ইনকগনিটো মোড কি সত্যিই নিরাপত্তা দেয়? সাইবার বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করা বা ব্রাউজিং হিস্ট্রি ডিলিট করলেই অনলাইনে গোপন থাকা যায়। কিন্তু এআই ও আধুনিক স্মার্ট ট্র্যাকিং প্রযুক্তির যুগে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বলে জানিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
কারণ প্রতিবার একটি অ্যাপ খুললে, কোনো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ ইন্টারঅ্যাকশন করলেই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য মিলিয়ে তৈরি হয় একটি ডিজিটাল আইডেন্টিটি, যা সহজেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টার্গেট বা সাইবার অপরাধীর নজরে আসতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে—গোপনীয়তা রক্ষায় একক কোনো টুল নির্ভরযোগ্য নয়। উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেম খুব সহজেই একটি মাত্র সুরক্ষা ব্যবস্থাকে বাইপাস করতে পারে। তাই প্রয়োজন বহুপদক্ষেপ সুরক্ষা এবং নিয়মিত প্রাইভেসি অভ্যাস।
অনলাইনে নিরাপদ থাকার কার্যকর কৌশল
-
১. জিরো-লগ ভিপিএন ব্যবহার
জিরো-লগ নীতি অনুসরণ করে এমন ভিপিএন ব্যবহারকারীর আসল আইপি লুকায় এবং পুরো সংযোগ এনক্রিপ্ট করে। গুরুত্বপূর্ণ হলো—প্রোভাইডার যাতে কোনো লগ সংরক্ষণ না করে। উদাহরণ: ExpressVPN, NordVPN, Surfshark VPN ইত্যাদি।
-
২. মাল্টি-লেয়ার নেটওয়ার্ক রাউটিং ও আলাদা আইডেন্টিটি
একই ডিভাইস বা একই নেটওয়ার্কে সব কাজ করলে ট্র্যাকিং সহজ হয়। সংবেদনশীল কাজ, ব্যক্তিগত ব্রাউজিং ও সাধারণ ব্যবহার এক ডিভাইস বা নেটওয়ার্কে করা উচিত নয়। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক (বাড়ি, অফিস, মোবাইল ডেটা) ব্যবহার করলে ট্র্যাকিং জটিল হয়ে পড়ে।
-
৩. ট্র্যাকার ব্লক ও আইডেন্টিটি লিঙ্কিং কমানো
ওয়েবসাইট ও অ্যাপ কুকিজ, পিক্সেল এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে বিশাল তথ্য সংগ্রহ করে। নিয়মিত কুকিজ ডিলিট করা, প্রাইভেসি-ফোকাসড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার, এক ইমেইলে সব অ্যাকাউন্ট না খোলা এবং ব্যবহার শেষে লগআউট—এসব অভ্যাস ডেটা লিঙ্কিং ভেঙে দেয়।
-
৪. বার্তা ও ফাইল এনক্রিপ্ট করা
এনক্রিপশন ডেটাকে এমন কোডে রূপান্তরিত করে যা মাঝপথে চুরি হলেও পড়া সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত চ্যাটে এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার এবং সংবেদনশীল ডেটার অটো ক্লাউড-সিঙ্ক বন্ধ রাখা নিরাপত্তা বাড়ায়।
-
৫. নিয়মিত প্রাইভেসি অভ্যাস গড়ে তোলা
অ্যাপ পারমিশন রিভিউ করা, অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে ফেলা, নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য কম শেয়ার করা—এসব ছোট অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে বড় সুরক্ষা প্রদান করে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের উপসংহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, গোপনীয়তার ঝুঁকিও তত বাড়ছে। তাই এআই যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক এবং প্রাইভেসি-সচেতন হয়ে উঠতে হবে। কেবল ইনকগনিটো মোড নয়, বরং বহুপদক্ষেপ সুরক্ষা অনলাইন নিরাপত্তার একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ।