কলার থোড় হলো কলা গাছের ভোজ্য ও তন্তুযুক্ত মূল, যা বাঙালি খাবারে বহুল পরিচিত ও জনপ্রিয়। কলার থোড় দিয়ে যেমন সুস্বাদু তরকারি তৈরি করা যায়, তেমনি এর রসও দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কলার থোড়ে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম এবং নানা ধরনের উদ্ভিদজাত উপকারী যৌগ রয়েছে, যা কিডনি সুস্থ রাখা, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি উন্নত করা এবং শরীরের বিষমুক্তকরণে সহায়তা করতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কলার থোড়ের উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো—
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়ক
কিডনিতে পাথর তৈরি বা পাথরের আকার বৃদ্ধি রোধ করতে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় কলার থোড়ের রস ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পরীক্ষাগারভিত্তিক গবেষণায় দেখা গেছে, অপ্রক্রিয়াজাত কলার থোড় প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং খনিজ স্ফটিকগুলোকে পাথরে পরিণত হতে বাধা দেয়।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
কলার থোড়ে থাকা কিছু নির্দিষ্ট যৌগ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
প্রাণীদের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, পেকটিন, লিগনিন ও বিভিন্ন পলিফেনল-এর মতো জৈব সক্রিয় উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
এগুলো শরীরে—
- গ্লুকোজের কার্যকর ব্যবহার বাড়ায়
- গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণে সহায়তা করে
- গ্লুকোনিওজেনেসিস ও গ্লাইকোজেনোলাইসিসের হার কমায়
ফলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
আরও পড়ুন
অন্ত্রের কার্যকারিতা ও হজমে উপকারী
কলার থোড়ে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার রয়েছে। এর মধ্যে অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কলার থোড়—
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক
- অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
- অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, পেট ভরা ভাব ভালো রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তাই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে কলার থোড় রাখলে হজমে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
ডিটক্সিফিকেশনে সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, কলার থোড় শরীরের জন্য একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।
এটি প্রস্রাবের উৎপাদন বাড়িয়ে—
- অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়
- বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে
- মূত্রতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
এছাড়া এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক এবং বড় পাথরে পরিণত হওয়ার আগেই ক্ষুদ্র খনিজ স্ফটিক অপসারণে ভূমিকা রাখে।
কলার থোড় কম ক্যালোরিযুক্ত হলেও এতে রয়েছে পটাসিয়াম ও প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট। তাই পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি তরল ভারসাম্য বজায় রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
শেষ কথা
কলার থোড় শুধু একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারই নয়, বরং এটি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রাকৃতিক উপাদান। সঠিকভাবে রান্না করে ও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে কিডনি, হজম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য এটি বেশ উপকারী হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাবারের তালিকায় কলার থোড় যুক্ত করা হতে পারে একটি ভালো সিদ্ধান্ত।