প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ভূমিকম্প, কখনও কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই আসে। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে, যেখানে ৫–৭ তলার অ্যাপার্টমেন্টগুলো প্রচুর, একটি ক্ষুদ্র ভুল সিদ্ধান্তও মারাত্মক হতে পারে। তাই আগে থেকে জানা ও প্রস্তুত থাকা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকম্পে প্রথম প্রতিক্রিয়া
উপরের তলায় থাকলে সাধারণত মানুষ দ্রুত সিঁড়ি ধরে নিচে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—কম্পন শুরু হলে নিচের তলা ভেঙে উপরের তলা পড়তে পারে। সিঁড়ি বা বারান্দায় যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০% মানুষ সিঁড়িতে আহত বা মারা যায়।
মনে রাখুন: কম্পন শুরু হলে স্থির থাকুন এবং নিরাপদ আশ্রয়ে যান।
Drop–Cover–Hold On কৌশল
কম্পনের সময় নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার কৌশল:
- বেডরুমে থাকলে খাটের নিচে ঢুকুন।
- ড্রয়িং বা ডাইনিং রুমে থাকলে মজবুত টেবিলের নিচে ঢুকুন।
- কোনো আশ্রয় না থাকলে দেয়ালের কোণে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
- বারান্দায় যাবেন না—রেলিং ভেঙে পড়তে পারে।
- বাথরুমে উল্টো বালতি মাথার ওপর ধরে বসা নিরাপদ হতে পারে।
- হেলমেট, ঝুড়ি, ব্যাগ—যা খুঁজে পাবেন মাথার ওপর রাখুন।
১ম/২য় তলায় থাকলে করণীয়
- কম্পন শুরু হলে দরজা খুলে রাখুন।
- প্রথম ১৫–২০ সেকেন্ডে সিঁড়ি ধরে নেমে রাস্তায় চলে আসুন।
- রাস্তায় দাঁড়াবেন না, ১০০ ফুট দূরে সরে যান।
- খোলা মাঠে অবস্থান করুন।
ধ্বংসস্তূপে আটকে গেলে
- চিৎকার করবেন না—ধুলো ঢোকে গলা শুকায়।
- হুইসেল থাকলে বাজান, না থাকলে দেয়াল বা পাইপে ৩ বার টোকা দিন।
- মোবাইল টর্চ অন রাখুন, কথা বলবেন না—ব্যাটারি বাঁচান।
- মুখে কাপড় চাপুন, ধুলো ঢোকা কমবে।
আরও পড়ুনঃ
প্রস্তুতি
- বিছানার পাশে জুতা রাখুন।
- হেলমেট ও হুইসেল বেডের পাশে রাখুন।
- ভারী আলমারি, টিভি, ফ্রিজ এমনভাবে রাখুন যাতে পড়ে গেলে আঘাত না হয়।
- গ্যাস সিলিন্ডার চেইন দিয়ে বেঁধে রাখুন।
- দরজা কখনো অটো-লক হবে না, চাবি কাছে রাখুন।
ঢাকায় ভূমিকম্পের বাস্তবতা
ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে ৫–৭ তলার অ্যাপার্টমেন্ট সাধারণ। মনে রাখবেন:
নিয়মিত স্মরণযোগ্য কথা:
আমি ৪র্থ তলার উপরে – তাই আমি দৌড়াবো না, শুধু টেবিল বা বিছানার নিচে ঢুকবো।
আমি যদি ১ম-২য় তলায় থাকি — প্রথম ২০ সেকেন্ডে বের হয়ে যাবো।
প্রস্তুতি ছাড়া বেঁচে থাকা ভাগ্যের উপর, প্রস্তুতি থাকলে ভাগ্যও সাহায্য করে।
জীবনের শিক্ষা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের স্মরণ করায়: মানুষ কতটা সহজে ভেঙে যেতে পারে। কিছু করা যায় না, কিন্তু সচেতনতা ও প্রস্তুতি জীবন রক্ষা করতে পারে।
- জীবন মানে শুধু শ্বাস নেওয়া নয়।
- জীবন মানে সচেতন থাকা।
- প্রতিটি মুহূর্তকে সম্মান করা।
শেষ কথা: জীবন অনিশ্চিত, কিন্তু কৃতজ্ঞতা নিশ্চিত। যা আছে, সেটাই আমাদের শক্তি। সেই শক্তির নাম Alhamdulillah।
অতিরিক্ত তথ্য
- ভূমিকম্পকালীন প্রাথমিক চিকিৎসা ও আহতদের যত্ন।
- জরুরি যোগাযোগের তালিকা তৈরি করুন।
- কমিউনিটি সেন্টার বা আশ্রয় কেন্দ্রের অবস্থান জানুন।