নতুন সিনেমায় শাকিব খান বাস্তব গ্যাংস্টার কালা জাহাঙ্গীরের গল্পে | Shakib Khan New Movie

শাকিব খান অভিনয় করছেন বাস্তব গ্যাংস্টার কালা জাহাঙ্গীরের চরিত্রে আবু হায়াত মাহমুদের প্রথম সিনেমা 'ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা' তে। বিপরীতে মধুমিতা সরকার

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের মেগাস্টার শাকিব খান এবার ভিন্ন এক চরিত্রে আসছেন। তিনি প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় বাস্তব জীবনের কুখ্যাত গ্যাংস্টার ‘কালা জাহাঙ্গীর’-এর চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। সিনেমাটির নাম ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ এই সিনেমা পরিচালনা করছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ, যিনি এই সিনেমার মধ্য দিয়েই বড়পর্দায় তার পরিচালনার আত্মপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছেন।

এই সিনেমার গল্প মূলত ঢাকার নব্বই দশকের অপরাধজগতের বাস্তব কিছু ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে ভয়ংকর সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর এবং তার জীবনের নানা ওঠা-পড়া, অপরাধ, প্রেম, পরিবারের টানাপোড়েন উঠে আসবে। ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সিনেমাটি মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে শাকিব খানের সঙ্গে পারিশ্রমিকসহ নানা দিক চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর বাকি। একই সঙ্গে সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে কলকাতার জনপ্রিয় নায়িকা মধুমিতা সরকারকে নেয়া হয়েছে, যিনি তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবেন। এছাড়া সিনেমায় দেখা যাবে দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা তারিক আনাম খান, দিলারা জামান ও শহীদুজ্জামান সেলিমকেও।

পরিচালনা: আবু হায়াত মাহমুদের প্রথম সিনেমা

আবু হায়াত মাহমুদ নামটি দেশের টিভি নাটকের দুনিয়ায় বেশ পরিচিত। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও ওয়েব সিরিজের নির্মাতা হিসেবে তিনি নিজের জায়গা শক্ত করেছেন। এবার তিনি প্রথমবারের মতো বড়পর্দার জন্য পরিচালনার দায়িত্ব নিচ্ছেন। তার এই প্রথম সিনেমাই হতে যাচ্ছে বহু আলোচিত। কারণ, গল্পটি যেমন বাস্তব, তেমনই এতে থাকছে একঝাঁক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী।

এক সূত্রে জানা গেছে, সিনেমাটির কাহিনি, চিত্রনাট্য, ডায়লগসহ সবকিছু নিয়েই পরিচালক বেশ সময় ধরে কাজ করছেন। কারণ তিনি চান, দর্শক যেন সত্যিই নব্বই দশকের ঢাকায় ফিরে যান, সেই কুখ্যাত অপরাধের দিনগুলো চোখের সামনে দেখতে পান। এজন্য সিনেমার লুক, সেট ডিজাইন, কস্টিউম, এমনকি গাড়ি ও লোকেশন বাছাইয়েও তিনি দারুণ যত্ন নিচ্ছেন।

পরিচালকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আবু হায়াত মাহমুদ শাকিব খানকে এই চরিত্রে পেতে প্রথম থেকেই আগ্রহী ছিলেন। এমনকি গল্প শোনার পর শাকিব খান নিজেও এতে বেশ আগ্রহ দেখান। এ কারণে প্রাথমিক কথাবার্তা, শিডিউল, পারিশ্রমিকসহ অধিকাংশ বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

গ্যাংস্টার কালা জাহাঙ্গীর চরিত্রে শাকিব খান

শাকিব খান তার ক্যারিয়ারে বহু ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এমন বাস্তবভিত্তিক গ্যাংস্টারের চরিত্রে এবারই প্রথম। তিনি সিনেমায় যে কালা জাহাঙ্গীর-এর ভূমিকায় অভিনয় করবেন, সেই চরিত্রটি ঢাকার নব্বই দশকের বাস্তব এক ভয়ঙ্কর অপরাধীর জীবন থেকে নেয়া। এই চরিত্রে শাকিবকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে দর্শকের সামনে দেখা যাবে।

চরিত্রের জন্য শাকিব খান নাকি তার লুক ও শারীরিক ভাষাতেও আনছেন বিশেষ পরিবর্তন। সিনেমার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি কিছু বিশেষ ধরনের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের চরিত্রে তাকে আগে কখনো দেখা যায়নি, তাই ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনাও তুঙ্গে।

কালা জাহাঙ্গীর কে ছিলেন?

কালা জাহাঙ্গীর নব্বই দশকে ঢাকার কুখ্যাত এক নাম। তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ অসংখ্য অভিযোগ ছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রের পুরনো রিপোর্ট ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ঢাকার অপরাধ জগতে এক আতঙ্কের নাম ছিলেন। তার চরিত্রে সিনেমাটির গল্পে থাকবে শক্তিশালী মানবিক দিকও। কারণ, যতোই ভয়ঙ্কর হোক, তারও একটি পরিবার, স্ত্রী-সন্তান ছিল। এই জটিল দিকগুলোই সিনেমায় দেখানো হবে।

চরিত্রের জন্য শাকিবের প্রস্তুতি

সূত্র বলছে, এই চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে শাকিব খান নিজেও বেশ সিরিয়াস। কালা জাহাঙ্গীরের জীবন নিয়ে তিনি নানা খবর পড়ছেন, প্রোডাকশন টিমের কাছ থেকে তথ্য নিচ্ছেন, এমনকি কিছু ভিডিও ফুটেজও দেখছেন। সিনেমার জন্য তার ওজনও কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কারণ বাস্তবের কালা জাহাঙ্গীর ছিলেন শারীরিকভাবে বেশ হেভি ও শক্তপোক্ত। তাছাড়া চরিত্রের গলায় ভর, চোখের দৃষ্টি, হাঁটার স্টাইল—সবকিছুতেই ভিন্নতা আনতে চান শাকিব।

মধুমিতা সরকার: শাকিবের স্ত্রীর চরিত্রে কলকাতার জনপ্রিয় নায়িকা

এই সিনেমার আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। বাংলাদেশে তার আলাদা ফ্যান বেস রয়েছে, বিশেষ করে তার টিভি সিরিয়াল ও ওয়েব সিরিজের কারণে। এবার প্রথমবারের মতো তিনি শাকিব খানের বিপরীতে বাংলাদেশের কোনো সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন। সিনেমায় তিনি কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করবেন।

প্রথমবার শাকিব-মধুমিতা জুটি

শাকিব খান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার, আর মধুমিতা কলকাতার হিট নায়িকা। এই প্রথমবার এই দুইজন একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করবেন। ফলে দর্শকদের প্রত্যাশা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে, মধুমিতার চরিত্রটি খুবই আবেগপ্রবণ। তিনি কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী হয়ে তার জীবনের ভালো-খারাপ সবকিছুর অংশ হবেন। তার মধ্য দিয়েই সিনেমায় কালা জাহাঙ্গীরের মানবিক দিকগুলোও ফুটে উঠবে।

মধুমিতা নিজেও সিনেমার গল্প শুনে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তার শিডিউলও চূড়ান্ত। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষর বাকি। তার লুক নিয়েও প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে, সিনেমায় তাকে খুবই সাদামাটা, ঘরোয়া বউ হিসেবে দেখা যাবে, যা তার আগের গ্ল্যামারাস ইমেজ থেকে একেবারেই ভিন্ন।

তারকাবহুল এই প্রজেক্টে আরও কে কে?

এই সিনেমার আরেক বড় শক্তি হচ্ছে এর শক্তিশালী কাস্টিং। এখানে বাংলাদেশের মঞ্চ, টিভি এবং সিনেমার তিনজন কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী রয়েছেন—তারিক আনাম খান, দিলারা জামান ও শহীদুজ্জামান সেলিম। তারা প্রত্যেকেই সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকছেন।

তারিক আনাম, দিলারা জামান ও শহীদুজ্জামান সেলিম

শোনা যাচ্ছে, তারিক আনাম খান কালা জাহাঙ্গীরের বিরোধী গ্যাংয়ের একজন প্রভাবশালী নেতার চরিত্রে অভিনয় করবেন। তার সঙ্গে শাকিবের মুখোমুখি সংঘর্ষ থাকবে, যা সিনেমার অন্যতম হাইলাইট হবে। দিলারা জামান কালা জাহাঙ্গীরের মা, আর শহীদুজ্জামান সেলিম এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের চরিত্রে থাকবেন।

এই ধরনের শক্তিশালী তারকাদের এক ছবিতে পাওয়া নিঃসন্দেহে সিনেমার কনটেন্টকে সমৃদ্ধ করবে। দর্শকরাও আশা করছেন, তাদের অভিনয়ে গল্প আরও বাস্তব ও হৃদয়ছোঁয়া হয়ে উঠবে।

সত্য ঘটনা থেকে সিনেমার প্লট

এই সিনেমার কাহিনির মূল ভিত্তি হচ্ছে বাস্তব ঘটনা। নব্বই দশকের ঢাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর এর জীবন, তার অপরাধ জগৎ, তার পরিবার ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব—সবকিছুই সিনেমার গল্পের মূল উপজীব্য। পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ এমন একটি গল্প বেছে নিয়েছেন যা দর্শককে রোমাঞ্চিত করবে, আবার বাস্তব জীবনের করুণতাও অনুভব করাবে।

বাংলাদেশে গ্যাংস্টার ভিত্তিক সিনেমা খুব বেশি হয়নি। ফলে এই ধরনের গল্পের জন্য দর্শকের আগ্রহ বরাবরই আলাদা। কারণ এখানে থাকে ভয়, থ্রিল, এবং একই সঙ্গে মানুষের ভেতরের অদ্ভুত দ্বন্দ্ব। কালা জাহাঙ্গীর যেমন একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, তেমনি পরিবারের কাছে তিনি আদর্শ এক ছেলে বা স্বামী। এই দ্বিমুখী জীবনই সিনেমার চিত্রনাট্যের প্রধান জোর।

সিনেমায় দেখানো হবে কিভাবে এক নিরীহ ছেলেকে নানা আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সুবিধাবাদ আর সমাজের চাপ তাকে অপরাধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়াও দেখানো হবে তার প্রেম, বিয়ে, স্ত্রী ও সন্তানকে ঘিরে তার মানবিক অনুভূতিগুলো, যেগুলো হয়তো সাধারণ মানুষ থেকে তাকে খুব একটা আলাদা করে না।

প্রডাকশন সূত্রে জানা গেছে, এই সিনেমার জন্য বহু রিসার্চ করা হয়েছে। কালা জাহাঙ্গীরের জীবনের নানাদিক, তার অপরাধের ইতিহাস, তার এলাকায় তার ভয় আর প্রভাব—সবকিছুই তুলে ধরা হবে যেন সেটা ফিকশন না মনে হয়ে সত্যিই ঢাকার ইতিহাসের অংশ মনে হয়।

নব্বই দশকের ঢাকার অপরাধ জগৎ

ঢাকার নব্বই দশক মানেই রাজনৈতিক উত্তেজনা, মিছিল-মিটিং, হরতাল, আর সেই সঙ্গে গ্যাং ও চাঁদাবাজির রাজত্ব। তখন ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতো স্থানীয় মাস্তানরা। তাদের হাত ধরে অপরাধও ছড়িয়ে যেত। সেই সময়ের একটি ভয়ঙ্কর নাম ছিল কালা জাহাঙ্গীর। তার দলবল, অস্ত্র, আর ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, এমনকি হত্যা পর্যন্ত।

সিনেমার গল্পে এই সময়টাকেই অতি নিখুঁতভাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা পরিচালকের। সিনেমার সেট ডিজাইন থেকে শুরু করে লোকেশন, গাড়ি, দোকানের সাইনবোর্ড—সবকিছুই নব্বই দশকের ঢাকার মতো করে বানানো হবে। যেন দর্শক আসলেই সময় মেশিনে করে ফিরে যান সেই পুরনো ঢাকায়।

এছাড়া সিনেমায় থাকবে রাজনীতি, পুলিশ-প্রশাসনের ভিন্ন চরিত্র, তাদের সঙ্গে গ্যাংয়ের লুকোচুরি খেলা। কালা জাহাঙ্গীর কিভাবে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল সেটাও সিনেমায় উঠে আসবে।

এই বিষয়গুলো এমনিতেই দর্শককে কৌতূহলী করবে। কারণ আমরা যখনই পুরনো ঢাকার গল্প শুনি, সেখানে লুকানো থাকে রহস্য, ভয় আর রাজনীতির দড়ি টানাটানি। ঠিক এই জায়গাগুলোকে কেন্দ্র করেই সিনেমার থ্রিল তৈরি করা হচ্ছে।

২০২৬ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তির পরিকল্পনা

বাংলাদেশের সিনেমার বড় সিজন মানেই ঈদ। প্রযোজক-পরিচালকরা চেষ্টা করেন ঈদকে টার্গেট করে সিনেমা মুক্তি দিতে। কারণ ঈদে পরিবার, বন্ধুবান্ধব মিলে সিনেমা হলে যাওয়ার আলাদা একটা আনন্দ আছে। এই সিনেমাটির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।

প্রযোজনা সংস্থা সিনেমাটি ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতর-কে সামনে রেখে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেই হিসেবেই সব কাজ চলছে। শাকিব খান ও মধুমিতা সরকারের শিডিউল নেয়া হয়েছে এমনভাবে যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শুটিং সম্পন্ন করা যায়।

সাধারণত ঈদের ২-৩ মাস আগেই সিনেমার প্রচারণা শুরু হয়। তখন পোস্টার, ট্রেলার, গানের ভিডিও—সবকিছু একের পর এক আসতে শুরু করে। এই সিনেমার ক্ষেত্রেও সেই প্ল্যানই করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, প্রযোজনা সংস্থা এই সিনেমার জন্য আলাদা মার্কেটিং টিম নিয়োগ করবে, যাতে প্রোমোশনাল স্ট্র্যাটেজি পুরোপুরি সাজানো যায়।

তবে ঈদে মুক্তি মানে প্রতিযোগিতাও। কারণ তখন একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বড় সিনেমা মুক্তি পায়। সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই নির্মাতা এবং প্রযোজকরা কাজ করছেন। তবে শাকিব খানের সিনেমা ঈদে মানেই আলাদা উত্তেজনা। তার জন্যই অনেক দর্শক পরিবারসহ হলে ছুটে যান। তার ওপর এবার গল্প বাস্তব, চরিত্র অন্যরকম—ফলে প্রযোজক-পরিচালকের আশা, এই সিনেমা ঈদে দারুণ ব্যবসা করবে।

সিনেমার শুটিং শুরু কবে?

প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে, সিনেমার শুটিং শুরু হবে আগামী অক্টোবর ২০২৫ থেকে। ইতিমধ্যেই সিনেমার লোকেশন রেকি শুরু হয়েছে। পরিচালক ও আর্ট ডিরেক্টর ঢাকার বিভিন্ন পুরনো এলাকা ঘুরে দেখছেন, যেখানে নব্বই দশকের সেই রুক্ষতা এখনো কিছুটা বেঁচে আছে।

প্রযোজক-পরিচালক চাইছেন যতটা সম্ভব ঢাকাতেই শুটিং করতে। তাতে করে সিনেমার বাস্তব আবহ তৈরি করা যাবে। তবে সিনেমার কিছু অ্যাকশন দৃশ্য বাইরে (সম্ভবত নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর) বা কোনো মফস্বল শহরেও শুটিং হতে পারে। কারণ সেখানকার কিছু পুরনো রাস্তা-ঘাটে এখনো নব্বই দশকের ঢাকার মতো লুক পাওয়া যায়।

শুটিং শুরুর আগে শাকিব খান এবং মধুমিতা সরকার তাদের চরিত্রের জন্য বিশেষ রিহার্সালও করবেন। শোনা যাচ্ছে, শাকিব খানের জন্য আলাদা ফাইট ওয়ার্কশপও আয়োজন করা হবে। এছাড়া সিনেমার জন্য ভিন্ন ধরনের কস্টিউম, যেমন সাদা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, চোখে কালো চশমা—এগুলো শাকিবের চরিত্রে যোগ করবে বাড়তি রঙ।

সিনেমার গান ও মিউজিক পরিচালক

বাংলাদেশি সিনেমায় গান মানেই বাড়তি আকর্ষণ। এই সিনেমায়ও থাকবে কয়েকটি গান, তবে তা সম্পূর্ণ গল্পের প্রয়োজনে। সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন দেশসেরা একজন মিউজিক ডিরেক্টর (যার নাম শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হবে)।

শোনা যাচ্ছে, সিনেমার জন্য অন্তত তিনটি গান করা হবে। এর মধ্যে একটি থাকবে শাকিব-মধুমিতার রোম্যান্টিক গান। সেই গানের লোকেশন দেশের বাইরে শুট করার পরিকল্পনা রয়েছে। হয়তো থাইল্যান্ড বা শ্রীলঙ্কায় হবে সেই অংশের শুটিং। কারণ গল্পের প্রয়োজনেই কালা জাহাঙ্গীর কোনো একসময় পরিবার নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান। সেই জায়গায় রোমান্টিক গানটি ফিল্ম করা হবে।

বাকি দুটি গান থাকবে ঢাকার লোকাল সেটআপে। এর মধ্যে একটি সম্ভবত সিনেমার শুরুতে থাকবে, যেখানে নব্বই দশকের ঢাকার কোলাহল, রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং, চায়ের দোকান—সবকিছুই ফুটে উঠবে। আর একটি থাকবে সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের কাছাকাছি, যা হবে বেশ আবেগময়।

মিউজিক ডিরেক্টর সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরেও বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ গ্যাংস্টার সিনেমার থ্রিল পুরোপুরি দাঁড়ায় সাসপেন্সফুল মিউজিকের ওপর। এজন্য সিনেমার থিম টিউন, কালা জাহাঙ্গীরের এন্ট্রি মিউজিক—সবকিছুর জন্য আলাদা টিম কাজ করছে।

সিনেমার বাজেট ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান

এই সিনেমা প্রযোজনা করছে দেশের অন্যতম বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, যারা এর আগেও শাকিব খানের কয়েকটি হিট সিনেমা করেছে। তাদের লক্ষ্য এবার সম্পূর্ণ আলাদা কনসেপ্টে একটি “রিয়েলিস্টিক গ্যাংস্টার ফিল্ম” বানানো। এজন্যই তারা বাজেটের দিকেও বেশ খোলামেলা।

একটি প্রযোজনা সূত্র জানিয়েছে, সিনেমাটির আনুমানিক বাজেট দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এই বাজেটে সবচেয়ে বড় অংশ যাচ্ছে শাকিব খানের পারিশ্রমিক, মধুমিতা সরকারের চুক্তি, সেট ডিজাইন, লোকেশন ও বিশেষ অ্যাকশন কোরিওগ্রাফির পিছনে। এছাড়া সিনেমার মিউজিক, বিদেশের অংশের শুটিং, প্রচারণার জন্যও আলাদা বাজেট রাখা হচ্ছে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা চান দর্শক যেন সিনেমা দেখে বলতেই না পারে এটা বাংলাদেশের সিনেমা নয়। তার জন্য প্রয়োজন প্রডাকশন ভ্যালু, নিখুঁত আর্ট ডিরেকশন, এবং গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের ক্যামেরা-টেকনিক। এজন্য সিনেমার কিছু অংশের শুটিং করা হবে উচ্চমানের ক্যমেরায় (যেমন RED বা ARRI Alexa)। এছাড়া কালার গ্রেডিং থেকে শুরু করে পোস্ট প্রোডাকশনও বিদেশের কোনো স্টুডিওতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সবমিলিয়ে এটাই হতে যাচ্ছে ২০২৬ সালের ঈদে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমাগুলোর একটি। ফলে দর্শকের প্রত্যাশাও তুঙ্গে।

ভক্তদের প্রতিক্রিয়া কেমন?

সিনেমার খবর প্রকাশ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শাকিব খান এবং মধুমিতা সরকার ভক্তদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামে তাদের ভক্ত পেজগুলোতে একের পর এক পোস্ট আসছে। বিশেষ করে যখন জানা গেল শাকিব খান এবার বাস্তব গ্যাংস্টার কালা জাহাঙ্গীর চরিত্রে, তখনই সবাই লেখা শুরু করল — “অবশেষে শাকিব ভাই অন্যরকম চরিত্রে”

মধুমিতা সরকারের ফ্যানবেস বাংলাদেশেও বেশ বড়। তারা বলছেন, “শাকিব-মধুমিতা জুটি দেখতে দারুণ লাগবে, আর গল্প যদি সত্যিই এমন হয়, তাহলে তো সেরা।” অনেকে লিখছে, “দয়া করে গল্প যেন খারাপ না হয়, কেবল গ্ল্যামার দেখিয়ে নষ্ট কইরেন না।” ভক্তরা চান গল্পে যেন বাস্তবতা বজায় থাকে, কারণ কালা জাহাঙ্গীরের গল্প তারা বহুদিন থেকে শুনে আসছেন।

ইতিমধ্যেই সিনেমার আনঅফিশিয়াল ফ্যানপোস্টারও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে শাকিবকে সাদা পাঞ্জাবি, কালো চশমা আর হাতে দেশীয় পাইপগান নিয়ে দেখানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে শুরু থেকেই সিনেমাটি নিয়ে কেবল ইন্ডাস্ট্রিতেই নয়, দর্শক পর্যায়েও তীব্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

শাকিব-মধুমিতার নতুন কেমিস্ট্রি নিয়ে প্রত্যাশা

শাকিব খান বাংলাদেশের সুপারস্টার, আর মধুমিতা সরকার কলকাতার হাই ডিমান্ডেড অভিনেত্রী। এই দুই তারকা একসঙ্গে পর্দায় মানেই দর্শকের জন্য নতুন কেমিস্ট্রি। এর আগে শাকিব খান বহু নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন, কিন্তু মধুমিতার সঙ্গে তার এই প্রথম।

মধুমিতা সাধারণত শহুরে, স্টাইলিশ চরিত্রে বেশি দেখা গেছে। কিন্তু এই সিনেমায় সে একেবারে সাদামাটা মধ্যবিত্ত গৃহবধূ। তাকে শাড়ি, ঘোমটা টানা বউ হিসেবে দেখানো হবে। এভাবে নতুন অবতারে মধুমিতা দর্শকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হন, সেটাই দেখার বিষয়। শাকিব-মধুমিতার কেমিস্ট্রি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই নিয়েও ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

তবে পরিচালক ও প্রযোজক মনে করছেন, সিনেমার গল্পে এই সম্পর্কটি খুবই আবেগপ্রবণ। কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর দৃষ্টিকোণ থেকে তার জীবনটাও একটা আলাদা কষ্টের গল্প। শাকিব খানও নাকি বলছেন, তার ক্যারিয়ারে এত মানবিক এবং একই সঙ্গে ভয়ঙ্কর চরিত্র এর আগে তিনি পাননি। ফলে ভক্তদের জন্য এটা হতে পারে একদম ভিন্ন স্বাদের সিনেমা।

বাংলাদেশি সিনেমায় গ্যাংস্টার গল্পের আকর্ষণ

বাংলাদেশে গ্যাংস্টার বা মাফিয়া বেসড সিনেমা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা যেমন ‘রংবাজ’, ‘মাস্তান’, ‘লিডার’ — তবে সেগুলোও অনেকটাই ফিকশনাল, বাস্তব ঘটনা অবলম্বিত নয়। এই সিনেমা সেই দিক থেকে আলাদা, কারণ এটি একটি বাস্তব গ্যাংস্টারের জীবনের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত।

প্রশ্ন হচ্ছে, দর্শক কেন এমন গল্প দেখতে পছন্দ করে? কারণ গ্যাংস্টার গল্পে থাকে জীবনের নোংরা দিক, ভয়, চক্রান্ত, আবার থাকে প্রেম, পরিবার, বিশ্বাসঘাতকতা। এগুলো সবসময় দর্শকের মধ্যে আলাদা উত্তেজনা তৈরি করে। ঠিক যেমন আমরা হিন্দি সিনেমায় ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’, ‘ডন’ বা ‘সত্যা’ দেখেছি।

এই সিনেমাতেও এমন সব উপাদান থাকবে। কালা জাহাঙ্গীরকে যেমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো হবে, তেমনি তার মায়ের কাছে সে এক আদর্শ সন্তান, স্ত্রীর কাছে প্রেমিক স্বামী। এই কনট্রাস্টই সিনেমাকে আলাদা মাত্রা দেবে।

বাংলাদেশি সিনেমার জন্য এটা হতে পারে এক নতুন মাইলফলক। কারণ বাস্তব গল্প থেকে নেওয়া সিনেমা সবসময়ই দর্শককে বেশি টানতে পারে, যদি সেটি ঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়।

উপসংহার: আসছে এক ভিন্নধর্মী শাকিব খান

সবমিলিয়ে বলা যায়, ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমাটি হতে যাচ্ছে শাকিব খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম ব্যতিক্রমী কাজ। এখানে তিনি কেবল নায়ক নন, একজন বাস্তব গ্যাংস্টারের চরিত্রে, যার আছে প্রেম, পরিবার, ভয় আর রাজনীতির কুটচাল।

পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদের প্রথম সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও তার পরিকল্পনা শুনে বোঝাই যাচ্ছে, তিনি এই সিনেমাটিকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি রাখতে চান না। শক্তিশালী তারকা কাস্ট, বড় বাজেট, বাস্তব কাহিনি আর ঈদ রিলিজ — সবমিলিয়ে এটি হতে পারে ২০২৬ সালের সবচেয়ে আলোচিত ছবি।

এখন শুধু অপেক্ষা, কবে শুটিং শুরু হবে এবং ধীরে ধীরে পোস্টার, টিজার, গানগুলো আমাদের সামনে আসবে। তখনই বোঝা যাবে, শাকিব খান সত্যিই নিজের গণ্ডি ভেঙে আরেকটি ল্যান্ডমার্ক চরিত্র তৈরি করতে পারলেন কিনা।

About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.