ডিজিটাল দুনিয়ায় ছবি মানেই সত্য নয়
আজকের ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি তথ্য বিকৃতি ও বিভ্রান্তির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে জেনারেটিভ এআই ও ডিপফেক প্রযুক্তি এখন এমন ছবি তৈরি করতে সক্ষম যা চোখে দেখে বাস্তব ও কৃত্রিমের পার্থক্য বোঝা কঠিন। এই কারণে সচেতন ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের জানা জরুরি কীভাবে একটি এআই-তৈরি ছবি চিনে ফেলা যায়। নিচে কয়েকটি সহজ কিন্তু কার্যকর টিপস তুলে ধরা হলো।
১. চোখ ও দাঁতের অনিয়মিততা লক্ষ্য করুন
এআই-তৈরি ছবিতে চোখ ও দাঁত প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে রেন্ডার হয়। চোখে অসামঞ্জস্যপূর্ণ রিফ্লেকশন, চোখের কোণে ব্লার, কিংবা অতিরিক্ত নিখুঁত দাঁত দেখা যায়। আসল ছবিতে দাঁতের ফাঁক, ছায়া ও আলোর ভিন্নতা স্বাভাবিকভাবে থাকে।
২. হাত এবং আঙুল পরীক্ষা করুন
এআই মডেল এখনো মানুষের হাত নিখুঁতভাবে তৈরি করতে পারে না। আঙুলের সংখ্যা, নখের আকৃতি, সংযোগস্থলে বিকৃতি বা গলে যাওয়া দেখা যেতে পারে। অনেক সময় হাতে ধরা বস্তু অস্বাভাবিকভাবে ঢুকে বা মুছে যায়।
৩. ব্যাকগ্রাউন্ড ও গভীরতা যাচাই করুন
এআই প্রায়শই ব্যাকগ্রাউন্ডকে খুব স্মুথ, সমান বা ডিটেইলহীনভাবে তৈরি করে। ফরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে প্রকৃত গভীরতা না থাকলে বা দৃশ্যের পার্সপেকটিভে ভুল থাকলে সেটি এআই-ছবি হওয়ার ইঙ্গিত।
৪. আলো-ছায়ার সামঞ্জস্য যাচাই করুন
প্রকৃত ছবিতে আলোর দিক ও ছায়ার দিক একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এআই-ছবিতে মুখে আলো থাকলেও প্রয়োজনীয় ছায়া নাও থাকতে পারে, অথবা বস্তু ভিন্ন দিকে ছায়া ফেলতে পারে। এটি ছবি কৃত্রিম হওয়ার বড় ইঙ্গিত।
৫. ত্বকের টেক্সচার পরীক্ষা করুন
আসল মানুষের ত্বকে সূক্ষ্ম ভাঁজ, পোর ও অসমচিত্রতা থাকে। কিন্তু এআই-ছবিতে ত্বক প্রায়শই অতিরিক্ত স্মুথ, উজ্জ্বল বা প্লাস্টিকের মতো দেখায়। খুব নিখুঁত ত্বক প্রায়ই কৃত্রিমতার লক্ষণ।
৬. ছবিতে লেখা বা লোগো পরীক্ষা করুন
এআই-তৈরি ছবিতে লেখা বিকৃত বা ভুল বানানে দেখা যায়। বিলবোর্ড, টি-শার্ট, বা ব্যানারে অচল অক্ষর বা অদ্ভুত ফন্ট ব্যবহৃত হলে এটি সন্দেহজনক।
৭. রিভার্স ইমেজ সার্চ ব্যবহার করুন
যদি কোনো ছবি সন্দেহজনক মনে হয়, গুগল লেন্স, টিনআই বা বিং ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে রিভার্স সার্চ করুন। আসল ছবি সাধারণত আগে কোথাও প্রকাশিত থাকে, কিন্তু এআই-ছবি সাধারণত নতুনভাবে তৈরি হয়।
৮. মেটাডেটা ও এআই-ডিটেকশন টুল ব্যবহার করুন
ছবির EXIF মেটাডেটা চেক করুন—এতে ক্যামেরা, লেন্স, শুটিং ডেটা ইত্যাদি তথ্য থাকে। এআই-ছবিতে এসব অনুপস্থিত বা “Generated by AI” লেখা থাকতে পারে। এছাড়া Hive Moderation বা Sensity এর মতো টুল ব্যবহার করে প্রাথমিক যাচাই করা যায়।
৯. মুখের অভিব্যক্তি ও স্বাভাবিকতা লক্ষ্য করুন
আসল মানুষের হাসি, চোখের অভিব্যক্তি ও মুখের পেশী স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়। এআই ছবিতে প্রায়ই সবাই একই রকম হাসছে বা চোখে আবেগহীন দৃষ্টি থাকে। এটি সহজেই সন্দেহ জাগায়।
১০. সামগ্রিক লজিকাল অঙ্গবিন্যাস পরীক্ষা করুন
আলো, ছায়া, প্রতিবিম্ব, আকার ও অনুপাত একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। যদি চশমার প্রতিফলন ভুল দিকে যায়, গহনা অসমভাবে বসানো থাকে বা পটভূমি বাস্তবের সঙ্গে না মেলে—তাহলে সেটি সম্ভবত এআই-ছবি।
উপসংহার
ডিজিটাল যুগে বাস্তব ও কৃত্রিমের সীমারেখা দিন দিন ক্ষীণ হচ্ছে। তাই আমাদের সজাগ দৃষ্টি ও প্রযুক্তিগত সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। প্রতিটি ছবি বা ভিডিওকে যাচাই-বাছাই করে দেখা, রিভার্স সার্চ ও মেটাডেটা বিশ্লেষণ করা অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। মনে রাখুন—প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, তথ্য যাচাই ততই অপরিহার্য হবে। সঠিক সচেতনতা ও পর্যবেক্ষণই পারে আমাদেরকে ভুয়া ছবি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে রক্ষা করতে।