বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা বা বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার সময় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন আনতে পারেন। আগে এই প্রক্রিয়া ছিল কিছুটা জটিল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ কাস্টমস ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যৌথভাবে প্রক্রিয়াটি সহজ করেছে। ফলে এখন বিদেশ থেকে মোবাইল আনা, নিবন্ধন করা ও ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া অনেক সহজ হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিদেশ থেকে করমুক্ত (শুল্কমুক্ত) পণ্যে আনার তালিকা ২০২৫তবে আইন মেনে মোবাইল আনতে হলে জানা দরকার—বিদেশ থেকে কয়টি মোবাইল আনতে পারবেন, কতগুলো বিনাশুল্কে আনা যাবে, শুল্ক কত দিতে হবে এবং বিদেশ থেকে আনা মোবাইল কীভাবে বিটিআরসি-তে নিবন্ধন করবেন। এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
বিদেশ থেকে কয়টি মোবাইল আনা যায়?
বাংলাদেশ কাস্টমসের “যাত্রী অপর্যটক ব্যাগেজ বিধিমালা ২০২৩” অনুযায়ী একজন যাত্রী বিদেশ থেকে মোট ৮ (আট)টি মোবাইল ফোন দেশে আনতে পারবেন। এর মধ্যে—
- ২ (দুই)টি মোবাইল বিনাশুল্কে আনা যাবে।
- ৬ (ছয়)টি মোবাইল আনতে হলে শুল্ক দিতে হবে।
অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুইটি মোবাইল বিনাশুল্কে আনতে পারবেন। যদি তার বেশি আনেন, তবে ব্যাগেজ ঘোষণা ফরমে তা উল্লেখ করতে হবে।
আরও পড়ুন:বিদেশ থেকে মোবাইল আনার নিয়ম ২০২৫ | কয়টি মোবাইল বিনাশুল্কে আনা যাবে৮টির বেশি মোবাইল আনলে কী হবে?
যদি কেউ ৮টির বেশি মোবাইল আনেন, তবে অতিরিক্ত মোবাইলগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করবে এবং Detention Memo (আটক রশিদ) প্রদান করবে।
এই অবস্থায় যাত্রী চাইলে “Adjudication প্রক্রিয়া” সম্পন্ন করে BTRC-এর ছাড়পত্র, শুল্ক ও জরিমানা পরিশোধ সাপেক্ষে আটককৃত মোবাইলগুলো ফেরত পেতে পারেন।
উল্লেখ্য: ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে একাধিক মোবাইল আনতে হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও আমদানি লাইসেন্স প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:বিদেশ থেকে টিভি আনার নিয়ম ২০২৫ | কয়টি টিভি বিনাশুল্কে আনা যাবেবিদেশ থেকে আনা মোবাইলের শুল্ক ও ট্যাক্স
বিনাশুল্কে ২টির বেশি মোবাইল আনলে শুল্ক দিতে হবে। শুল্কের হার মোবাইলের মূল্য ও মডেলের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত নিম্নরূপে হিসাব করা হয়ঃ
- স্মার্টফোন (Smartphone): আনুমানিক ২৫% থেকে ৪৫% পর্যন্ত শুল্ক।
- বেসিক ফোন (Feature Phone): আনুমানিক ১৫% থেকে ২৫% পর্যন্ত শুল্ক।
শুল্ক নির্ধারণের সময় কাস্টমস বিভাগ মোবাইলের চালান মূল্য, বাজারমূল্য এবং প্রমাণপত্র যাচাই করে থাকে। তাই মোবাইল কেনার রসিদ বা ইনভয়েস সঙ্গে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন:বিদেশ থেকে কতটুকু স্বর্ণ আনা যায় ২০২৫েবিদেশ থেকে আনা মোবাইল নিবন্ধনের নিয়ম
বিদেশ থেকে আনা সব মোবাইল ফোনকে অবশ্যই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর অনলাইন নিবন্ধন সিস্টেমে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে মোবাইলটি বাংলাদেশে ব্যবহার করা যাবে না।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে
- বিটিআরসি’র ওয়েবসাইটে যান: https://neir.btrc.gov.bd
- ডান পাশে থাকা “User Registration” অপশনে ক্লিক করুন।
- নাম, মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) দিয়ে একটি একাউন্ট তৈরি করুন।
- একাউন্টে লগইন করে “Special Registration” সেকশনে যান।
- সেখানে আপনার মোবাইল হ্যান্ডসেটের IMEI নম্বর লিখুন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, ক্রয় রসিদ) আপলোড করুন।
- Submit বাটনে ক্লিক করুন।
সব তথ্য সঠিক থাকলে মোবাইলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে SMS-এর মাধ্যমে জানানো হবে এবং পরীক্ষামূলক সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে যুক্ত রাখা হবে।
আরও পড়ুন:বিদেশ থেকে ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রা আনার নিয়মকেন নিবন্ধন করা জরুরি?
বিদেশ থেকে আনা মোবাইল নিবন্ধন না করলে সেটি বাংলাদেশের নেটওয়ার্কে চলবে না। বিটিআরসি অনুমোদিত না হলে ফোনটি “Blacklist” হয়ে যাবে এবং সিম কার্ড কাজ করবে না।
নিবন্ধন করার মাধ্যমে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে মোবাইলটি বৈধভাবে দেশে আনা হয়েছে। এটি দেশের অবৈধ মোবাইল আমদানি রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাপ্তি
বিদেশ থেকে মোবাইল আনতে হলে কাস্টমস ও বিটিআরসি’র নিয়ম মেনে চলা জরুরি। ২টি মোবাইল বিনাশুল্কে আনা গেলেও তার বেশি আনলে শুল্ক দিতে হবে। আর যে মোবাইলই আনুন না কেন, তা অবশ্যই বিটিআরসি’র ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে নিন, যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন। নিয়ম মেনে প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, নিরাপদ থাকুন।