ইঁদুরের মা – মণিপুরী রূপকথা ভিত্তিক একটি শিক্ষণীয় গল্প
একটা ছোট্ট গ্রাম, যেখানে থাকতেন এক বুড়ো-বুড়ি দম্পতি। তাদের ছিল না কোনো সন্তান, না কাছের আত্মীয়। বৃদ্ধের বয়স বাড়ছিল, ভবিষ্যতের চিন্তা তাকে করে তুলেছিল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
একদিন বুড়ো এসে বলল, “ও বুড়ি, তোমার ইচ্ছা তো ছিল একটা মেয়ে হোক। দেখো, আমি নিয়ে এসেছি!” বুড়ি ভেবে পেল না ব্যাপারটা কী! ঝুড়ি খুলে দেখে, ভেতরে ছোট্ট একটা ইঁদুরছানা! অথচ তার চোখ-মুখ একেবারে মানুষের মতো।
সন্তানস্নেহে লালন
বুড়োবুড়ি তাকে ভালোবেসে বড় করতে লাগল। মাছের টুকরো খাইয়ে, ঝর্ণার জলে স্নান করিয়ে, আদরে-স্নেহে বড় হলো ইঁদুরকন্যা। সে মানুষের মতো কাজ করত—ঘর ঝাঁট দিত, ময়লা পরিষ্কার করত, এমনকি কাপড় গুছিয়েও রাখত।
রাজকন্যার প্রস্তাব
বড় হয়ে ওঠার পর বুড়ো ঘোষণা করল, “আমার মেয়েকে রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেব।” খবর ছড়াল দূর দেশে, এক রাজা তার ছেলের জন্য প্রস্তাব দিল।
হাতি, ঘোড়া, পালকিতে চড়ে বর এল। ডালা সাজানো, সানাই বাজছে, অথচ কনে কোথায়? বরের চোখে কোনো মানুষকন্যা নেই। রেগে উঠল সে। কিন্তু পিতা বলল, “আমি কথা দিয়েছি—এই বিয়েই হবে।”
বাসর ও বিস্ময়
বাসরঘরে রাজপুত্র ভাবল, “কি হবে এই ইঁদুরকন্যার সাথে!” কিন্তু প্রতিদিন সে দেখতে লাগল—ঘর সাজানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কে করে? জানে না কেউ।
একদিন সে নিজেই লুকিয়ে দেখল—ইঁদুরের খোলস খুলে দাঁড়িয়ে আছে এক অপূর্ব রমণী! তার দীপ্তি পুরো ঘরকে আলোকিত করে তুলেছে। রাজপুত্র হতবাক হয়ে পড়ে যায় মাটিতে। সেই মুহূর্তে রাণী আবার হয়ে যায় ইঁদুর।
ভালোবাসা ও অভিশাপ
পরদিন রাজপুত্র আবার লুকায়। এবার আর নিজেকে থামাতে পারে না। সে ইঁদুরচামড়া তুলে পুড়িয়ে ফেলে, রাণীকে জড়িয়ে ধরে।
রাণী বলল, “আহা, এটা কী করলে! আমি এক ঋষির অভিশাপে ইঁদুর হয়েছি। আর মাত্র দুদিন থাকলেই আমি নিজের রূপ ফিরে পেতাম। তুমি যদি একটু অপেক্ষা করতে...
রাজপুত্র প্রতিজ্ঞা করল, দুদিন আর স্পর্শ করবে না। সেই অপেক্ষার পর সত্যি ইঁদুরকন্যা হয়ে উঠল এক পূর্ণ রাজরাণী। তারা সুখে-শান্তিতে রাজত্ব করল, আর বুড়োবুড়িকে আনল প্রাসাদে—সম্মানে রাখল পাশে।
গল্পের শিক্ষা:
ভালোবাসা, ধৈর্য ও বিশ্বাস—এই তিনটি গুণ কখনো ব্যর্থ হয় না। বাহ্যিক রূপে যা দেখা যায়, তার আড়ালেও থাকতে পারে বিস্ময়কর সত্য।