করবানি পশু কিনবেন কীভাবে? জানুন সেরা টিপস ও ধর্মীয় নিয়ম

করবানি পশু কেনার আগে কী কী বিষয় জানা জরুরি? এই গাইডে পাবেন ইসলামিক বিধান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দরদাম কৌশল, অনলাইন ও হাট থেকে কেনার পরামর্শ

প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় আমাদের প্রতিটি মুসলিম পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে—তা হলো করবানি। এই করবানি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বিশ্বাস, আত্মত্যাগ ও সামাজিক সংহতির এক অপূর্ব প্রতীক। কিন্তু সঠিকভাবে করবানি পশু কেনা ও প্রস্তুতি নেওয়া অনেকেই জানেন না। এই গাইডে আমরা আলোচনা করব কীভাবে করবানি পশু কিনবেন, কখন কিনবেন, কোথা থেকে কিনবেন এবং কোন পশুটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।

korbani

করবানি কী ও কেন করা হয়?

করবানির ধর্মীয় গুরুত্ব

করবানি শব্দটি আরবি “কুরবান” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘নিকটবর্তী হওয়া’। ইসলামে করবানি মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট সময়কালে পশু জবাই করা। এটি ঈদুল আজহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত করা যায়। এটি রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ এবং কুরআনের এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

সুরা কাউসার-এ বলা হয়েছে, “অতএব তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কুরবান দাও।” (সুরা কাউসার ১০৮:২)

এই আয়াত থেকেই বোঝা যায়, করবানি করা একটি প্রিয় আমল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। এটি কেবল একটি প্রথা নয়, বরং আমাদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।

ইতিহাসের পেছনের গল্প

করবানির ইতিহাস ঘুরে দাঁড়ায় হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ঘটনাতে, যেখানে তিনি আল্লাহর আদেশে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে তার স্থানে একটি পশু পাঠিয়েছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে আজও আমরা করবানি পালন করি।

এই আত্মত্যাগের ইতিহাস আমাদের শেখায়, ঈমানের পরীক্ষা কিভাবে হতে পারে এবং আল্লাহর আদেশ মানা আমাদের কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

করবানির উপযুক্ত পশু কোনগুলো?

গরু, খাসি, ছাগল, মহিষ – কোনটা বেছে নেবেন?

ইসলামে নির্দিষ্ট কিছু পশু করবানি করার জন্য অনুমোদিত। এগুলো হলো গরু, ছাগল, খাসি, ভেড়া, মহিষ, এবং উট। প্রতিটি পশুর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও মানদণ্ড রয়েছে যা করবানির জন্য পূরণ করা আবশ্যক।

  • গরু/মহিষ: এগুলো ২ বছরের বেশি বয়সী হতে হবে। এক গরু সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবান করা যায়।
  • ছাগল/খাসি/ভেড়া: এগুলো এক বছরের বেশি বয়সী হতে হবে। এগুলো এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবান হয়।

আপনার পরিবারে কয়জন সদস্য কুরবানি দিচ্ছেন, সেটা মাথায় রেখে আপনি একক পশু নেবেন নাকি শেয়ার করব তা ঠিক করতে হবে।

পশুর বয়স ও স্বাস্থ্য যাচাই

শরীয়ত অনুযায়ী পশুর নির্দিষ্ট বয়স থাকতে হবে এবং অবশ্যই পশু সুস্থ হতে হবে। যেসব পশু চোখে অন্ধ, খুবই দুর্বল, পা ভাঙ্গা বা অসুস্থ সেগুলো কুরবানির যোগ্য নয়।

কিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন:

  1. চোখ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল কিনা দেখে নিন।
  2. চলাফেরা স্বাভাবিক কি না তা খেয়াল করুন।
  3. পেটের নিচে ঘা, চুলকানি বা ইনফেকশন আছে কিনা দেখুন।
  4. খাদ্য গ্রহণে আগ্রহ আছে কি না পরীক্ষা করুন।

শরীরের গঠন দেখে অনেকে পশু বাছাই করেন, তবে অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে নিয়ে গেলে স্বাস্থ্য ও বয়স যাচাই সহজ হয়।

Related Posts

পশু কেনার সঠিক সময় কখন?

শেষ মুহূর্তে কেনার ঝুঁকি

অনেকে ঈদের ঠিক একদিন বা দুইদিন আগে পশু কেনেন। এতে যেমন সময়ের চাপ থাকে, তেমনই ভালো পশু পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় গরুর হাটে ভালো পশু ফুরিয়ে যায় কিংবা দাম অতিরিক্ত বেড়ে যায়। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে পশু রাখা, খাবার দেওয়া, পরিচর্যার ব্যবস্থাও করা কঠিন হয়ে পড়ে।

শেষ সময়ে অনেক অসাধু বিক্রেতা অসুস্থ বা অযোগ্য পশু বিক্রি করে থাকেন, যা চটজলদি চিনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে আপনি শরীয়তসম্মতভাবে কুরবানি করতে না পারার ঝুঁকিতে পড়েন।

আগেভাগে কেনার সুবিধা

আগেভাগে (ঈদের ৭-১০ দিন আগে) পশু কিনলে আপনি সহজে পরীক্ষা করে ভালো পশু বেছে নিতে পারবেন। আপনার কাছে সময় থাকবে পশুর জন্য অস্থায়ী খাঁচা বানানো, খাবার-দাবার ঠিক করা এবং পরিচর্যার ব্যবস্থা করার।

এছাড়াও অনলাইন অর্ডার দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে পশু হাতে পাওয়ার সুবিধাও এখন অনেক বাড়ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান পশুর চিকিৎসা, খাবার এবং পরিবহন পর্যন্ত দায়িত্ব নেয়, যা একদম ঝামেলামুক্ত কুরবানির অভিজ্ঞতা দেয়।

পশু কেনার স্থান বাছাই

হাট বনাম অনলাইন বাজার

বর্তমানে করবানি পশুর জন্য দুইটি প্রধান উৎস রয়েছে—পশুর হাট ও অনলাইন পশুর বাজার। প্রত্যেকটির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে:

প্যারামিটার পশুর হাট অনলাইন বাজার
পশু দেখা ও যাচাই নিজ হাতে দেখা যায় ছবি ও ভিডিওর উপর নির্ভর
দাম প্রতিযোগিতামূলক সামান্য বেশি হতে পারে
পরিবহন নিজ দায়িত্বে সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে অনেক সময়
ঝুঁকি জালিয়াতির আশঙ্কা রিভিউ দেখে নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা যায়

বিশ্বস্ত বিক্রেতা কিভাবে চিনবেন?

বিশ্বস্ত বিক্রেতা নির্বাচন করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:

  • পূর্বে যারা কিনেছেন তাদের রিভিউ শুনুন।
  • প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও অনুমোদন আছে কি না দেখুন।
  • পশুর স্বাস্থ্য সনদ দিচ্ছে কি না যাচাই করুন।
  • জামানত বা অগ্রিম টাকা নেওয়ার আগে চুক্তি পড়ুন।

একজন সৎ বিক্রেতা কখনো আপনাকে ঠকাবে না। তার পশু ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা থাকবে।

পশুর দাম নির্ধারণ ও দরদাম কৌশল

পশুর দামের ধরন

পশুর দাম নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন বয়স, ওজন, জাত, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য। বিশেষ করে গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে ওজন যত বেশি, দাম ততই চড়া হয়। আবার ‘শাহীওয়াল’, ‘রেড চিটাগাং’, ‘নেলোর’ জাতের পশু গুলো বেশি আকর্ষণীয় ও দামি। খাসি বা ছাগলের ক্ষেত্রে উচ্চ জাত এবং সুন্দর শিং ও শরীরের গঠনও দামে প্রভাব ফেলে।

যেমন ধরুন, ২০০-২৫০ কেজির গরুর দাম সাধারণত ৮০,০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১,৫০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। খাসি বা ছাগল ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, তবে এটি অবস্থান, চাহিদা ও সরবরাহের উপর পরিবর্তিত হয়।

দরদাম করার কৌশল

পশু কেনার সময় দরদাম একটা আর্টের মতো! কিছু কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করলে আপনি অনেক ভালো পশু কম দামে পেতে পারেন:

  • পূর্ব প্রস্তুতি: আগে থেকে বাজার রেট সম্পর্কে ধারণা নিন। অন্তত ২-৩টি হাট ঘুরে দাম যাচাই করুন।
  • অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিন: দরদামে পটু বা অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিয়ে গেলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
  • পোষাক-আশাকে সাধারণ থাকুন: দাম বাড়িয়ে বলার প্রবণতা কমাতে একটু সাধারণ পোশাক পরে যান।
  • প্রথমেই আগ্রহ প্রকাশ করবেন না: বিক্রেতা যেন না বুঝে যে আপনি ও পশুটিকে খুব পছন্দ করেছেন।
  • একাধিক বিক্রেতার সাথে কথা বলুন: বিকল্প থাকলে বিক্রেতার ওপর প্রেশার থাকে দাম কমানোর।

অতএব, দরদামকে আপনি সহজভাবে না নিয়ে, একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া হিসেবে ধরুন। এতে আপনি লাভবান হবেন।

পশু পরিবহন ও হ্যান্ডলিং

সুরক্ষিতভাবে পশু পরিবহন

পশু কেনার পরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপদে বাড়িতে নিয়ে আসা। ভুলভাল পরিবহনের কারণে অনেক সময় পশুর আঘাত, মানসিক চাপ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়।

যা মেনে চলতে হবে:

  1. শক্ত, খোলা জায়গায় পশুকে দাঁড় করিয়ে গাড়িতে উঠান।
  2. গাড়িতে পাট বা খড় বিছিয়ে দিন যাতে পশুর পা না পিছলে যায়।
  3. খুব বেশি পশু একসঙ্গে তুলবেন না। জায়গা অনুযায়ী মাত্রা নির্ধারণ করুন।
  4. পানির ব্যবস্থা রাখুন, দীর্ঘ যাত্রায় পশু ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে।
  5. পশুর মুখ খোলা রাখুন, যাতে সে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়।

বাড়িতে পশুর যত্ন

পশু ঘরে আনার পর যত্ন ও পরিচর্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পশুকে ভালোভাবে যত্ন না নেন, তাহলে করবানির দিন পর্যন্ত সে সুস্থ নাও থাকতে পারে।

পশুর যত্নে করণীয়:

  • প্রতিদিন পরিষ্কার পানি ও খাবার দিন। গরুর জন্য ভুষি, ঘাস এবং খড় উপযুক্ত খাবার।
  • বাড়িতে বড় জায়গা থাকলে পশুকে কিছুক্ষণ হাঁটানো উচিত।
  • প্রতি দিন পশুর গা পরিষ্কার করে দিন। ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন।
  • যদি কোনো শারীরিক অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, সাথে সাথে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোরবানির আগে পশু প্রস্তুতি

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

করবানির পূর্বে পশুর শরীর পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পশুর দেহে যদি ময়লা বা উকুন থাকে, তাহলে তা অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

যা করবেন:

  • নিয়মিত গোসল করান বা শরীর পানির ঝাপটা দিয়ে পরিষ্কার করুন।
  • যদি অতিরিক্ত উকুন বা চুলকানি থাকে, ভেটেরিনারি স্প্রে ব্যবহার করুন।
  • পাশাপাশি পশুর খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার যুক্ত করুন যাতে সে সুস্থ থাকে।

করবানির আগে পশুর শরীর ফিট থাকলে জবাইয়ের সময় ও পরে কষ্ট হয় না এবং মাংসও উন্নত মানের হয়।

অনলাইন থেকে পশু কেনার সময় সতর্কতা

বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ও অ্যাপ বাছাই

করোনা মহামারির সময় থেকে অনলাইন পশু কেনার প্রবণতা বেড়েছে। এতে সময় বাঁচে, ভিড় এড়িয়ে পশু দেখা যায় এবং অনেক সময় বাসায় ডেলিভারিও পাওয়া যায়। তবে প্রতারণার সম্ভাবনাও বেশি।

বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম চেনার উপায়:

  • পূর্বের ব্যবহারকারীদের রিভিউ পড়ুন।
  • লাইভ ভিডিও বা লাইভ পশু দেখার সুবিধা আছে কিনা দেখুন।
  • কাস্টমার সার্ভিস ও হেল্পলাইন কতটা কার্যকর তা যাচাই করুন।
  • পেমেন্ট সিস্টেম নিরাপদ কি না খেয়াল করুন।

প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

অনেক সময় ফটোশপ করা ছবি দিয়ে প্রতারকরা পশু বিক্রি করে। ছবি দেখে সুন্দর মনে হলেও বাস্তবে পশু একেবারে ভিন্ন হতে পারে। তাই নিশ্চিত না হয়ে টাকা পাঠাবেন না।

কিছু কৌশল মেনে চললে আপনি প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারেন:

  1. ডেলিভারির সময় পশু দেখে টাকা পরিশোধ করুন (COD)।
  2. ফেক ওয়েবসাইট বা নতুন ফেসবুক পেজ থেকে অর্ডার এড়িয়ে চলুন।
  3. সরকার অনুমোদিত অনলাইন মার্কেটপ্লেস বেছে নিন।

পশু জবাই ও মাংস বণ্টনের নিয়ম

শরীয়ত অনুযায়ী জবাই প্রক্রিয়া

করবানির সময় পশু জবাই করতে হলে অবশ্যই শরীয়ত অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। হাদীস ও ইসলামী বিধান অনুযায়ী সঠিকভাবে জবাই করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয়।

জবাইয়ের সময় করণীয়:

  • পশুকে খাওয়ানো ও পানি পান করিয়ে শান্ত করতে হবে।
  • জবাই করার আগে পশুর মুখ কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে।
  • বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলে ধারালো ছুরি দিয়ে একটানে গলা কাটতে হবে।
  • তিনটি শিরা—গলা, খাদ্যনালী ও রক্তনালী—কাটা জরুরি।
  • পশু নিস্তেজ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর কিছু করা যাবে না।

এই নিয়মগুলো অনুসরণ না করলে করবানি গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই কার জবাই করছেন এবং তিনি ইসলামী জ্ঞানে কতটা পারদর্শী, সেটাও খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

মাংস বণ্টনের আদর্শ পদ্ধতি

করবানির মাংস সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা হয়:

  1. নিজের জন্য
  2. আত্মীয়-স্বজনদের জন্য
  3. গরীব-দুঃস্থদের জন্য

ইসলামে মাংস বণ্টনের সময় অবশ্যই গরিবদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আপনি চাইলে পুরো মাংসই গরিবদের দান করতে পারেন, এতে কোনো বাধা নেই।

যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের যেন উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হতে হয়—এটাই করবানির অন্যতম শিক্ষা।

পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সচেতনতা

জবাই পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

পশু জবাইয়ের পর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। অনেক সময় দেখা যায় রাস্তায় রক্ত, পশুর অংশ পড়ে থাকে—এটি শুধু পরিবেশ দূষণ করে না, বরং রোগের কারণও হতে পারে।

পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে:

  • জবাইয়ের জায়গাটি পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • রক্ত ও বর্জ্য নির্দিষ্ট পলিথিন বা ড্রামে রাখুন।
  • পশুর আবর্জনা নির্ধারিত জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করুন।
  • সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কর্মীদের সহায়তা করুন।

একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়তে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন থাকা জরুরি।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ

বর্ষাকালে করবানির সময় বর্জ্য না সরালে ডেঙ্গু, মশাবাহিত রোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। তাই দ্রুত বর্জ্য অপসারণ এবং জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

আপনি চাইলে নিজ উদ্যোগেও জীবাণুনাশক ছিটাতে পারেন। পাশাপাশি এলাকাবাসীদের সচেতন করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করাও দরকার।

পশু পালনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা

নিজে পালন বনাম কেনা

বর্তমানে অনেকেই নিজেরা গরু, ছাগল পালন করে করবানি দেন। এটি একদিকে লাভজনক, অন্যদিকে একটি আত্মনির্ভরশীল উপায়ও বটে। যদি আপনি বাড়িতে একটু জায়গা রাখেন, তবে খরচও কমে যাবে।

নিজে পালন করলে সুবিধা:

  • পশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত থাকে।
  • ব্যয় সাশ্রয় হয়।
  • আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় কারণ পরিচর্যা নিজের হাতে হয়।

তবে সঠিক পরিচর্যা না করতে পারলে উল্টো পশু অসুস্থও হতে পারে, তাই অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও করবানির শিক্ষা

করবানির নৈতিকতা ও মূল্যবোধ

করবানি শুধুই পশু জবাইয়ের অনুষ্ঠান নয়, এটি মানুষের আত্মত্যাগ, সহানুভূতি, সংযম ও ঈমানের পরীক্ষা। গরিবদের পাশে দাঁড়ানো, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেওয়া, আর সমাজে সমতা সৃষ্টি করাই এর মূল শিক্ষা।

অনেকে করবানি দিয়ে তা সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার করে থাকেন। অথচ করবানির শিক্ষা হলো আত্মপ্রকাশ নয়, বরং নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

সুতরাং, করবানি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই জীবনের সবকিছুই ফানার, স্থায়ী কেবল মহান প্রভুর সন্তুষ্টি।

উপসংহার

করবানি একটি বিশাল দায়িত্ব, তবে যদি সচেতনভাবে পরিকল্পনা করে, সঠিক পশু নির্বাচন ও ইসলামী বিধান মেনে কাজ করা হয়, তাহলে এটি হয়ে ওঠে এক পূর্ণাঙ্গ ইবাদত। এই গাইডে আমরা দেখলাম কীভাবে করবানির জন্য উপযুক্ত পশু বেছে নিতে হয়, কখন কিনতে হয়, কোথা থেকে কিনলে ভালো এবং কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখা যায়।

আসুন, করবানির মাধ্যমে শুধু পশু নয়, নিজের অহংকার ও স্বার্থপরতাকেও জবাই করি, আর গড়ে তুলি এক সহানুভূতিশীল সমাজ।

FAQs

১. করবানির জন্য পশুর বয়স কত হওয়া উচিত?

গরু ও মহিষের জন্য কমপক্ষে ২ বছর এবং ছাগল ও খাসির জন্য কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে।

২. কিভাবে নিশ্চিত হবো যে পশু সুস্থ?

চোখ পরিষ্কার, চলাফেরা স্বাভাবিক, ক্ষুধা আছে ও শরীরে কোনো ঘা নেই এমন পশুই সুস্থ।

৩. অনলাইন পশু কেনা কি নিরাপদ?

বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম ও COD (Cash on Delivery) সুবিধা থাকলে অনলাইন কেনাকাটা নিরাপদ হতে পারে।

৪. জবাই করার জন্য কি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কসাই দরকার?

হ্যাঁ, শরীয়ত অনুযায়ী প্রশিক্ষিত কেউই জবাই করলে করবানি গ্রহণযোগ্য হয়।

৫. করবানির মাংস কি গরিবদের পুরোপুরি দিয়ে দেওয়া যায়?

হ্যাঁ, চাইলে পুরো মাংস গরিবদের দিয়ে দিতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই বরং এটি প্রশংসনীয়।

শেষ কথা: করবানি শুধু রীতি নয়, এটি এক আত্মশুদ্ধির শিক্ষা।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.