হাঁদারাম ও সোনার হাঁস | শিক্ষণীয় বাংলা রূপকথার গল্প
এক কাঠুরের তিন ছেলে। বড় দুই ছেলেই চতুর, কিন্তু ছোট ছেলেটিকে সকলে হাঁদারাম বলে ডাকে—কারণ সে একটু বোকাসোকা। একদিন কাঠুরে অসুস্থ হয়ে পড়ল, তাই বড় ছেলেকে বলল, “তুমি আজ বনে গিয়ে কাঠ কাটো।”
মা তার ছেলের হাতে রুটি আর দুধ দিল। ছেলে রওনা দিল। বনপথে এক বুড়ো তাকে বলল, “খিদে পেয়েছে, কিছু খাবার দেবে?” বড় ছেলে বলল, “আমার খাবার নিজেকেই যথেষ্ট নয়, তোকে কী দেব?” তারপর সে গিয়ে গাছ কাটতে শুরু করল। কিন্তু অমনি কুড়ুল পড়ে গেল তার হাতের উপর। রক্ত ঝরতে লাগল—কাজ থেমে গেল।
পরদিন মেজো ছেলে গেল। সেও বুড়োর অনুরোধ অস্বীকার করল। এবার তার পায়ে কুড়ুল পড়ে যায়। চলাফেরা বন্ধ।
শেষে হাঁদারাম গেল। তার মা দিল শুধু বাসি রুটি আর জল। বুড়ো এবারও খেতে চাইল। হাঁদারাম বলল, “এটাই আছে, ভাগ করে খাই চল।” দুজনে মিলে খেয়ে বুড়ো বলল, “তুমি যে গাছটা প্রথম কাটবে, তার নীচে থাকবে এক অমূল্য জিনিস।”
গিয়ে সে প্রথম যে গাছ কাটল, তার ভিতর থেকে বের হল এক সোনার হাঁস! হাঁদারাম খুশিতে বাড়ি ফিরছিল, পথে একটি সরাইখানায় রাত কাটাল। সোনার হাঁস দেখে সরাইওয়ালার দুই মেয়ের লোভ লাগল। রাতে তারা পালক নিতে চাইল, কিন্তু যারাই ছোঁয়, তাদের হাত হাঁসের গায়ে আটকে যায়!
পরদিন হাঁদারাম হাঁস কাঁধে রওনা দিল, পিছনে চলছে দুই মেয়ে। পথে সরাইওয়ালা, গোয়ালা, তার স্ত্রী—যারাই ছোঁয়, আটকে যায়। হাঁদারাম কিছু না বুঝে এগিয়ে চলে।
রাজকন্যার হাসির রহস্য
সে দেশে রাজা ঘোষণা দিয়েছিল, “যে আমার মেয়েকে হাসাতে পারবে, তাকেই রাজকন্যা বিয়ে করবে।” কারণ রাজকন্যা কোনোদিন হাসে না।
হাঁদারাম তার সোনার হাঁস ও তার পিছনে টানা-হিঁচড়ে চলা লোকজন নিয়ে রাজদরবারে হাজির হল। এমন দৃশ্য দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল—সবচেয়ে বেশি হাসল রাজকন্যা!
অবশেষে হাঁদারামের সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে হল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে হাঁদারাম হয়ে উঠল রাজা, আর তার সরলতা আর দয়াশীলতা সবাইকে শিক্ষা দিল—মনের বিশুদ্ধতা আর সহানুভূতিই জীবনের আসল সম্পদ।
গল্পের শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের শেখায়, যে দয়াশীল, নিরহঙ্কার, আর পরোপকারী—শেষ পর্যন্ত সাফল্য তারই আসে। অহংকার, স্বার্থপরতা আর অবহেলা আমাদের ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। হাঁদারাম হয়তো "হাঁদা", কিন্তু তার হৃদয় ছিল সোনার হাঁসের মতোই অমূল্য।