
PCOS এর বাংলা হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, যাকে বলা যায় "বহু-সিস্টযুক্ত ডিম্বাশয় সমস্যা"। এটি মেয়েদের মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ একটি হরমোনগত সমস্যা যা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
কী হয় এতে?
PCOS হলে মেয়েদের ডিম্বাশয়ে অনেকগুলো ছোট ছোট সিস্ট (Follicle) তৈরি হয়। এই ফোলিকলগুলো সাধারণত ডিম্বাণু তৈরি করে কিন্তু PCOS রোগে তারা পরিপক্ক হতে পারে না। এর ফলে ডিম্বস্ফোটন (ovulation) হয় না, যার কারণে মাসিক বন্ধ বা অনিয়মিত হয়ে যায়।
এছাড়া, শরীরে অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) বেড়ে যায়, যা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লোম বৃদ্ধি, ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হয়।
সাধারণ লক্ষণগুলো
- অনিয়মিত মাসিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া
- শরীরে অতিরিক্ত লোম (গোঁফ, দাড়ি, বুক, পেট)
- ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বক
- ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা, বিশেষ করে পেটের আশেপাশে
- চুল পড়ে যাওয়া বা টাক পড়া
- গর্ভধারণে সমস্যা
করণীয় কী?
PCOS পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিচে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ দেওয়া হলো:
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- চিনি ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন
- প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন—BMI ২৫ এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন
নিয়মিত ব্যায়াম
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটা বা দৌড়
- যোগব্যায়াম, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি করলে হরমোন ব্যালান্স ভালো থাকে
Related Posts
চিকিৎসা ও ওষুধ
- গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন পিল সেবন করা যেতে পারে
- গর্ভধারণে সমস্যা থাকলে ক্লোমিফেন বা অন্যান্য ওভুলেশন ইনডিউসিং ওষুধ ব্যবহার করা হয়
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
- মানসিক চাপ কমান, কারণ স্ট্রেস হরমোন ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন (প্রতি রাতে ৭–৮ ঘণ্টা)
নিশ্চিত হওয়ার উপায়
- আল্ট্রাসোনো (Pelvic Ultrasound): ডিম্বাশয়ের সিস্ট দেখা যায়
- হরমোন টেস্ট: অ্যান্ড্রোজেন, LH/FSH অনুপাত, ইনসুলিন লেভেল ইত্যাদি
- গাইনোকলজিস্টের মূল্যায়ন
অবহেলা করলে ঝুঁকি
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
- বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটি
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এর সম্ভাবনাও বাড়তে পারে
উপসংহার
PCOS একটি জীবনব্যাপী প্রভাব ফেলতে পারে এমন সমস্যা হলেও, এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ওষুধ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে একজন নারী স্বাভাবিকভাবে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
আপনার মধ্যে এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দেরি না করে গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। আপনার সচেতনতা আপনার সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।