
১০টি অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প
শিক্ষণীয় গল্প আমরা প্রায়ই শুনি বা বলি — কখনও একজনের চিন্তাভাবনা বদলানোর জন্য, আবার কখনও জীবনের প্রেরণা হিসেবে। বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের বলব ১০টি অসাধারণ শিক্ষণীয় ছোট গল্প, যা তোমাদের জীবন-দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে সক্ষম। আশা করছি মন দিয়ে পড়বে।
ভাঙ্গা খেলনা – শিক্ষণীয় ছোট গল্প
রাতুল তার বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। তার কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। সে যা চাইত তাই পেত। দিনের পর দিন সে নানা খেলনা নিয়ে খেলত, আর কোনো খেলনা পুরনো বা ভালো না লাগলে সেটি ফেলে রাখত, এমনকি ছুঁড়ে ভেঙ্গেও ফেলত। একদিন তার মামা তাদের বাসায় এলেন। তিনি রাতুলের এইসব কাণ্ড দেখে মন খারাপ করলেন।
রাতুল যখন পুরনো কিছু খেলনা ভেঙে ফেলল, মামা তাকে সেসব ভাঙ্গা খেলনা নিয়ে পাশের এক বস্তিতে নিয়ে গেলেন। সেখানে দরিদ্র কিছু শিশুকে সেই ভাঙা খেলনাগুলো দিয়ে দিলেন। বাচ্চারা সেগুলো পেয়ে আনন্দে লাফালাফি শুরু করল। কেউ কেউ তো একটু ভাঙা খেলনাটিকেও সাত রাজার ধন মনে করে বুকে জড়িয়ে ধরল।
এ দৃশ্য দেখে রাতুল স্তব্ধ হয়ে গেল। তার চোখে জল এসে গেল। সে বুঝল যে, যেটি সে অবহেলা করে নষ্ট করছিল, সেটিই অন্য কারও কাছে অনেক বড় আনন্দের বিষয়। সে তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করল, তার যা আছে, তা যত্ন করে ব্যবহার করবে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু হলে গরিবদের দেবে।
অতীত হচ্ছে একজন মানুষের সবচেয়ে ভাল শিক্ষক
একদিন বিল গেটস একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার পর ওয়েটারকে মাত্র ৫ ডলার বকশিস দিলেন। ওয়েটার কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “স্যার, গতকাল আপনার ছেলে এখানে নাস্তা করার পর আমাকে ১০০ ডলার বকশিস দিয়েছে। অথচ আপনি, বিশ্বের অন্যতম ধনী মানুষ, আমাকে মাত্র ৫ ডলার দিলেন?”
বিল গেটস হেসে বললেন, “হ্যাঁ, কারণ সে বিশ্বের এক নম্বর ধনী মানুষের ছেলে। কিন্তু আমি একজন কাঠুরিয়ার ছেলে। আমার অতীত আমাকে শিখিয়েছে কষ্ট, শিখিয়েছে টাকা-পয়সার মূল্য।”
এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কখনো নিজের অতীত ভুলে যেও না। কারণ অতীতই একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
আশার আলো কখনোই নিভতে দেওয়া উচিত নয়
এক রুমে চারটি মোমবাতি জ্বলছিল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। প্রথম মোমবাতি বলল, “আমি শান্তি। কেউ এখন আর আমাকে ধরে রাখতে পারে না। তাই আমি নিভে যাচ্ছি।” এরপর সেটি নিভে গেল।
দ্বিতীয় মোমবাতি বলল, “আমি বিশ্বাস। শান্তি যখন নেই, তখন আমারও আর প্রয়োজন নেই।” এটিও নিভে গেল। তৃতীয় মোমবাতি বলল, “আমি ভালোবাসা। শান্তি আর বিশ্বাস ছাড়া আমি বেশিক্ষণ টিকতে পারি না।” বলেই সেটিও নিভে গেল।
হঠাৎ একটি শিশু ঘরে ঢুকল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তোমরা নিভে গেলে কেন? তোমাদের তো জ্বলে থাকা উচিত ছিল।” তখন চতুর্থ মোমবাতি বলল, “ভয় পেয়ো না, আমি এখনো জ্বলছি। আমি আশার মোমবাতি। আমার থেকে তুমি অন্যদেরও আবার জ্বালিয়ে দাও।”
ছেলেটি সেই মোমবাতি নিয়ে একে একে শান্তি, বিশ্বাস আর ভালোবাসাকেও জ্বালিয়ে দিল। ঘরটি আবার আলোয় ভরে উঠল। এই গল্প আমাদের শেখায়, যত দুঃখ-দুর্দশাই আসুক, আশার আলো কখনো নিভতে দিও না।
কোনো কিছুই আপনার উন্নতির পিছনে বাঁধা হতে পারে না
দেখো, রবীন্দ্রনাথ স্কুল পালিয়েছিলেন। নজরুল তো ঠিকমতো পড়তেই পারেননি। লালন বুঝতেও পারেননি স্কুল কী। অথচ আজ তাদের নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, পিএইচডি হচ্ছে। আন্ড্রু কার্নেগী এক সময় পার্কে ঢোকার সময় তার ময়লা পোশাকের কারণে বাধা পেয়েছিলেন। ৩০ বছর পর সেই পার্ক কিনে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন: “সবার জন্য উন্মুক্ত।”
স্টিভ জবস এক সময় সাত মাইল হেঁটে গির্জায় যেতেন একটু ভালো খাবারের জন্য। ভারতের সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকর নিম্নবর্ণের হওয়ায় স্কুলের বারান্দায় বসে ক্লাস করতেন। শচীন টেন্ডুলকারের উচ্চতা কম, আইনস্টাইন বাড়ির ঠিকানাও মনে রাখতে পারতেন না।
এই গল্পগুলো আমাদের শিখায়, কোনো কিছুকেই তোমার উন্নতির পথে বাঁধা হতে দিও না। যদি কিছু বাঁধা হয়, তবে সেটি তোমার মনের ভয়। সেই ভয় কাটিয়ে ওঠো, সাফল্য একদিন ধরা দেবেই।
জীবন পাথর, নুড়ি আর বালির সমন্বয়ের এক জটিল উদাহরণ
এক দর্শনের শিক্ষক ক্লাসে নিয়ে এলেন একটি বড় জার, কিছু বড় পাথর, নুড়ি আর বালি। তিনি প্রথমে বড় পাথরগুলো জারে রাখলেন। তারপর ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন, “জার পূর্ণ তো?” ছাত্ররা বলল, “হ্যাঁ।” এরপর শিক্ষক নুড়ি ঢাললেন। নুড়ি গিয়ে বড় পাথরের ফাঁকে ফাঁকে বসে গেল। আবার প্রশ্ন, “এখন?” ছাত্ররা বলল, “হ্যাঁ, এখন তো একেবারে পূর্ণ।”
শিক্ষক এবার বালি ঢাললেন। বালি গিয়ে সব ফাঁকা স্থান ভরিয়ে দিল। তখন শিক্ষক বললেন, “এই জারটি তোমাদের জীবন। বড় পাথরগুলো হচ্ছে তোমাদের পরিবার, স্বাস্থ্য, জীবনসঙ্গী। নুড়ি হলো চাকরি, গাড়ি, বাড়ি। আর বালি হলো ছোটখাটো আনন্দ, খেয়াল-খুশি। যদি প্রথমে বালি দিয়ে ভরো, তাহলে বড় পাথরের জন্য আর জায়গাই থাকবে না।”
তাই জীবনে আগে বড় পাথরগুলোর যত্ন নাও। বাকিগুলো এমনিতেই ফিট হয়ে যাবে।
Related Posts
তিনটি সুন্দর ঘটনা – “বিশ্বাস, ভরসা, আশা”
১. একবার সব গ্রামবাসী মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে তারা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করবে। সবাই নির্দিষ্ট জায়গায় একত্র হলো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, কেবল একটি শিশু ছাতা নিয়ে এসেছিল।
এটাই বিশ্বাস।
২. আপনি যখন একটি শিশুকে কোলে নিয়ে আকাশে ছুঁড়ে দেন, সে হাসে। কারণ সে জানে, আপনি তাকে নিচে পড়তে দেবেন না।
এটাই ভরসা।
৩. প্রতিদিন আমরা ঘুমাতে যাই। আমরা জানি না পরদিন জেগে উঠব কি না, তবুও আমরা ঘুমানোর আগে ঘড়িতে এলার্ম সেট করি।
এটাই আশা।
এই তিনটি গল্পের মাধ্যমে আমরা শিখি—জীবনে বিশ্বাস, ভরসা আর আশা কখনো হারানো উচিত নয়। এগুলোই জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যায় অন্ধকারের মধ্যেও।
প্রয়োজন যার ফুরিয়েছে—আশ্রয় কি তার বৃদ্ধাশ্রম?
একটি ছোট সংসার—বাবা, মা, ছেলে এবং ছেলের দাদা। দাদা বয়স্ক, অসুস্থ, সারাদিন শুয়ে থাকেন। একদিন ছেলের বাবা তাকে একটি ঝুড়িতে বসিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল জঙ্গলের দিকে।
পথে ছেলে জিজ্ঞেস করল, “বাবা, তুমি দাদুকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?” বাবা উত্তর দিল, “দাদু এখন কিছুই করতে পারে না। তাকে রেখে আমাদের কোনো উপকার নেই। তাই তাকে জঙ্গলে রেখে আসব।”
ছেলে তখন ভাবল কিছুক্ষণ, তারপর বলল, “ঠিক আছে, তবে ফিরে আসার সময় ঝুড়িটা নিয়ে আসবে। কারণ যখন তুমি বুড়ো হবে, তখন তোমাকেও এই ঝুড়িতে করেই নিয়ে যাব।”
বাবা স্তব্ধ হয়ে গেল। নিজের ভুল বুঝতে পারল। স্মরণ করল, যখন সে শিশু ছিল, তার বাবা তাকে কত যত্ন করে বড় করেছে। তখন সে সিদ্ধান্ত নিল—এই বুড়ো বাবাকেই এবার ভালোবাসা দিয়ে শেষ সময়টুকু দেবে।
মানসিক ক্ষত শারীরিক ক্ষতের চেয়েও বেশি ভয়ংকর
এক ছেলে খুব রাগী ছিল। তার বাবা তাকে এক ব্যাগ পেরেক দিয়ে বললেন, “যখনই রেগে যাবে, তখনই বাগানের কাঠের বেড়ায় একটি করে পেরেক মারবে।” প্রথম দিনেই ৩৭টি পেরেক মারতে হলো।
এরপর কয়েক সপ্তাহে ছেলেটি রাগ কমাতে শিখল। পেরেক মারা কমে এলো। একদিন সে আর একটিও পেরেক মারল না। এরপর তার বাবা বললেন, “যেসব দিন রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সেদিন একটি করে পেরেক খুলে ফেলো।”
অনেকদিন পর সে সব পেরেক খুলে ফেলল। বাবা তখন তাকে নিয়ে গিয়ে দেখালেন—“তুমি সব পেরেক খুলে ফেললেও বেড়ায় গর্ত রয়ে গেছে। রাগ করে কাউকে কষ্ট দিলে, তার মনে এইরকম দাগ থেকে যায়।”
এই গল্প আমাদের শেখায়, কথায় আঘাত মানসিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে শারীরিক আঘাতের চেয়েও।
মানুষকে বাহ্যিক আচরণ দেখে বিচার কোরো না
এক দম্পতি চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছে। বানরের খাঁচায় তারা দেখল, একটি পুরুষ বানর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, আদর করছে। স্ত্রী বলল, “কি চমৎকার ভালোবাসা!”
তারা এরপর সিংহের খাঁচায় গেল। সিংহ আর সিংহী দুজনে দুইদিকে বসে আছে। স্ত্রী বলল, “ভালোবাসা বুঝি মরে গেছে!”
স্বামী তখন বলল, “এক কাজ করো, সিংহীর দিকে কাঁচের টুকরো ছুঁড়ে মারো।” স্ত্রী তাই করল। সিংহ সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল সিংহীকে রক্ষা করতে।
এরপর স্বামী বলল, “এবার বানরীর দিকে ছুঁড়ো।” বানর নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেল, সঙ্গীনির দিকে ফিরেও তাকাল না।
স্বামী বলল, “দেখো, বাহ্যিক ভালোবাসা আর বাস্তব ভালোবাসার পার্থক্য কোথায়। কেউ চিৎকার করে আবেগ দেখায়, কেউ নীরব থেকে বাস্তব দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে সিংহদের চেয়ে বানরের সংখ্যাই বেশি।”
গল্পটি শিখায়—মানুষের বাহ্যিক আচরণ দেখে প্রভাবিত হয়ে যেও না। সত্যিকারের ভালোবাসা শব্দে নয়, কাজে প্রকাশ পায়।
যেখানে ভালবাসা থাকে, সেখানেই সম্পদ ও সাফল্য থাকে
একদিন এক মহিলা বাড়ির বাইরে দেখলেন তিন বৃদ্ধ বসে আছেন। তিনি বললেন, “ভেতরে আসুন, খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
তারা বললেন, “আপনার স্বামী কি বাড়িতে?”
“না।”
“তাহলে আমরা ঢুকতে পারি না।”
সন্ধ্যায় স্বামী বাড়ি ফিরে সব শুনে বললেন, “চলো, এবার ডেকে আনি।” মহিলা গিয়ে ডাকলেন। তারা বলল, “আমরা তিনজন—সম্পদ, সাফল্য, আর ভালোবাসা। আপনি যাকে ডাকবেন, কেবল সে-ই যাবে।”
স্বামী বললেন, “চলো সম্পদকে ডাকি।” স্ত্রী বললেন, “না, সাফল্যকে ডাকি।” তখন তাদের মেয়ে বলল, “আমরা না হয় ভালোবাসাকেই ডাকি।” তারা সবাই একমত হলো।
মহিলা যখন “ভালবাসা” নামের বৃদ্ধকে ডাকলেন, তখন অবাক হয়ে দেখলেন—বাকিরাও উঠলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, “আমি তো শুধু একজনকেই ডাকলাম!”
তারা বলল, “আপনি যদি সম্পদ বা সাফল্যকে ডাকতেন, কেবল সে-ই যেত। কিন্তু আপনি যেহেতু ভালোবাসাকে ডাকলেন, আমরা দুজনই তার সঙ্গে এলাম।”
এই গল্প শেখায়—যেখানে ভালোবাসা থাকে, সেখানেই সম্পদ ও সাফল্য আপনাআপনি চলে আসে।