Dhaka Metro Rail বেয়ারিং প্যাড (Bearing Pad) কী? কেন ব্যবহৃত হয় এবং দুর্ঘটনার প্রতিরোধের উপায়

জানুন Dhaka Metro Rail-এর বেয়ারিং প্যাড কী, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, কিভাবে কাজ করে এবং সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার কারণ। পড়ুন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর
Metrorail

ঢাকা মেট্রোরেল নির্মাণে বেয়ারিং প্যাড ও বিস্তার যুগ (Expansion Joint) এর ভূমিকা

ঢাকা মেট্রোরেল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের একটি যুগান্তকারী প্রকল্প। এটি শুধুমাত্র যাত্রীদের দ্রুত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা প্রদান করে না, বরং আধুনিক প্রকৌশল প্রযুক্তিরও একটি অসাধারণ উদাহরণ।

এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব বেয়ারিং প্যাড (Bearing Pad) এবং বিস্তার যুগ বা এক্সপ্যানশন জয়েন্ট (Expansion Joint) নিয়ে — এগুলো কী, কীভাবে কাজ করে, এবং কেন ঢাকা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পে এগুলোর ব্যবহার অপরিহার্য।

বেয়ারিং প্যাড (Bearing Pad) কী?

বেয়ারিং প্যাড হলো একটি বিশেষ ধরনের রাবার বা কম্পোজিট উপাদান যা সেতু, রেললাইন, কিংবা মেট্রোরেল গার্ডার ও পিয়ারের মধ্যে স্থাপন করা হয়। এর মূল কাজ হলো কাঠামোর উপরের অংশ থেকে নিচের অংশে লোড বা ওজন সুষমভাবে স্থানান্তর করা এবং একই সাথে কম্পন, ধাক্কা ও তাপজনিত চাপ শোষণ করা।

বেয়ারিং প্যাডের গঠন

বেয়ারিং প্যাড সাধারণত প্রাকৃতিক রাবার, নিওপ্রিন বা স্টিল-প্লেটসহ মাল্টি-লেয়ার রাবার দিয়ে তৈরি হয়। এই স্তরগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যাতে লোডের চাপ সহ্য করতে পারে এবং সামান্য অনুভূমিক মুভমেন্টও অনুমোদন করে।

বেয়ারিং প্যাডের কাজ

  1. লোড ট্রান্সফার: উপরের গার্ডারের ওজন বা ট্রেনের চাপ নিচের পিয়ারে সঠিকভাবে স্থানান্তর করে।
  2. কম্পন শোষণ: ট্রেন চলাচলের ফলে সৃষ্ট ধাক্কা শোষণ করে কাঠামোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  3. তাপীয় প্রসারণে সামঞ্জস্য: গরমে ধাতু বা কংক্রিট প্রসারিত হয়, ঠান্ডায় সংকুচিত হয়—এই পরিবর্তনটি সামলাতে বেয়ারিং প্যাড সাহায্য করে।
  4. দীর্ঘস্থায়িত্ব বৃদ্ধি: স্ট্রাকচারাল স্ট্রেস কমিয়ে কাঠামোর আয়ু বাড়ায়।
Related Posts

বিস্তার যুগ (Expansion Joint) কী?

বিস্তার যুগ বা Expansion Joint হলো একটি প্রকৌশল উপাদান যা সেতু, মেট্রোরেল ট্র্যাক বা বড় কংক্রিট কাঠামোর দুই অংশের মাঝে রাখা হয়। এটি তাপ, আর্দ্রতা, বা যান্ত্রিক গতিবিধির কারণে কাঠামোর প্রসারণ বা সংকোচনকে সামলাতে সাহায্য করে।

বিস্তার যুগের কাজ

  1. তাপজনিত পরিবর্তন সামলানো: দিনে গরমে কংক্রিট প্রসারিত হয় এবং রাতে ঠান্ডায় সংকুচিত হয়।
  2. কম্পন ও ধাক্কা নিয়ন্ত্রণ: ট্রেন চলাচলের সময় যে ঝাঁকুনি তৈরি হয় তা শোষণ করে।
  3. স্ট্রাকচারাল স্বাধীনতা: কাঠামোর বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে নড়াচড়া করতে পারে।
Metrorail

ঢাকা মেট্রোরেলে বেয়ারিং প্যাড ও বিস্তার যুগের ব্যবহার

ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় প্রতিটি স্প্যান বা গার্ডারের নিচে বেয়ারিং প্যাড স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি গার্ডার ৩০–৩৫ মিটার লম্বা এবং টনকে টন ওজনের। অন্যদিকে ট্র্যাক ও গার্ডারের সংযোগস্থলে এক্সপ্যানশন জয়েন্ট বসানো হয়েছে যাতে গরমে প্রসারণ বা ঠান্ডায় সংকোচনের কারণে কোনো ক্ষতি না হয়।

ব্যবহারিক উদাহরণ

যখন ট্রেন মুভ করে, প্রতিটি গার্ডারের ওপর মুহূর্তের জন্য উচ্চ লোড পড়ে। যদি বেয়ারিং প্যাড না থাকত, তাহলে এই ধাক্কা সরাসরি কংক্রিটে পড়ে ফাটল সৃষ্টি করতে পারত। আবার তাপমাত্রা বাড়লে কংক্রিটের স্প্যান সামান্য লম্বা হয়ে যায় — এক্সপ্যানশন জয়েন্ট সেই পরিবর্তনকে গ্রহণ করে।

সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা: ফার্মগেটে বেয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু

২০২৫ সালের ২৬ অক্টোবর দুপুরে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটে। মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের নিচ দিয়ে হাঁটার সময় উপরে থেকে একটি বেয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ

  1. রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতি: বেয়ারিং প্যাডের দৃঢ়তা ও অবস্থান নিয়মিত পরীক্ষা না করা।
  2. ডিজাইন বা ইনস্টলেশনের ত্রুটি: বাঁকানো স্প্যান অংশে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া।
  3. উপাদানের দুর্বলতা: রাবার বা নিওপ্রিন ক্ষয়ে যাওয়া।
  4. পরিবেশগত প্রভাব: গরম ও বৃষ্টির কারণে উপাদান বিকৃত হওয়া।

ভবিষ্যতে প্রতিরোধের উপায়

  1. নিয়মিত পরিদর্শন: বছরে অন্তত দু’বার বেয়ারিং প্যাড ও জয়েন্টের অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে।
  2. উন্নত উপাদান ব্যবহার: উচ্চমানের নিওপ্রিন বা স্টিল-লেয়ার্ড প্যাড ব্যবহার করা।
  3. রিয়েল-টাইম মনিটরিং: সেন্সর বসিয়ে লোড ও কম্পন পর্যবেক্ষণ।
  4. নিরাপদ পথচারী এলাকা: ভায়াডাক্টের নিচে চলাচল সীমিত করা ও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন।

পথচারীর জন্য সতর্কতা

  1. ভায়াডাক্ট বা গার্ডারের নিচ দিয়ে চলার সময় সজাগ থাকুন।
  2. রক্ষণাবেক্ষণ বা নির্মাণকাজ চললে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন।
  3. ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ফোনে মনোযোগ না দিয়ে চারপাশ লক্ষ্য রাখুন।
  4. যদি উপরে কোনো ঝুলন্ত বস্তু বা আলগা অংশ চোখে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরে যান এবং কর্তৃপক্ষকে জানান।

উপসংহার

বেয়ারিং প্যাডবিস্তার যুগ ঢাকা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে—রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং জনসচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি।

প্রকৌশল ত্রুটি বা উপাদানের দুর্বলতার কারণে যেন আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং, শক্ত উপাদান ব্যবহার এবং নিরাপদ পথচারী ব্যবস্থাই হতে হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।

ঢাকা মেট্রোরেল আমাদের দেশের আধুনিক প্রকৌশলের গর্ব — তাই প্রতিটি অংশের রক্ষণাবেক্ষণই জনগণের জীবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.