
মেঠো ইঁদুর ও শহুরে ইঁদুর
একদিন এক গর্বিত শহুরে ইঁদুর এসে হাজির হলো এক সহজ-সরল মেঠো ইঁদুরের বাড়িতে। মেঠো ইঁদুর তার মাঠের ছোট গর্তে বাস করত, আর যা ছিল তাই দিয়ে সে অতিথিকে আপ্যায়ন করল—মটর আর গমের দানা।
শহুরে ইঁদুর নাক সিঁটকিয়ে সামান্য খেয়ে বলল, “এই খাবার খেয়ে তুমিই তো এমন শুকনো-রোগা! চলো আমার সঙ্গে শহরে, দেখো আমাদের মতো কেমন রাজকীয়ভাবে থাকা যায়।”
তখন মেঠো ইঁদুর শহুরে ইঁদুরের সাথে শহরে গেল। তারা রাতে লুকিয়ে থাকল মেঝের নিচে। যখন মানুষজন খেয়ে চলে গেল, তখন শহুরে ইঁদুর তাকে টেনে নিল এক গর্ত দিয়ে। দুজন মিলে টেবিলের উপর উঠে পড়ল। মেঠো ইঁদুর জীবনে এমন খাবার কখনও দেখেনি—পনির, মাংস, মিষ্টি, কী নয়!
সে চমকে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছিলে। আমাদের জীবনের চেয়ে তোমাদের জীবন কত ভালো! আমিও এখানে থেকে যাব।”
কিন্তু কথাটা শেষ না হতেই দরজা খোলার শব্দ হলো, টেবিল কেঁপে উঠল। এক লোক মোমবাতি হাতে ঘরে ঢুকে পড়ল, ইঁদুর ধরার জন্য। তারা হুড়মুড় করে গর্তে ঢুকে কোনোমতে প্রাণে বাঁচল।
মেঠো ইঁদুর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “না ভাই, এর চেয়ে আমার মাঠের সরল জীবনই ভালো। সেখানকার খাবার হোক সাদামাটা, অন্তত এমন মৃত্যুভয় নিয়ে তো বাঁচতে হয় না।”
Related Posts
সাগর, নদী ও ছোটনদী
একজন লোক খুব বাড়িয়ে বলছিল সে কতটা পানি পান করতে পারে। সে বলল, “আমি পুরো সাগরটাও পান করে ফেলতে পারি!”
আরেকজন অবাক হয়ে বলল, “তুমি নাকি সাগর পান করবে? বাজি ধরি তুমি তা কখনোই পারবে না।”
লোকটি বলল, “পারবই তো! এসো, এক হাজার রুবল বাজি রাখি। আমি সমুদ্রের জল পান করে দেখাব।”
পরদিন সবাই জড়ো হলো সেই লোকের বাড়িতে। তারা বলল, “চলো, সমুদ্র পান করো। নাহলে বাজি হেরেছ, আমাদের এক হাজার রুবল দাও।”
লোকটি হেসে বলল, “আমি বলেছিলাম সমুদ্র পান করব, কিন্তু কখনো বলিনি যে নদী আর ছোটনদীর জলও আমি খাব। আগে নদী আর ছোটনদীর পথ আটকে দাও, যাতে ওগুলো সমুদ্রে না পড়ে। তারপর আমি সমুদ্র পান করব।”
এইভাবে সে চালাকি করে বাজি থেকে বেঁচে গেল।
ঈগল ও শেয়াল
এক ঈগল একদিন এক শেয়ালের ছানা ধরে নিল। ছানার মা শেয়াল কাঁদতে কাঁদতে অনেক মিনতি করল, “আমার বাচ্চাকে দয়া করে ছেড়ে দাও।”
কিন্তু ঈগল অহংকার করে বলল, “তুই কী করতে পারবি? আমার বাসা তো অনেক উঁচুতে পাইন গাছের মাথায়। তোর নাগালের অনেক বাইরে।”
এই বলে ঈগল উড়ে গেল তার বাসায়। কিন্তু শেয়াল হাল ছাড়ল না। সে দৌড়ে গিয়ে লোকদের কাছ থেকে আগুন নিয়ে এল। তারপর সেই আগুন জ্বলন্ত কাঠে ধরে পাইন গাছের গোড়ায় নিয়ে গেল।
দেখে ঈগল ভয় পেয়ে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, আমি তোমার বাচ্চা ফিরিয়ে দিচ্ছি। দয়া করে গাছটা পোড়িও না।”
এইভাবে বুদ্ধিমতী শেয়াল তার সন্তানকে বাঁচিয়ে আনল।
বেড়াল ও শেয়াল
এক বেড়াল ও এক শেয়াল কথা বলছিল কীভাবে শিকারি কুকুরদের হাত থেকে বাঁচা যায়।
বেড়াল বলল, “আমি মোটেই কুকুরদের ভয় পাই না। কারণ আমার এক দারুণ কৌশল জানা আছে।”
শেয়াল গম্ভীর মুখে বলল, “তুমি এক কৌশল জানো? হাস্যকর! আমি সাতাত্তরটি কৌশল জানি কুকুরদের ফাঁকি দেওয়ার।”
এই সময় দূরে শিকারিদের কুকুরের ডাক শোনা গেল। বেড়াল সঙ্গে সঙ্গে তার একমাত্র কৌশল প্রয়োগ করল—সে দৌড়ে গিয়ে গাছে উঠে পড়ল।
আর শেয়াল? সে একে একে তার সব কৌশল প্রয়োগ করতে গিয়ে কিছুতেই কুকুরদের হাত থেকে পালাতে পারল না। শেষমেশ কুকুরেরা তাকে ধরে ফেলল।
বেড়াল উপরে থেকে বলল, “দেখলে ভাই! অনেক কৌশলের চেয়ে একটি সঠিক কৌশলই অনেক ভালো।”
বাঁদর ও শেয়াল
একদিন বনের সব জন্তু মিলে বাঁদরকে তাদের রাজা নির্বাচন করল। বাঁদর আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরতে লাগল।
শেয়াল কাছে এসে মিষ্টি গলায় বলল, “রাজা মশাই, আমি আপনার অনুগত সেবা করতে চাই। আমি বনের মধ্যে এক গুপ্তধনের খবর জানি। চলুন, আমি আপনাকে নিয়ে যাই।”
বাঁদর খুশি হয়ে শেয়ালের পিছু পিছু চলল। শেয়াল তাকে নিয়ে গেল এক ফাঁদের কাছে। তারপর বলল, “এই দেখুন রাজা মশাই, এখানেই লুকানো আছে সেই ধনসম্পদ। আগে আপনিই নিন।”
বাঁদর লোভে পড়ে হাত বাড়াতেই তার থাবা ফাঁদে আটকে গেল। শেয়াল হো হো করে হেসে ছুটে গিয়ে অন্য জন্তুদের ডাকল।
সে বলল, “দেখো তোমরা! কেমন রাজা নির্বাচন করেছ! যে কিনা সামান্য লোভের ফাঁদেই ধরা পড়ে।”
এইভাবে জন্তুরা বুঝল, বুদ্ধিহীন শাসক হলে তার সর্বনাশ অবধারিত।