নতুন পাসপোর্ট করার নির্দেশিকা (২০২৬)
বাংলাদেশে নতুন ই-পাসপোর্ট (e-Passport) বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) করার জন্য কিছু ধাপ ও প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে। নিচে পুরো প্রক্রিয়া, কাগজপত্র, ফি এবং সময়সীমা দেওয়া হলো।
ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়মাবল:
- ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে।
- ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না।
- ই-পাসপোর্ট ফরমে কোন ছবি সংযোজন এবং তা সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) অনুযায়ী আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে।
- অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী যার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নাই, তার পিতা অথবা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
-
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) নিম্নোক্ত বয়স অনুসারে দাখিল করতে হবে:
- (ক) ১৮ বছরের নিম্নে হলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version)।
- (খ) ১৮-২০ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version)।
- (গ) ২০ বছরের উর্ধে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আবশ্যক। তবে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হতে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) গ্রহণযোগ্য হবে।
- তারকা চিহ্নিত ক্রমিক নম্বরগুলো অবশ্যই পূরণীয়।
- দত্তক/অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত আদেশ দাখিল করতে হবে।
- আবেদন বর্তমান ঠিকানা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে দাখিল করতে হবে।
- ১৮ বছরের নিম্নের সকল আবেদনে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং ৪৮ পৃষ্ঠার।
- প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল সনদসমূহ (যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার ইত্যাদি) আপলোড/সংযোজন করতে হবে।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক জিও (GO)/এনওসি (NOC)/প্রত্যয়নপত্র/অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL Order)/পেনশন বই আপলোড/সংযোজন করতে হবে যা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আপলোড থাকতে হবে।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ/নিকাহনামা এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
- দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি-এর উপর নির্ধারিত হারে ভ্যাট (VAT) সহ অন্যান্য চার্জ (যদি থাকে) অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হবে। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি প্রদেয় হবে।
- কূটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার উইং অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
- বৈদেশিক মিশন হতে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানার কলামে বাংলাদেশের যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
- অতি জরুরী পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ পূর্বক আবশ্যিকভাবে আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে।
-
(ক) দেশের অভ্যন্তরে অতি জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
(খ) দেশের অভ্যন্তরে জরুরী পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
(গ) দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল করা হলে অন্যান্য সকল তথ্য সঠিক থাকা সাপেক্ষে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। - আবেদনের সময় মূল জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO)/অনাপত্তি (NOC) প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে।
- পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে মূল পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।
- হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি প্রদর্শন/দাখিল করতে হবে। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অথবা চুরি হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সময় পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি এবং জিডি কপিসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
- ০৬ বছর বয়সের নিম্নের আবেদনের ক্ষেত্রে ৩ আর (3R Size) সাইজের (ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড) ছবি দাখিল করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
পাসপোর্ট ফি (২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী)
নিচের টেবিলে বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টের কিছু সাধারণ ফি দেওয়া হয়েছে (পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও সেবার ধরন অনুযায়ী ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে)।
| পাসপোর্ট ধরন | মেয়াদ | পৃষ্ঠা সংখ্যা | রেগুলার সেবা | এক্সপ্রেস / দ্রুত সেবা | সুপার এক্সপ্রেস সেবা |
|---|---|---|---|---|---|
| ই-পাসপোর্ট | ৫ বছর | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৳ ৪,০২৫ | ৳ ৬,৩২৫ | ৳ ৮,৬২৫ |
| ই-পাসপোর্ট | ১০ বছর | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৳ ৫,৭৫০ | ৳ ৮,০৫০ | ৳ ১০,৩৫০ |
| ই-পাসপোর্ট | ৫ বছর | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৳ ৬,৩২৫ | ৳ ৮,৬২৫ | ৳ ১২,০৭৫ |
| ই-পাসপোর্ট | ১০ বছর | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৳ ৮,০৫০ | ৳ ১০,৩৫০ | ৳ (১৩,৮০০-রেকর্ড অনুযায়ী) |
দ্রষ্টব্য: উপরে দেওয়া ফিগারগুলো প্রায় কেবল ধারণার জন্য এবং সার্ভিস বেসিসে কিছু পরিবর্তন থাকতে পারে।
পাসপোর্ট প্রাপ্তির সময়কাল
সাধারণভাবে নিম্নলিখিত সময়সীমা প্রযোজ্য হয় — তবে এটি পুলিশ যাচাই, তথ্য মিলানো, অফিসের ব্যস্ততা ইত্যাদি কারণে পরিবর্তন হতে পারে।
- আমদানি অফিস বা সাধারণ সেবা (রেগুলার): প্রায় ৪–৬ সপ্তাহ যদি কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন না হয়।
- দ্রুত সেবা (এক্সপ্রেস/উরজেন্ট): অনেক ক্ষেত্রে ৭–২১ কার্যদিবস মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব। :
- সুপার এক্সপ্রেস সেবা: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ২–৩ কার্যদিবস হতে পারে। :
নিচে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ দেওয়া হলো — প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বিভাগের তথ্য নিচে খুঁজে নিতে পারেন:
| বিভাগ | অফিস নাম | ঠিকানা | মোবাইল নম্বর |
|---|---|---|---|
| ঢাকা | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকা | ই‑৭, আগারগাঁও, শেরে‑ই‑বাংলা নগর, ঢাকা‑1207। | 01733‑393323 |
| চট্টগ্রাম | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, চট্টগ্রাম | মনসুরাবাদ, চট্টগ্রাম। | 01733‑393350 |
| সিলেট | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট | আলমপুর, সিলেট। | 01733‑393361 |
| রাজশাহী | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রাজশাহী | নওগাঁ হাইওয়ে, ২৬ শালবাগান, রাজশাহী। | 01733‑393380 |
| রংপুর | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রংপুর | কলেজ রোড, রংপুর। | 01733‑393389 |
| খুলনা বিভাগ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, খুলনা | নূরনগর, ছোট বয়রা, সোনাডাঙ্গা, খুলনা। | 01733‑393364 |
| বরিশাল বিভাগ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, বরিশাল | কাশিপুর এলাকা, বরিশাল‑ঢাকা হাইওয়ে সংলগ্ন। | 01733‑393374 |
| ময়মনসিংহ বিভাগ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ময়মনসিংহ | মাসকান্দা, বিসিক এলাকা, ময়মনসিংহ। | 01733‑393334 |
E-passport ও MRP Passport এর তুলনামূলক পার্থক্য
| বিষয় | E-passport (ই-পাসপোর্ট) | MRP Passport (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) |
|---|---|---|
| প্রযুক্তি | এতে একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোচিপ থাকে, যেখানে তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকে। | কোনো চিপ নেই, শুধু স্ক্যানযোগ্য প্রিন্টেড তথ্য থাকে। |
| নিরাপত্তা | অত্যন্ত নিরাপদ, জাল করা প্রায় অসম্ভব। | তুলনামূলকভাবে কম নিরাপদ। |
| ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া | ই-গেট দিয়ে দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্ভব। | ম্যানুয়াল স্ক্যান করতে হয়, সময় বেশি লাগে। |
| তথ্য সংরক্ষণ | তথ্য থাকে চিপে এনক্রিপ্টেড আকারে। | তথ্য থাকে পাসপোর্টের প্রিন্টে। |
| দেখতে কেমন | প্রচ্ছদে চিপের প্রতীক (🔘) থাকে। | প্রচ্ছদে কোনো প্রতীক থাকে না। |
| মেয়াদ | ৫ বছর বা ১০ বছর—নিজের পছন্দ অনুযায়ী। | সাধারণত ৫ বছর। |
| ফি | কিছুটা বেশি (প্রযুক্তি খরচের কারণে)। | তুলনামূলকভাবে কম। |
| আন্তর্জাতিক মান | ICAO অনুমোদিত সর্বাধুনিক পাসপোর্ট। | পুরনো প্রযুক্তি, অনেক দেশে ধীরে ধীরে বন্ধ হচ্ছে। |
| সুবিধা | দ্রুত প্রক্রিয়া, উন্নত নিরাপত্তা, ইলেকট্রনিক যাচাই। | সাধারণ প্রক্রিয়া, ম্যানুয়াল যাচাই প্রয়োজন। |
| তথ্য পরিবর্তন বা নকল | প্রায় অসম্ভব। | তুলনামূলকভাবে সহজ। |
সারাংশ:
নতুন পাসপোর্ট পেতে হলে — প্রথমে অনলাইন আবেদন, তারপর নির্ধারিত ফি জমা, বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান, এবং শেষভাবে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। ফি, পৃষ্ঠার সংখ্যা ও মেয়াদ অনুযায়ী খরচ ভিন্ন হতে পারে। সময়সীমা সাধারণভাবে ৪–৬ সপ্তাহ থেকে দ্রুত সার্ভিস হলে ৭–২১ কার্যদিবসের মধ্যে হতে পারে, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী বেশি সময়ও লাগতে পারে।