অপটিক্যাল ফাইবার, অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার, অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার, optical fiber in bangla
অপটিক্যাল ফাইবার কি?
অপটিক্যাল ফাইবার হলো এক ধরনের পাতলা, নমনীয়, স্বচ্ছ কাচ বা প্লাস্টিকের তৈরি ফাইবার যার মাধ্যমে আলো (light signal) প্রবাহিত হয়। এটি সাধারণত telecommunications এবং ইন্টারনেট ডেটা ট্রান্সমিশন এর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি total internal reflection এর নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। অপটিক্যাল ফাইবারে আলো কোর অংশের মধ্য দিয়ে বহু দূর পর্যন্ত ক্ষয় ছাড়াই গমন করে।
অপটিক্যাল ফাইবার হল একটি খুব পাতলা তার যার মাধ্যমে খুব উচ্চ গতিতে ডেটা স্থানান্তর করা হয় এবং এই গতি প্রায় আলোর গতির সমান। এই অপটিক্যাল ফাইবারে আলোর প্রতিফলন ব্যবহার করে খুব দ্রুত গতিতে ডেটা স্থানান্তর করা হয়, এই পদ্ধতিকে অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলা হয়। এই অপটিক্যাল ফাইবারগুলি মূলত প্লাস্টিকের তৈরি।
এই প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আজকের দিনে ইন্টারনেট, টেলিফোন, ক্যাবল টিভি, এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এই অপটিক্যাল ফাইবার প্রযুক্তির আবির্ভাব শুরু হয় ১৮ এর দশকে, তখন থেকেই শুরু হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা অপটিক্যাল ফাইবার এর। তারপর 1800 সালে, পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আলো জলের স্রোতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, এই পরীক্ষাটি করেছিলেন জিন ড্যানিয়েল কোল্ডন এবং আলোও একটি কাচের রডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এটি উইলিয়াম হুইলার আবিষ্কার করেছিলেন। তারপর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।
1930 সালে একটি আশার ঝলক দেখা গিয়েছিল। যদিও হেনড্রিক্স লিমই প্রথম বিজ্ঞানী যিনি আমাদেরকে অপটিক্যাল ফাইবারের প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। 1930 সালে, হেনরিক লোম একটি গ্লাস ফাইবারের মাধ্যমে একটি ফিলামেন্টের একটি চিত্র পাঠান, যদিও ছবিটি খুব অস্পষ্ট ছিল। যাইহোক, ফিল্মটি ছিল অপটিক্যাল ফাইবারের আলোর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ডেটার প্রথম সফল ট্রান্সমিশন। আমরা বর্তমানে যে অপটিক্যাল ফাইবারটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করছি তা বিজ্ঞানী মোলারের উপহার।
Related Posts
অপটিক্যাল ফাইবারের গঠন
অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত তিনটি প্রধান স্তর নিয়ে গঠিত:
- Core (কোর): এটি ফাইবারের কেন্দ্রীয় অংশ যেটি আলো পরিবহণ করে। এটি সাধারণত কাচ বা প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি।
- Cladding (ক্ল্যাডিং): এটি কোরের চারপাশে থাকে এবং বিভিন্ন রিফ্র্যাকটিভ ইনডেক্স থাকায় আলোকে কোরের মধ্যে রাখে।
- Buffer Coating (বাফার কোটিং): বাইরের আবরণ যা অপটিক্যাল ফাইবারকে যান্ত্রিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
অপটিক্যাল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্য
- এর গতি আলোর গতির সমান।
- একই সাথে একাধিক তথ্য প্রেরণ করা যায়।
- শক্তির অপচয় হয় না বললেই চলে।
- রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তা।
- এটিতে গিগাবাইট রেঞ্জ বা তার থেকে বেশি দ্রুত গতিতে ডেটা চলাচল করতে পারে।
- নেটওয়ার্কের ব্যাকবােন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বেশি ব্যবহৃত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার?
অপটিক্যাল ফাইবার প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
1. সিঙ্গল মোড ফাইবার (Single Mode Fiber)
এই ধরনের ফাইবারে একবারে একটি মোড বা পথ দিয়ে আলো প্রবাহিত হয়। এর কোর ব্যাস সাধারণত ৮ থেকে ১০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। এটি খুব দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য উপযুক্ত, যেমন আন্তঃদেশীয় ইন্টারনেট সংযোগ।
2. মাল্টিমোড ফাইবার (Multi Mode Fiber)
মাল্টিমোড ফাইবারে একাধিক মোড বা আলোর পথ থাকে। এর কোর ব্যাস তুলনামূলকভাবে বড় (৫০ থেকে ৬২.৫ মাইক্রোমিটার)। এটি সাধারণত ছোট দূরত্বের জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন অফিস, ক্যাম্পাস বা LAN সংযোগে।
অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে?
অপটিক্যাল ফাইবার কাজ করে Total Internal Reflection এর মাধ্যমে। যখন আলো কোরে প্রবেশ করে এবং কোণটি critical angle এর চেয়ে বেশি থাকে, তখন এটি ক্ল্যাডিংয়ে না গিয়ে কোরের ভেতরে প্রতিফলিত হয় এবং এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছায়। এইভাবে আলোর কোনো শক্তি প্রায় বিনাশ না হয়েই অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
অপটিক্যাল ফাইবার হল এক ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে আলোর মাধ্যমে সংকেত বা তথ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করা হয়। ধরুন, আপনি একটি করিডোর পেরিয়ে একটি আলো দিয়ে কাউকে সংকেত দিচ্ছেন, যেহেতু আমরা জানি যে আলো একটি সরল পথে ভ্রমণ করে, যদি করিডোরটি সম্পূর্ণ সোজা হয়, তাহলে সিগন্যালটি সহজেই অতিক্রম করবে। কিন্তু যদি বাঁকা হয়? তারপর বাঁকা যেখানে সেখানে আয়না রাখলে আলো আবার উপরের দিকে পৌঁছাতে পারে।
অপটিক্যাল ফাইবার, খুব পাতলা কাচের রডের সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের তার, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আলো বহন করে। আলো গ্লাসে প্রতিফলিত হয় এবং নির্দিষ্ট ডিকোডিং রিসিভারে পৌঁছায়, যেখানে আলোর মাধ্যমে পাঠানো তথ্য ডিকোড করা হয় এবং আমরা বুঝতে পারি তথ্যটি কী। প্রতিটি কাচের সরু দণ্ডগুলি খুব পাতলা, প্রায় চুলের মতো
অতএব, প্রতিটি তারের অনেক গ্লাস রড থাকতে পারে। যখন আলোর মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়, তখন সংকেত কিছুক্ষণ পর দুর্বল হয়ে যায়, তাই দীর্ঘ দূরত্বে তারের মধ্যে বুস্টার ইনস্টল করা হয়, তারা সিগন্যালের শক্তি বাড়ায় এবং ডেটাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার
অপটিক্যাল ফাইবার বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নিচে কিছু প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
1. টেলিকমিউনিকেশন
এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইন্টারনেট সংযোগ, ফোন কল, ও কেবল টিভি সংযোগে। কারণ এটি প্রচুর পরিমাণে ডেটা উচ্চগতিতে পাঠাতে পারে।
2. মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রি
এন্ডোস্কোপি ও অন্যান্য নন-ইনভেসিভ সার্জারিতে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি আলো ও ছবি পাঠাতে সক্ষম।
3. মিলিটারি ও এভিয়েশন
সেনাবাহিনী তাদের নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে, কারণ এটি জ্যাম প্রুফ এবং অধিক নিরাপদ। এছাড়াও এভিয়েশনে ও বিমান চালনার ন্যাভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
4. ডেটা সেন্টার ও সার্ভার
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার ও ডেটা সেন্টারে দ্রুত ডেটা আদান-প্রদানের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হয়।
5. ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন
কিছু সেন্সর, রোবটিক্স ও মেশিনারিতে অপটিক্যাল ফাইবার ডেটা কমিউনিকেশন ও সেন্সিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা
- উচ্চ ব্যান্ডউইথ: প্রচুর পরিমাণ ডেটা একসাথে ট্রান্সমিট করতে সক্ষম।
- কম সিগন্যাল লস: অনেক দূর পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সমিশনে কম শক্তি ক্ষয় হয়।
- ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফিয়ারেন্স রোধ: ফাইবার অপটিক সিগন্যাল ইলেকট্রিক নয়, তাই ইএমআই সমস্যা নেই।
- হালকা ও পাতলা: ফাইবার তারের ওজন কম এবং জায়গা কম নেয়।
- নিরাপদ: তথ্য চুরি বা ট্যাপ করার সম্ভাবনা কম।
অপটিক্যাল ফাইবারের অসুবিধা
- উচ্চ খরচ: শুরুতে ইনস্টলেশন ব্যয়বহুল হতে পারে।
- নাজুকতা: কাচ বা প্লাস্টিকের তৈরি হওয়ায় ভাঙার সম্ভাবনা বেশি।
- স্পেশাল টুলস ও টেকনিশিয়ান: সংযোগ এবং মেরামতের জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান দরকার।
উপসংহার
অপটিক্যাল ফাইবার আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে দ্রুত, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়েছে। আজকের বিশ্বে উচ্চগতির ইন্টারনেট থেকে শুরু করে চিকিৎসা প্রযুক্তি পর্যন্ত, অপটিক্যাল ফাইবার একটি অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। ভবিষ্যতে ৫জি ও উন্নত প্রযুক্তিতে এর চাহিদা আরও বাড়বে তা নিশ্চিত।