সুস্থ ও সবল কোরবানির পশু চেনার সহজ উপায়

কোরবানির সময় কীভাবে সুস্থ ও হালাল পশু চিনবেন? শিখে নিন পশুর স্বাস্থ্য যাচাই, হরমোন প্রয়োগ শনাক্তকরণ, দাঁতের মাধ্যমে বয়স নির্ণয় এবং ভালো পশু বাছাই

E কোরবানি পশু Rকোরবানির পশু চিনার উপায়, সুস্থ গরু কিভাবে চিনবো, কোরবানির জন্য হালাল গরু, গরুর বয়স নির্ণয়, স্টেরয়েড গরু, গরু হাট গাইড, কোরবানি ২০২৫, ভালো গরু কেনার টিপস

সুস্থ ও সবল কোরবানির পশু কিভাবে চিনবো?

কোরবানি মানে যে শুধু একটি পশু জবাই, তা কিন্তু নয়। এই পশুর উপর শুধু নিজেদের হকই নয়, আছে গরীবদের হকও। তাই কোরবানির পশুটি সুস্থ এবং ভালো হওয়া কোরবানি কবুলের সাথে সাথে গরীবদের হক আদায় এবং নিজেদের জন্যেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে কোরবানির সময় হাটগুলোতে দেশীয় পশুর পাশাপাশি বাইরের অনেক পশু থাকে। বিদেশ থেকে আসা পশুর সাথে অনেক সময় অনেক সংক্রামক রোগ চলে আসতে পারে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশুগুলো অনেক ক্লান্ত থাকে, তাই কোরবানির পশু অসুস্থ কিনা তা সঠিকভাবে বোঝা যায় না। তাই ভালো পশু নির্বাচনে আমাদের কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা খুব প্রয়োজন। নিচে এমনই কিছু ব্যাপার তুলে ধরা হলো।

korbani

সুস্থ ও সবল পশুর বৈশিষ্ট্যঃ

  • পশু সাধারণত চঞ্চল হবে
  • জাবর কাটবে
  • নাকের উপর ভেজা ভাব থাকবে
  • চামড়া টাইট থাকবে
  • সুস্থ পশুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়
  • পশু পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি খুব সংবেদনশীল এবং সজাগ থাকবে
  • চোখ উজ্জ্বল দেখাবে
  • পশু সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে
  • নাকের মধ্যখানের কালো জায়গাটি (মাজল) ভেজা থাকবে
  • পায়খানা-প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে ও নিয়মিত করবে
Related Posts

কোরবানির পশু কেনার সময় যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিতঃ

  1. ২ বছরের কম বয়সের গরু বা মহিষ এবং ৬ মাসের কম বয়সের ছাগল বা ভেড়া কোনভাবেই কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়। দাঁত দেখে প্রাপ্তবয়স্ক গরু বাছাই করা উচিত।
  2. শিং ভাঙ্গা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর—সবকিছুই ভালোমতো পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
  3. পশু কেনার আগে শরীরের কোথাও ক্ষত চিহ্ন আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।
  4. কোরবানির জন্য গাভী না কেনাই ভালো। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গরু কিন্তু কোরবানি দেওয়া যায় না।
  5. স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরু খুব শান্ত হয়, ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। পশুর উরুতে অতিরিক্ত মাংস মনে হয়।
  6. গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে, তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চায় না।
  7. ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে এবং প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।
  8. পশু দুর্বল হয়ে গেলে ঢুলতে থাকা এবং হাঁটাচলা করতে অস্বীকার করে। মুখে ক্ষত থাকলে, খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে, মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমায় এবং কান নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
  9. হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে, সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুর ত্বক মানুষের শরীরের পানিযুক্ত ফুলে যাওয়া অংশের মতো চকচক করে।
  10. অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙ্গুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।
  11. গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করা, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমানো, সহজে নড়াচড়া না করা, নীরব থাকা, খাবার না খাওয়ার লক্ষণ থাকলে এ ধরনের পশু কিনা উচিত নয়।
  12. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনাই ভালো, কারণ এই গরুর মাংসে চর্বি বেশি এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে। এই গরুগুলো সাধারণত ওষুধ প্রয়োগে মোটা করা হয়।
  13. চেষ্টা করা উচিত দেশি পশু কেনার। বিদেশ থেকে আসা পশুর সাথে অনেক সময় সংক্রামক রোগ আসে এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসায় তারা ক্লান্ত ও দুর্বল থাকে।
  14. দিনের আলো থাকতে থাকতে গরু কিনে ফেলা উচিত, কারণ রাতের বেলায় রোগাক্রান্ত গরু দেখে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

পরিশেষে, কোরবানির পশু কেনার সময় অবশ্যই এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিত। আর আমাদের একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে মোটা পশু মানেই কিন্তু সুস্থ পশু নয়। মোটা পশুতে চর্বি অনেক বেশি হয়, যা খাওয়ার পর মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করেও মোটাতাজা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কোরবানির পশু কেনার সময় আমরা বেশ ভালো অংকের টাকা সাথে বহন করি। এই বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদের আনন্দ হয়তো শেষ মুহূর্তেই মাটি হয়ে যেতে পারে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রিয় বস্তুর ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই ত্যাগের সাথে যেমন আমাদের নিজের ঈদ আনন্দ জড়িত, তেমনি জড়িত কিছু দরিদ্র মানুষের আনন্দও। তাই আমাদের কোরবানির পশুটি হওয়া উচিত সুস্থ সবল। এর জন্য পশু কেনার আগে উপরের বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন।

সবশেষে, আমাদের যাদের কোরবানির সামর্থ্য আছে বা কোরবানি দিচ্ছি, আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যারা কোরবানি দিতে পারছেন না। সবার সাথে ভাগাভাগি করেই হোক আমাদের এই ঈদ আনন্দ। তবেই ঈদের আনন্দ গাঢ় হবে প্রকৃত ত্যাগের সাথে।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.