গৃহকর্মী আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। অনেক পরিবারের কাছে তারা ঘরের বিশাল অংশ হয়ে ওঠে — দায়িত্ব নেন, সাহায্য করেন ও কখনো কখনো পরিবারের সদস্যের মতোই আচরণ করেন। তবু বাস্তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। কিছু গৃহকর্মীর কারণে চুরি, দুর্বৃত্ততা বা নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই নিয়োগের সময় সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভবিষ্যতের ঝুকি অনেকাংশে কমানো যায়।
কেন যাচাই-বাছাই জরুরি?
কেউ আপনাকে বাড়িতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সাহায্য করবে—এই দায়িত্ব নিতে হলে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে তার পরিচয়, পটভূমি ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে। যাচাই-বাছাই না করলে মূল্যবান জিনিসপত্রের ক্ষতি, পরিবারিক অসুবিধা বা আইনি জটিলতা হতে পারে।
নিয়োগের আগে করণীয় মূল ধাপ
১. পরিচয়পত্র সংগ্রহ ও থানা নথিভুক্তিকরণ
নিয়োগের আগে গৃহকর্মীর জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি এবং পরিচয় সমর্থনকারী নথি সংগ্রহ করুন। এই কাগজপত্রের ফটোকপি নিন এবং নিকটস্থ থানায় জমা রাখলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা খামতি হলে পুলিশ দ্রুত অনুসন্ধান করতে পারবে।
২. পূর্বের কর্মস্থল যাচাই
গৃহকর্মী কোথায় কাজ করেছে, কতদিন ছিল এবং কেন চাকরি বদল করেছে—এসব সম্পর্কে তথ্য নিন। প্রয়োজনে পূর্ববর্তী নিয়োগকর্তার সঙ্গে কথা বলে কাজের ধরন ও আচরণ যাচাই করুন। এভাবে কাজের রেকর্ড দেখে আপনি তার দক্ষতা ও বিশ্বস্ততা নিয়ে ধারণা পাবেন।
৩. পরিবারের তথ্য সংগ্রহ
তার স্থায়ী ঠিকানা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জেনে নিন। প্রয়োজনে আবেদনকারীর জানানো ঠিকানায় ফোন করে বা সরাসরি যাচাই করে নিন—এটি ভবিষ্যতে পরিচয়-নির্ধারণে কাজে লাগে।
৪. সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি (প্রয়োজনে)
বাড়ির নিরাপত্তা বাড়াতে মেইন গেটে সিসি ক্যামেরা লাগানো সুবিধাজনক। আপনি অনুপস্থিত থাকলেও ক্যামেরা আপনাকে নিশ্চিত করে যে অচেনা মানুষ বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করছে কি না। প্রয়োজনে ঘরের ভেতরে কক্ষে এমন অংশে ক্যামেরা রাখতে পারেন যেখানে গোপনীয়তা লঙ্ঘন হবে না কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
৫. মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষণ
মূল্যবান ধন-সম্পদ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা গৃহকর্মীর সহজ 접근 থেকে দূরে রাখুন। লকার বা আলমারির চাবি সবসময় আপনার কাছে রাখুন এবং প্রয়োজন হলে আলাদা লক ব্যবহার করুন। সন্দেহজনক ফোন কল বা অচেনা অতিথি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন—গৃহকর্মীর মোবাইলে অনাকাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ দেখলে খেয়াল রাখুন।
৬. মানসিক ও আচরণগত মূল্যায়ন
নিয়োগের সময় তার আচরণ, কথা বলার ভঙ্গি ও মানসিক স্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন। ফุৎকারে উত্তেজিত বা অস্বাভাবিক আচরণ থাকলে সেটি লক্ষ করুন। কাজের শুরুর প্রথম কয়েক দিন তার আচরণ ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন; অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়লে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
৭. বিশ্বস্ত এজেন্সি বা পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে নেয়া
বিশ্বস্ত রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে গৃহকর্মী নিলে সাধারণত প্রাথমিক ব্যাকগ্রাউন্ড চেক, রেফারেন্স যাচাই ও বদলির সুবিধা পাওয়া যায়। এজেন্সি নির্বাচন করলে লাইসেন্স, রিভিউ ও পূর্বের গ্রাহক প্রতিক্রিয়া যাচাই করুন। সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলে বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশীর সুপারিশ অনুযায়ী গৃহকর্মী নেওয়া—কারণ ব্যক্তিগত রেফারেন্সে বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি থাকে।
নিয়োগের সময় ব্যবহারিক টিপস ও সতর্কতা
- চুক্তিপত্র স্পষ্ট রাখুন: কাজের ধরন, সময়সূচি, পারিশ্রমিক ও ছুটিসমূহ লিখিত চুক্তিতে রাখুন।
- প্রাথমিক ট্রায়াল পিরিয়ড রাখুন: প্রথম ৭–১৫ দিন ট্রায়াল রাখলে দুই পক্ষই মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়।
- নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন: গৃহকর্মীর কাজ ও আচরণের বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মতামত দিন।
- সীমা নির্ধারণ করুন: কোন রুমে প্রবেশ করা বা কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না—এসব পরিষ্কার করে বলে দিন।
- অনধিকারপ্রবেশ রোধ করুন: বাহির থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে গ্রহণের অনুমতি না দেওয়া ভালো, এবং দরকারে আপনাকে জানিয়ে দিয়ে নিতে বলুন।
প্রত্যাশিত সুবিধা ও ঝুঁকি কমানো
উপরের পদক্ষেপগুলো অনুসরণের ফলে আপনি গৃহকর্মী নিয়ে অনেকটাই নির্ভরযোগ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবেন। পরিচিত রেফারেন্স, সঠিক কাগজপত্র, প্রয়োজনীয় নজরদারি ও স্পষ্ট চুক্তি—এসব মিলিয়ে ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। তবু যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তা দ্রুত স্থানীয় পুলিশ বা নিয়োগকৃত এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধান করুন।
উপসংহার
গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সঠিক যাচাই গুরুত্বপূর্ণ — এতে আপনার পরিবারের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। পরিচয়পত্র যাচাই, পূর্বের কর্মস্থল তদারকি, পরিবারের তথ্য সংগ্রহ, পর্যাপ্ত নজরদারি ও বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ এগুলো মেনে চলুন। এতে করে আপনি গৃহকর্মী দিয়ে সুষ্ঠু ও আত্মবিশ্বাসীভাবে দৈনন্দিন কাজ চালাতে পারবেন।
সূত্র: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)