একতাই শক্তি | বাজপাখি ও পাখিদের বুদ্ধির গল্প | Children Moral Story

বাজপাখির অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে পাখিদের একতা ও বুদ্ধির অনন্য গল্প। শিশু ও বড়দের জন্য শিক্ষণীয় নৈতিক গল্প—যেখানে প্রমাণ হয়, গায়ের শক্তির চেয়ে বুদ্ধি
wisdom

বাজপাখিটির ক্ষুধা ছিল ভয়ংকর। সকালের নাস্তায় ছোট-বড় মিলিয়ে দশ থেকে বারোটি পাখি না হলে তার চলত না। দুপুরে চাই পনের থেকে বিশটি পাখি, আর রাতে এর চেয়ে কম হলে যেন পেটই ভরত না। এ ছাড়াও সারাদিন সুযোগ পেলেই টিয়া, ময়না, চড়ুই, টুনটুনি আর বুলবুলি মিলিয়ে আরও আট–দশটি পাখি শিকার না করলে তার মনে হতো, সারা দিন সে কিছুই খায়নি।

এভাবে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশটি পাখি বাজপাখিটির পেটে যেতে লাগল। এর ফলে বনে পাখির সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে শুরু করল। অনেক পাখি প্রাণভয়ে অন্য বনে আশ্রয় নিল। যে বনে একসময় অলস দুপুরে ঘুঘু ডাকত, দোয়েল গান গাইত, কোকিল বসন্তের বার্তা দিত—সে বন এখন নীরব। শ্যামা আর ফিঙ্গেরা নাচ ভুলে গেছে। গোটা বনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল অশান্তি।

বাজপাখির অত্যাচার ও পাখিদের আতঙ্ক

রাক্ষস বাজপাখিটির অত্যাচারে সবচেয়ে বিপদে পড়ল ছোট পাখিগুলো। ওরাই সহজে তার শিকারে পরিণত হচ্ছিল। কিন্তু বড় পাখিরাও স্বস্তিতে ছিল না। বিশেষ করে চিলের অবস্থা হয়ে উঠল করুণ। আগে চিল ছোট পাখি আর ইঁদুর শিকার করে খেত, কিন্তু বাজপাখির দাপটে এখন তার ভাগ্যে আর শিকার জুটছিল না। অনাহারে দিন কাটতে লাগল।

মিটিং নিষেধাজ্ঞা ও ভয়

অতিষ্ঠ হয়ে একদিন বনের পাখিরা গোপনে মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু সে খবর বাজপাখির কানে যেতেই সে ক্ষেপে উঠল। সে সারা বনে ঘোষণা দিল— তার অনুমতি ছাড়া কেউ মিটিং করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এই ঘোষণায় সব পাখি আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। তবুও ঘুঘু, টিয়া, ময়না, হলুদ পাখি আর কাঠঠোকরা গোপনে পরামর্শ করতে বসল। কেউ পেঁচার নাম বলল, কেউ চিলের কথা তুলল— কিন্তু কাউকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করা গেল না।

দাঁড়কাক ও পাতিকাকের বুদ্ধি

এই সময় দূরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি দাঁড়কাক। সে ধীরে এগিয়ে এলে সবাই ভয় পেয়ে উড়তে চাইল। দাঁড়কাক বলল, “ভয় পেয়ো না, আমিও তোমাদের মতোই বিপদে আছি।”

শেষ পর্যন্ত দাঁড়কাক বলল— তার কোনো বুদ্ধি নেই, কিন্তু পাতিকাক নাকি খুব বুদ্ধিমান। সব পাখি এ প্রস্তাবে রাজি হলো।

পাতিকাক বলল, “আমি কৌশলে বাজপাখিটাকে কয়েক দিনের জন্য বনের বাইরে পাঠিয়ে দেব। তখন নিশ্চিন্তে মিটিং করা যাবে।”

পাতিকাকের কৌশল

পাতিকাক গিয়ে বাজপাখিকে জানাল, তার মা নাকি মারাত্মক অসুস্থ। মায়ের কথা শুনে বাজপাখি ভেঙে পড়ল। ক্ষুধার কথাও ভুলে গিয়ে সে মাকে দেখতে কয়েক দিনের জন্য বন ছেড়ে চলে গেল।

পাখিদের মিটিং ও চিলের পরিকল্পনা

বাজপাখি চলে যেতেই সব পাখি মিটিংয়ে বসল। তারা স্লোগান দিল— “বাজপাখি নিপাত যাক, পাখিরা সব রক্ষা পাক।”

অনেক বক্তৃতা হলেও কোনো কার্যকর উপায় মিলছিল না। এই সময় দূর থেকে চিল বলল, “আমার একটা বুদ্ধি আছে।”

ভয় পেলেও পাতিকাক সবাইকে আশ্বস্ত করল। চিল বলল, “শক্তিতে আমরা বাজপাখিকে হারাতে পারব না। কিন্তু বুদ্ধিতে পারব। গায়ের শক্তির চেয়ে বুদ্ধির শক্তি বড়।”

আরও পড়ুন

জালের পরিকল্পনা

চিল প্রস্তাব দিল— একটি বড় জাল তৈরি করে কড়ই গাছের মাথায় পেতে রাখতে হবে। বাজপাখি ফিরে এসে গাছে বসলেই জাল ছেড়ে দেওয়া হবে।

বাবুই পাখিরা দায়িত্ব নিল জাল তৈরির। একদিনের মধ্যেই তারা বিশাল একটি জাল বানিয়ে ফেলল। হাজার হাজার পাখি মিলে সেই জাল কড়ই গাছের মাথায় পেতে রাখল।

বাজপাখির পতন

চার দিন পর ক্লান্ত বাজপাখি ফিরে এসে কড়ই গাছে বসতেই সব পাখি একসঙ্গে জালের রশি ছেড়ে দিল। মুহূর্তেই বাজপাখি জালে আটকে গেল।

সে অনেক আকুতি-মিনতি করল। কিন্তু সারস বলল, “দুষ্টু পাখির মিষ্টি কথায় ভুলতে নেই।”

এরপর সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাজপাখির অত্যাচারের অবসান হলো।

শেষ কথা

বনে আবার শান্তি ফিরে এলো। ঘুঘু ডাকল, দোয়েল গান গাইল, কোকিল বসন্তের খবর দিল। সব পাখি বুঝে গেল—

একতা আর বুদ্ধিই সবচেয়ে বড় শক্তি।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.