ঈদুল আজহার প্রধান আনন্দ—কোরবানির পশু কেনার রোমাঞ্চ
ঈদুল আজহা আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উৎসবের মূল আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু হলো পশু কোরবানি। প্রতি বছর ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসে জমজমাট কোরবানির পশুর হাট। রাজধানীসহ শহর ও গ্রামে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া কেনা-বেচা। ক্রেতারা ঈদের ৩-৪ দিন আগেই দল বেঁধে হাটে ভিড় করেন। পশু দেখে দেখে দরদাম করে পছন্দের কোরবানির পশুটি কিনে আনেন।

পশুর হাটে যাওয়ার সামাজিক আনন্দ
হাটে দল বেঁধে যাওয়ার আনন্দটা একেবারেই অন্যরকম। বিশেষ করে তরুণ ও মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে এই অভ্যাস বেশি দেখা যায়। এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘোরা, বড় গরুর সাজসজ্জা দেখা, রাস্তায় অন্যের কেনা পশুর দাম জিজ্ঞেস করা—এসব মুহূর্তে থাকে ঈদের এক আলাদা উন্মাদনা।
ডিজিটাল যুগে কোরবানির পশু কেনার ধরণে পরিবর্তন
তবে সময় বদলেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও কোরবানির পশু কেনার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন, ভিড় ঠেলে পশুর হাটে যাওয়া ঝামেলার। তাই ঘরে বসেই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে পছন্দের গরু বা খাসি কিনে নিচ্ছেন অনলাইন হাট থেকে।
অনলাইনের সুবিধা: সময় ও পরিশ্রম সাশ্রয়
শুধু পশু কেনা নয়, কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠান পশুর জবাই, প্রসেসিং ও মাংস পৌঁছে দেওয়ার সার্ভিসও দিচ্ছে। এতে সময়, শ্রম এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ভোগান্তি কমে যায়। বিশেষ করে যারা শহরে ব্যস্ত থাকেন বা যাতায়াতে সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আদর্শ সমাধান।
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে যেন প্রতারণার শিকার না হন এবং শরীয়তসম্মতভাবে কোরবানি আদায় করতে পারেন।
Related Posts
১. পশুর বয়স যাচাই করুন
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: কমপক্ষে ১ বছর বয়স হতে হবে।
গরু, মহিষ: কমপক্ষে ২ বছর বয়স হতে হবে।
উট: কমপক্ষে ৫ বছর বয়স হতে হবে।
সঠিক বয়স না হলে সে পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। পশুর দাঁতের মাধ্যমে বয়স নির্ণয় করা যায়। যেমন ২ বছর বয়সী গরুর ২টি স্থায়ী কর্তন দাঁত থাকে, আর ৫ বছর বয়সে থাকে ৮টি। ছাগলের ক্ষেত্রে অন্তত ২টি স্থায়ী দাঁত থাকতে হবে।
২. পশুতে হরমোন বা স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে কিনা যাচাই করুন
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পশুর আকৃতি বড় দেখাতে হরমোন বা স্টেরয়েড প্রয়োগ করে, যা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ক্রয়ের আগে বিক্রেতার কাছ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হোন।
৩. গর্ভবতী পশু কিনবেন না
শরীয়ত অনুযায়ী গর্ভবতী পশু কোরবানি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই পশু ক্রয়ের আগে জিজ্ঞেস করে নিন পশুটি গর্ভবতী কিনা। যদি নিশ্চিত না হতে পারেন, তাহলে বিকল্প পশু দেখুন।
বিশ্বস্ততা যাচাই করুন এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন
৪. বিক্রেতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন
পশুর বয়স, খাদ্যাভ্যাস, খামারে পালন সংক্রান্ত তথ্য বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করুন। সৎ বিক্রেতা সব তথ্য স্বচ্ছভাবে জানাবে।
৫. অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে রাখুন
পশু কেনায় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিলে প্রতারণার সম্ভাবনা কমে। পরিচিত বা খামারী কাউকে সঙ্গে রাখলে পশু নির্বাচন সহজ হয়।
ভিডিও কল ও সরাসরি দেখা – দুটোই জরুরি
৬. ভিডিও কলে পশু দেখে নিন
অনলাইনে পশু কেনার আগে বিক্রেতার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলুন। পশুটি নড়াচড়া করছে কিনা, চোখ, লেজ, কান সক্রিয় আছে কিনা—এসব খেয়াল করুন।
৭. সুস্থ পশুর বৈশিষ্ট্য বুঝে নিন
সুস্থ পশু চামড়া মসৃণ হবে, পিঠ টানটান থাকবে, চোখ উজ্জ্বল থাকবে, নাক ভেজা থাকবে এবং জাবর কাটবে। ক্লান্ত বা ঝিমুনে ভাব থাকলে সে পশু কিনবেন না।
দাম যাচাই ও দরদামের টেকনিক
৮. বাজার দর সম্পর্কে ধারণা নিন
নিকটবর্তী হাটে বা আশেপাশে কারা পশু কিনেছেন, তাদের পশুর ব্রিড ও দাম সম্পর্কে জেনে নিন। অনলাইনে পশুর দাম মিলিয়ে দেখুন, অতিরিক্ত দামে যেন কিনতে না হয়।
৯. বাজেট ঠিক রেখে দরদাম করুন
অতিরিক্ত দর বাড়িয়ে বিক্রেতা অনেক সময় ঠকায়। তাই বাজেটের মধ্যে থেকেই দরদাম করুন এবং দরদামে পটু কাউকে সঙ্গে রাখলে ভালো ফল পাবেন।
১০. ডেলিভারির শর্ত ও সময় জেনে নিন
কোন দিন পশু ডেলিভারি হবে, পরিবহন চার্জ লাগবে কিনা, পশু কোথায় নামানো হবে—এসব শর্ত আগে থেকেই জেনে নিন।
সতর্ক থেকে পরিকল্পিতভাবে অনলাইন কোরবানির পশু কিনলে ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হবে।