রিভিউ আবেদন করার নিয়ম আপিল বিভাগ | সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ মামলা গাইড

রিভিউ আবেদন করার নিয়ম আপিল বিভাগ বাংলাদেশ অনুযায়ী কীভাবে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন? সময়সীমা, শর্ত ও সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া
review-application-appellate-division-bangladesh রিভিউ আবেদন করার নিয়ম আপিল বিভাগ: সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের পুনর্বিবেচনার শেষ আইনি সুযোগ

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রায় সাধারণত চূড়ান্ত ও বাধ্যতামূলক। এই রায়ের পর সাধারণত আর কোনো আপিলের সুযোগ থাকে না। তবে আইন একেবারে সম্পূর্ণ দরজা বন্ধ করে দেয়নি। অত্যন্ত সীমিত ও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে আপিল বিভাগের নিজস্ব রায়ের বিরুদ্ধেই একটি বিশেষ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে— যাকে বলা হয় রিভিউ আবেদন। রিভিউ কোনো নতুন মামলা নয়, এটি আপিলের বিকল্পও নয়। বরং এটি হলো আদালতের নিজের রায়ের ভেতরে গুরুতর আইনি ভুল বা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ। এই আর্টিকেলে রিভিউ আবেদন করার নিয়ম আপিল বিভাগ অনুযায়ী রিভিউ কী, কোন পরিস্থিতিতে করা যায়, ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া, সময়সীমা, খরচ এবং বাস্তব সীমাবদ্ধতা সহজ ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

রিভিউ আবেদন কী

রিভিউ আবেদন হলো— সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের দেওয়া নিজস্ব চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে সেই একই আদালতে করা একটি সীমিত পুনর্বিবেচনার আবেদন।

সহজভাবে বললে, রিভিউ মানে— আদালতকে বলা, আপনার রায়ে একটি গুরুতর ভুল হয়েছে, দয়া করে আবার দেখুন

রিভিউ আবেদনের সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি

বাংলাদেশে রিভিউ আবেদনের ভিত্তি এসেছে—

  • বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ
  • Supreme Court (Appellate Division) Rules

এই বিধান অনুযায়ী আপিল বিভাগ নিজ রায় নিজেই পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা রাখে।

রিভিউ ও আপিলের মৌলিক পার্থক্য

অনেকে মনে করেন রিভিউ মানেই আরেকটি আপিল, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

  • আপিল = রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালত
  • রিভিউ = একই আদালতে সীমিত পুনর্বিবেচনা

রিভিউতে নতুন করে পূর্ণ শুনানি হয় না, শুধু গুরুতর ভুল আছে কিনা তা দেখা হয়।

রিভিউ আবেদন কখন করা যায়

রিভিউ আবেদন করা যায় শুধুমাত্র—

  • আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে
  • যেখানে আর কোনো আইনি প্রতিকার নেই

এটি শেষ ও ব্যতিক্রমী সুযোগ।

কোন কোন কারণে রিভিউ গ্রহণযোগ্য হতে পারে

নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে রিভিউ গ্রহণযোগ্য হতে পারে—

  • রায়ে স্পষ্ট আইনি ভুল থাকলে
  • গুরুত্বপূর্ণ আইন বা সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত হলে
  • রেকর্ডভিত্তিক (error apparent on the face of record) ভুল হলে
  • ন্যায়বিচারের মারাত্মক ব্যত্যয় হলে

কোন কারণে রিভিউ করা যাবে না

নিচের কারণগুলো সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়—

  • রায়ে অসন্তুষ্ট হওয়া
  • নতুন যুক্তি বা প্রমাণ হাজির করা
  • পুনরায় পূর্ণ শুনানির দাবি

রিভিউ মানেই দ্বিতীয় সুযোগ নয়।

রিভিউ আবেদন করার সময়সীমা

সাধারণত—

  • রায়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে

রিভিউ আবেদন করতে হয়।

দেরি হলে Delay Condonation আবেদন করতে হয়, যা খুব সীমিত ক্ষেত্রে মঞ্জুর হয়।

রিভিউ আবেদন করার ধাপে ধাপে নিয়ম

  1. আপিল বিভাগের রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ
  2. সিনিয়র সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীর পরামর্শ
  3. রিভিউ আবেদনের খসড়া প্রস্তুত
  4. রিভিউ পিটিশন দাখিল
  5. কোর্ট ফি ও প্রসেস ফি পরিশোধ
  6. প্রাথমিক শুনানি
  7. রিভিউ মঞ্জুর বা খারিজ

রিভিউ পিটিশনে কী কী থাকতে হয়

একটি কার্যকর রিভিউ পিটিশনে থাকতে হয়—

  • চ্যালেঞ্জকৃত রায়ের বিবরণ
  • রেকর্ডভিত্তিক স্পষ্ট ভুলের ব্যাখ্যা
  • আইনগত যুক্তি ও রেফারেন্স
  • সংক্ষিপ্ত ও নির্ভুল দাবি

রিভিউ শুনানি কীভাবে হয়

রিভিউ শুনানি সাধারণত—

  • সংক্ষিপ্ত
  • সীমিত যুক্তিভিত্তিক

এখানে আদালত নতুন করে পুরো মামলা শোনে না, শুধু দেখে— রায়ে এমন কোনো ভুল আছে কিনা যা সংশোধন করা ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজন।

রিভিউ মঞ্জুর হলে কী হয়

রিভিউ মঞ্জুর হলে—

  • পূর্বের রায় বাতিল বা সংশোধিত হতে পারে
  • নতুন আদেশ বা দিকনির্দেশনা আসতে পারে

তবে এটি অত্যন্ত বিরল।

রিভিউ খারিজ হলে কী হয়

রিভিউ খারিজ হলে—

  • আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়
  • আর কোনো আইনি প্রতিকার থাকে না

রিভিউ আবেদনে স্টে অর্ডার পাওয়া যাবে?

সাধারণত—

  • রিভিউ আবেদনে স্বয়ংক্রিয় স্টে থাকে না

বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত চাইলে অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে পারে।

রিভিউ আবেদনের খরচ

রিভিউ আবেদনের খরচ তুলনামূলক বেশি, কারণ—

  • সিনিয়র আইনজীবী প্রয়োজন
  • আইনি বিশ্লেষণ জটিল

সাধারণত—

  • ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে
  • কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে

রিভিউ নিষ্পত্তিতে কত সময় লাগে

রিভিউ মামলার সময়—

  • কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস

সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।

আরও পড়ুন

রিভিউ আবেদনে সাধারণ ভুল

  • আপিলের মতো করে যুক্তি দেওয়া
  • নতুন প্রমাণ উপস্থাপন
  • সময়সীমা অতিক্রম
  • অভিজ্ঞ আইনজীবী না নেওয়া

রিভিউ নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণা

  • রিভিউ মানেই রায় বদলাবে
  • সব রায়ে রিভিউ হয়
  • এটি সহজ প্রক্রিয়া

বাস্তবে রিভিউ হলো সবচেয়ে সীমিত ও কঠিন আইনি প্রতিকার।

উপসংহার

রিভিউ আবেদন করার নিয়ম আপিল বিভাগ জানা থাকলে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের পরেও একটি ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আইনি দরজা খোলা থাকে। তবে রিভিউ কোনো সাধারণ প্রতিকার নয়— এটি কেবল গুরুতর আইনি ভুল সংশোধনের জন্য। তাই আবেগে নয়, আইনি বাস্তবতা ও সম্ভাবনা বিবেচনা করেই রিভিউ আবেদন করা উচিত। সঠিক মামলা, সঠিক যুক্তি এবং দক্ষ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীর মাধ্যমে রিভিউ করলে ন্যায়বিচারের শেষ সম্ভাবনাটুকু কাজে লাগানো সম্ভব।

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

রিভিউ কি আপিলের বিকল্প?

না, এটি আপিলের বিকল্প নয়।

রিভিউ মঞ্জুর হওয়ার হার কত?

অত্যন্ত কম, শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে।

রিভিউ খারিজ হলে আর কিছু করা যাবে?

সাধারণত না, রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়।

রিভিউতে নতুন প্রমাণ দেওয়া যাবে?

না, কেবল রেকর্ডভিত্তিক ভুল দেখা হয়।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.