পাইলস, অর্শরোগ, পাইলসের চিকিৎসা, পাইলসের উপসর্গ, হেমোরয়েডস, hemorrhoids, piles treatment in bangla, পায়ুপথের রক্তপাত, থ্রম্বোসড পাইলস"
পাইলস বা হেমোরয়েডস কী?
পাইলস বা হেমোরয়েড হলে পায়ুপথে বিদ্যমান রক্তনালি ফুলে যায় বা প্রদাহ হয়। অর্শরোগের উপসর্গ এর ধরনের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত অভ্যন্তরীণ অর্শরোগের ক্ষেত্রে মলদ্বারে রক্তপাত হয়, যা বেদনাবিহীন।
আর বাহ্যিক অর্শরোগ হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। থ্রমবোজড হলে তা মলদ্বার অঞ্চলে ব্যথা ও স্ফীতির কারণ হতে পারে। অনেকেই পায়ুপথের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই তা ‘হেমোরয়েডস’ মনে করেন, তবে সব সমস্যাই পাইলস নয়।
উপসর্গ
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হেমোরয়েডস আলাদাভাবে দেখা দিতে পারে; আবার অনেকের দুটিই থাকতে পারে। থ্রমবোজড হেমোরয়েডস খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে। বড় আকারের হলে চারপাশের ত্বকে চুলকানি ও অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস সাধারণত ব্যথাহীন, তবে উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তপাত হতে পারে। কখনো কখনো মল রক্তে আবৃত থাকে, যাকে হেমাটোকেজিয়া বলে। টয়লেট পেপারে বা কমোডে রক্ত দেখা যেতে পারে। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:
- শ্লৈষ্মিক স্রাব
- মলদ্বারের চারপাশের অংশ পায়ুপথে বেরিয়ে আসা
- চুলকানি
- ফিকাল ইনকনটিনেন্স (গ্যাস বা মল নির্গমনে নিয়ন্ত্রণহীনতা)
কারণ
হেমোরয়েডসের পেছনে যেসব কারণ দায়ী হতে পারে:
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা
- পুরোনো ডায়রিয়া
- দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা
- আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- ভারী মাল বহন, স্থূলতা ও কায়িক শ্রমের অভাব
- অন্ত্রের সমস্যা ও পুষ্টি ঘাটতি
- গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন পেটের অতিরিক্ত চাপ
- বার্ধক্য ও জন্মগত শিরা সমস্যাও দায়ী হতে পারে
রোগনির্ণয়
শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে পায়ু ও আশপাশের অঞ্চল পরীক্ষা করে বাহ্যিক বা স্থানচ্যুত হেমোরয়েড নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও মলদ্বারে টিউমার, পলিপ, বর্ধিত প্রস্টেট বা ফোড়া আছে কিনা তাও দেখা জরুরি।
প্রতিরোধ
হেমোরয়েড প্রতিরোধে যেসব অভ্যাস গঠন করা দরকার:
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া
- আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর তরল গ্রহণ
- নিয়মিত ব্যায়াম
- টয়লেটে অল্প সময় ব্যয়
- অতিরিক্ত ওজন কমানো ও ভারী জিনিস না তোলা
চিকিৎসা
হেমোরয়েডস চিকিৎসার কিছু প্রচলিত পদ্ধতি হলো:
- এক্সিশনাল হেমোরয়েডেক্টমি / ওপেন হেমোরয়েডেক্টমি
- ট্রান্সানাল হেমোরয়েডাল দিয়ার্তেরিয়ালাইজেশন
- স্টেপলড হেমোরয়েডেক্টমি বা স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি
পাইলস: সাধারণ সমস্যা এবং চিকিৎসা
মলাশয়ের নানা রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো পাইলস বা অর্শরোগ। এই রোগের বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। ৯০ শতাংশ পাইলসের রোগী অস্ত্রোপচার ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ভালো হয়ে যেতে পারেন।
পাইলস দুই ধরনের হয়ে থাকে: অভ্যন্তরীণ (ইন্টারনাল পাইলস) এবং বাহ্যিক (এক্সটারনাল পাইলস)।
উপসর্গ
- প্রথম ধাপ: মলত্যাগের পর ব্যথাহীন রক্তপাত দেখা যায়। বাড়তি কোনো মাংসপিণ্ড থাকে না।
- দ্বিতীয় ধাপ: মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যেতে পারে এবং মনে হয় ভেতর থেকে কিছু একটা বেরিয়ে আসে, যা আবার নিজে নিজেই ঢুকে যায়।
- তৃতীয় ধাপ: মলত্যাগের সময় বেরিয়ে আসা মাংসপিণ্ড নিজে থেকে ঢোকে না, হাতে চাপ দিয়ে ভেতরে নিতে হয়।
- চতুর্থ ধাপ: মলত্যাগের পর বের হয়ে আসা অংশ ।
- থ্রম্বোসড পাইলস: পাইলসের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
Related Posts
চিকিৎসা
পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধাপ ও উপসর্গের তীব্রতার উপর:
- প্রথম ধাপ: খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর পানি পান। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মল নরম করার ওষুধ। প্রয়োজনে রিং লাইগেশন বা ইনজেকশন (সেক্লরোথেরাপি) দেওয়া হয়।
- দ্বিতীয় ধাপ: আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার ছাড়াই উন্নতি সম্ভব।
- তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ: সাধারণত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। আধুনিক স্টেপলড হেমোরয়ডেকটমি পদ্ধতিতে বাহ্যিক কাটাছেঁড়া হয় না এবং ড্রেসিং-এর প্রয়োজন পড়ে না। এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
- যদি মলদ্বার একেবারে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং ইনফেকশন থাকে, তবে ওপেন হেমোরয়ডেকটমি বা ক্লোজ হেমোরয়ডেকটমি করতে হয়।