Digital Addiction in Children | শিশুদের স্ক্রিন আসক্তির কারণ ও চিকিৎসা

শিশুর Screen Time Addiction কীভাবে তৈরি হয়, এর Psychological Causes, Common Symptoms এবং কার্যকর Solutions সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। Parents-এর জন্য
Screen

বর্তমান ডিজিটাল যুগ ও শিশুদের স্ক্রিন টাইম সংকট

স্মার্টফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপ আজকের পৃথিবীতে অপরিহার্য হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এগুলো ক্রমেই আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপ হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

শিশুর ডিভাইস আসক্তির মনস্তাত্ত্বিক ও পরিবেশগত কারণ

ডোপামিন নির্ভরতা

দ্রুত পরিবর্তনশীল ভিডিও, গেম বা রিল দেখলে শিশুদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। এই তীব্র আনন্দ তাদের বাস্তব জীবনের ধীরগতির কাজকে বিরক্তিকর মনে করায় এবং স্ক্রিনের ওপর নির্ভরতা বাড়ায়।

অভিভাবকের নির্লিপ্ততা

অনেক অভিভাবক সুবিধার জন্য শিশুকে ডিভাইস দিয়ে সাময়িকভাবে শান্ত রাখেন। এতে শিশুর মনে গেঁথে যায়—অস্বস্তি বা একঘেয়েমি কাটানোর সহজ উপায় হলো স্ক্রিন।

পরিবেশের প্রভাব

পরিবারের বড়দের অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহার দেখে শিশুরা একই আচরণ অনুকরণ করে। ঘরে ডিভাইস সর্বত্র উপস্থিত থাকলে আসক্তির ঝুঁকি আরও বাড়ে।

সহজলভ্যতা

বাড়িতে একাধিক ডিভাইস থাকা, পাসওয়ার্ড জানা বা অনুমান করতে পারা—সব মিলিয়ে শিশুর জন্য অবাধ অ্যাক্সেস তৈরি হয় এবং আসক্তি দ্রুত বাড়ে।

কনটেন্টের ডিজাইন

রঙিন, দ্রুত পরিবর্তনশীল, উচ্চশব্দযুক্ত কনটেন্ট শিশুকে দীর্ঘসময় ধরে রাখে এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দুর্বল করে। ফলে ডিভাইস থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

গোপনে স্ক্রিন ব্যবহার—গুরুতর সংকেত

শিশু যখন লুকিয়ে স্ক্রিন দেখে, অন্য রুমে যায় বা মিথ্যা বলে—এটি স্পষ্ট আসক্তির লক্ষণ, যা অপরাধবোধ ও অস্বাস্থ্যকর ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

আসক্তির লক্ষণসমূহ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ব্রেইন অ্যান্ড লাইফ ম্যাগাজিন স্ক্রিন আসক্তির কয়েকটি মূল লক্ষণ উল্লেখ করেছে:

  1. অতিরিক্ত সময় ব্যয়

    পড়ালেখা, ঘুম বা পরিবারের সময় বাদ দিয়ে স্ক্রিনে ডুবে থাকা।

  2. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

    বন্ধু ও পরিবারের চেয়ে ডিভাইসকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া।

  3. সময়জ্ঞান হারানো

    অল্প সময় দেখার কথা থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে আটকে থাকা।

  4. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

    ডিভাইস না দিলে রাগ, চিৎকার বা বিরক্তি প্রকাশ।

  5. পড়ালেখা ও শখের প্রতি অনাগ্রহ

    আগে পছন্দের কাজগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে শুধু ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকা।

ডিভাইস আসক্তির প্রভাব

শারীরিক স্বাস্থ্য

দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া, শুষ্ক চোখ, ঝাপসা দেখা, ঘাড়–পিঠের ব্যথা, দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে স্থূলতা—এগুলো অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের সরাসরি ফল।

মানসিক স্বাস্থ্য

অতিরিক্ত স্ক্রিন শিশুদের উৎকণ্ঠা, হতাশা, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া এবং গেমিং উত্তেজনায় আক্রমণাত্মক আচরণ তৈরি করতে পারে।

বিকাশগত বাধা

বাস্তব মানুষের মুখ দেখে শেখার সুযোগ কমে যায়, ফলে ভাষা বিকাশ ও সামাজিক দক্ষতা ব্যাহত হয়। মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন

অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারে মস্তিষ্কের ‘গ্রে ম্যাটার’ কমে যেতে পারে, যা শেখা, স্মৃতি ও পরিকল্পনার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শিশুকে ডিভাইস আসক্তি থেকে রক্ষার কৌশল

  1. ইন্টারনেট বন্ধ রেখে কনটেন্ট দেওয়া

    ইন্টারনেট অফ রেখে বয়স-উপযোগী কনটেন্ট ডাউনলোড করে দেখা নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত স্ক্রিন টাইম নিশ্চিত করে।

  2. শিক্ষামূলক অ্যাপ ব্যবহার

    ইউটিউবের পরিবর্তে অক্ষরজ্ঞান, সংখ্যাজ্ঞান বা সৃজনশীলতা বাড়ায় এমন অ্যাপ দিন।

  3. পাসওয়ার্ড গোপন রাখা

    শিশুরা দ্রুত শিখে। পাসওয়ার্ড জানলে তারা যে কোনো সময় স্ক্রিনে ডুবে যেতে পারে, তাই নিয়মিত পরিবর্তন করুন।

  4. ইন্টারেক্টিভ স্ক্রিন টাইম

    শিশুর পাশে বসে সে যা দেখছে সে বিষয়ে কথা বলুন। এতে ভাষাগত দক্ষতা ও শেখার গভীরতা বাড়ে।

  5. নিজস্ব ডিভাইস না দেওয়া

    ব্যক্তিগত ডিভাইস থাকলে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। বাইরে গেলে ডিভাইস না দিয়ে তার পরিবেশ পর্যবেক্ষণকে উৎসাহ দিন।

  6. সময় বেঁধে দেওয়া

    ৩০ মিনিট, ১ ঘণ্টা—যে সীমাই ঠিক করুন, তা কঠোরভাবে মানতে হবে।

  7. স্ক্রিন ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস

    ধীরে ধীরে স্ক্রিনমুক্ত খাবার সময় তৈরি করুন এবং খাওয়ার সময় গল্প করে মনোযোগ সরান।

  8. বিকল্প কর্মকাণ্ড তৈরি

    বইপড়া, আউটডোর গেম, ছড়া, গান, বাগান করা—এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা স্ক্রিনের বিকল্প তৈরি করে।

  9. অভিভাবকের স্ক্রিন টাইম কমানো

    শিশু অনুকরণ করে শেখে। তাই পরিবারের জন্য ‘ফোন-ফ্রি’ সময় নির্ধারণ করুন।

  10. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি

    অটিজম স্পেকট্রাম বা ভাষা বিলম্বে ভুগছে এমন শিশুদের স্ক্রিন টাইম যতটা সম্ভব শূন্যে নামিয়ে আনুন।

উপসংহার

ডিভাইস কখনোই মানুষের বিকল্প নয়। শিশুর সুস্থ বিকাশে বাস্তব মিথস্ক্রিয়া, খেলাধুলা ও গুণগত সময় অপরিহার্য। সচেতন অভিভাবকত্বই পারে শিশুদের স্ক্রিন আসক্তির ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.