এই দুই সিনেমাই ছিল ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ছবি ‘Ganapathi’–এর অনানুষ্ঠানিক রিমেক।
সাংকো পাঞ্জার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর তালিকা
- চোখের পানি (১৯৯২) – চলচ্চিত্রে অভিষেক, সহকারী খলনায়ক চরিত্রে
- আমি জেল থেকে বলছি (২০০৫) – প্রধান খলনায়ক, মালেক আফসারী পরিচালিত
- নিষ্পাপ কয়েদী (২০০৬) – সহকারী খলনায়ক, শাকিব খান অভিনীত
- রাজাবাবু (২০১৫) – শুটিং চলাকালে আহত হন, পার্শ্ব চরিত্রে
- তোমার জন্য পাগল – রোমান্টিক-অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা, খল চরিত্রে
- ভণ্ড – নায়ক-খলনায়কের দ্বন্দ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
- ভালোবাসা আজকাল – সমকালীন প্রেম-অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা
- আঘাত – পারিবারিক ও প্রতিশোধমূলক গল্পে খলনায়কের চরিত্রে
- কঠিন শাস্তি – আইনি থ্রিলার ঘরানার সিনেমা
- সুলতান – দ্য সেভিয়র – আন্তর্জাতিক প্রযোজনায় অভিনীত সিনেমা
Related Posts
দুর্ঘটনা ও অসুস্থতার পরিণতি
২০১৫ সালে ‘রাজাবাবু’ সিনেমার শুটিং চলাকালে ক্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন সাংকো পাঞ্জা। মাথা ও মুখে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে কাজ করতে পারেননি। তার চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে পরিবারকে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। যদিও তিনি সরকারি সহায়তা হিসেবে ৫ লাখ টাকা পেয়েছিলেন।
শেষ শ্রদ্ধা ও দোয়া
বাংলা সিনেমার একজন শক্তিশালী খলনায়ক হিসেবে সাংকো পাঞ্জার অবদান চলচ্চিত্রপ্রেমীরা চিরকাল মনে রাখবে। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় ভিলেন