মোবাইল দিয়েই জানুন জমির খাজনা কত দিনের বাকি ও কত টাকা দিতে হবে
বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকারি অনেক সেবা এখন হাতের মুঠোয়। এই ডিজিটাল সুবিধার অন্যতম একটি হলো জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) সংক্রান্ত তথ্য এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই অনলাইনে জানা ও পরিশোধ করার সুযোগ।
আগে যেখানে ভূমি অফিসে বারবার যেতে হতো, সেখানে এখন ঘরে বসেই কয়েক মিনিটে জানা যাচ্ছে—জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, কত বছরের খাজনা বাকি আছে এবং মোট কত টাকা দিতে হবে।
এই লেখায় আমরা সহজভাবে জানবো মোবাইল দিয়ে জমির খাজনা কীভাবে চেক করবেন, কী কী লাগবে এবং কেন এটি নিয়মিত জানা জরুরি।
আরও পড়ুন: ‘ভূমি অ্যাপ’ চালু: নামজারি, ভূমি কর ও খতিয়ান এখন এক ক্লিকে
জমির খাজনা কী?
খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর হলো সরকার নির্ধারিত সেই কর, যা প্রতিটি জমির মালিককে জমির পরিমাণ ও শ্রেণি অনুযায়ী প্রতি বছর পরিশোধ করতে হয়।
যদি নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নিচের কাজগুলোতে জটিলতা দেখা দিতে পারে—
- জমি নামজারি
- জমি বিক্রি বা হস্তান্তর
- উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কার্যক্রম
কেন নিয়মিত জমির খাজনা চেক করা জরুরি?
অনেক সময় জমির মালিকরা বুঝতেই পারেন না যে—
- কয়েক বছরের খাজনা বাকি পড়ে আছে
- আগের মালিক খাজনা পরিশোধ করেননি
- রেকর্ডে তথ্যের ভুল রয়েছে
এই কারণে নিয়মিত অনলাইনে খাজনা চেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল দিয়ে জমির খাজনা কিভাবে চেক করবেন?
বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল ভূমি সেবা চালু করেছে, যার মাধ্যমে মোবাইল থেকেই খাজনা সংক্রান্ত সব তথ্য জানা যায়।
যা যা লাগবে
- একটি স্মার্টফোন
- ইন্টারনেট সংযোগ
- জমির জেলা, উপজেলা ও মৌজার নাম
- খতিয়ান নম্বর অথবা দাগ নম্বর
ধাপে ধাপে খাজনা চেক করার নিয়ম
- মোবাইলের ব্রাউজার খুলুন
- সরকার অনুমোদিত ভূমি সেবা পোর্টালে প্রবেশ করুন
- ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা অপশন নির্বাচন করুন
- জেলা, উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করুন
- খতিয়ান বা দাগ নম্বর লিখুন
- সার্চ করলে খাজনার সম্পূর্ণ তথ্য দেখাবে
স্ক্রিনে আপনি দেখতে পাবেন কত বছরের খাজনা বাকি আছে, মোট টাকার পরিমাণ এবং পরিশোধের বর্তমান অবস্থা।
জমির খাজনা কত টাকা হতে পারে?
খাজনার পরিমাণ নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর—
- জমির পরিমাণ
- জমির শ্রেণি (চাষযোগ্য, বসতভিটা ইত্যাদি)
- এলাকাভেদে নির্ধারিত রেট
অনলাইনে চেক করলে সর্বশেষ ও সঠিক টাকার হিসাব দেখা যায়।
আরও পড়ুন
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করা যাবে কি?
হ্যাঁ, বর্তমানে সম্পূর্ণ অনলাইনে খাজনা পরিশোধ করা যায়।
- বিকাশ
- নগদ
- রকেট
- ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড
পেমেন্ট সম্পন্ন হলে সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল রসিদ পাওয়া যায়, যা ডাউনলোড বা প্রিন্ট করা যায়।
খাজনা চেক করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
- সঠিক খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করুন
- মৌজা ভুল হলে তথ্য পাওয়া যাবে না
- পুরনো রেকর্ড হলে আপডেট নাও থাকতে পারে
- সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন
অনলাইনে খাজনা চেক করার সুবিধা
- সময় সাশ্রয় হয়
- ভূমি অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না
- হয়রানি কমে
- তথ্য স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য
- ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যায়
উপসংহার
জমির খাজনা এখন আর জটিল কোনো বিষয় নয়। মোবাইল ফোন থাকলেই সহজেই জানা যাবে—কত দিনের খাজনা বাকি আছে এবং কত টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ডিজিটাল ভূমি সেবা ব্যবহার করে নিজেই নিজের জমির তথ্য যাচাই করুন এবং ভবিষ্যতের আইনি ঝামেলা এড়িয়ে চলুন।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
মোবাইল দিয়ে কি সব ধরনের জমির খাজনা চেক করা যায়?
হ্যাঁ, যেসব জমির রেকর্ড ডিজিটাল ভূমি সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত আছে, সেগুলোর খাজনা মোবাইল দিয়ে অনলাইনে চেক করা যায়। তবে খুব পুরোনো বা এখনো ডিজিটাল না হওয়া রেকর্ড অনলাইনে নাও দেখা যেতে পারে।
খতিয়ান নম্বর না জানলে কি খাজনা চেক করা সম্ভব?
খতিয়ান নম্বর না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে দাগ নম্বর ব্যবহার করেও খাজনা চেক করা যায়। তবে খতিয়ান নম্বর থাকলে তথ্য দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পাওয়া যায়।
অনলাইনে দেখানো খাজনার তথ্য কি নির্ভরযোগ্য?
হ্যাঁ, সরকার অনুমোদিত ভূমি সেবা পোর্টালে দেখানো খাজনার তথ্য সরাসরি সরকারি ডাটাবেজ থেকে আসে, তাই এটি নির্ভরযোগ্য ও আপডেটেড।
অনলাইনে খাজনা পরিশোধ করলে কি রসিদ পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, অনলাইনে খাজনা পরিশোধ শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ডিজিটাল রসিদ পাওয়া যায়, যা ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করা যায়।
খাজনার তথ্য ভুল দেখালে কী করব?
যদি অনলাইনে দেখানো খাজনার তথ্য ভুল মনে হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস বা এসিল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
মোবাইল দিয়ে খাজনা চেক করা কি সম্পূর্ণ ফ্রি?
হ্যাঁ, খাজনা চেক করা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। শুধু অনলাইনে পরিশোধ করার সময় নির্ধারিত খাজনার টাকা দিতে হয়।