শিয়াল, খরগোশ ও কাঁকড়ার গল্প | খরগোশের কান কেন লম্বা হল

বাংলা লোককাহিনি: শিয়াল, খরগোশ ও কাঁকড়ার মজার গল্প — কীভাবে খরগোশের কান লম্বা হলো আর লেজ ছোট হয়ে গেল। শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় গল্প।
The Fox, the Rabbit and the Crab Story

শিয়ালের গিন্নির অসুখ

হয়েছে কী, শিয়ালের গিন্নির শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না। গা মেজমেজ করছে, কিছুই ভাল্লাগে না, মুখে রুচি নেই। শিয়াল মহা চিন্তায় পড়ে গেল। চারপাশে কোনো বদ্যি বা কবিরাজও নেই। কী করা যায়?

হঠাৎ শিয়ালের মনে পড়ল—“আরেহ, খরগোশের কাছে যাই না কেন?” খরগোশ চটপটে, বুদ্ধিমান। হয়তো এই মুশকিলের কোনো আসান সে দিতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। শিয়াল ছুটে গেল খরগোশের আস্তানায়।

Related Posts

খরগোশের কাছে সাহায্যের আবেদন

শিয়াল গুহার সামনে এসে হাঁক দেয়, “হুক্কাহুয়া! বলি ও খরগোশ ভায়া, বাড়িতে আছ নাকি? বড্ড বিপদে পড়ে তোমার কাছে এলাম।”

খরগোশ তখন গুহার ভেতরেই ছিল। হুক্কাহুয়া শুনে মুখ বাড়িয়ে বলে, “এসো মামা, এসো। আগে একটু বিশ্রাম নাও, তারপর বলো কী খবর?”

শিয়াল বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “আর বোলো না ভাগনে! তোমার মামির শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না। কয়েক দিন হলো মুখে কিছুই রুচছে না, খেতেও পারছে না। শরীর একেবারে রোগা–দুবলা হয়ে গেছে। কী করা যায় বলো তো?”

খরগোশের বুদ্ধি

খরগোশ খানিকটা ভাবে। তারপর বলে, “উপায় একটা আছে মামা। কাঁকড়া খেলে মুখে রুচি ফিরে পাবে।”

শিয়াল খুশি হয়ে বলে, “তাই নাকি ভাগনে? তাহলে আর দেরি কেন, চলো কাঁকড়া খুঁজে আনি।”

নদীর ধারে কাঁকড়া শিকার

দুজন রওনা হলো নদীর দিকে। খরগোশ কাঁকড়া ধরার কাজে ওস্তাদ। নদীর কাদামাটিতে দুজনে খোঁজ শুরু করল। খানিক পর খরগোশ চেঁচিয়ে উঠল—“পেয়েছি, পেয়ে গেছি!”

একটা কাদাময় গর্তে নাদুসনুদুস এক কাঁকড়া দেখা গেল। খরগোশ হাসতে হাসতে বলে, “দেখো মামা, কী মোটাসোটা কাঁকড়া পেয়েছি! এখন এটাকে ধরে আনব, তুমি শুধু দেখো।”

বিপদে খরগোশ

খরগোশ গর্তে হাত ঢোকায় খুব সাবধানে। কিন্তু গর্তটা গভীর। একটু এদিক–ওদিক হলেই বিপদ। খরগোশ হাত ঢোকায়, কিন্তু নাগাল পাচ্ছে না। তখন সে লেজটা ঢুকিয়ে দেয়।

এই সময়ের কথা, তখন খরগোশের লেজ আজকের মতো ছোট ছিল না, ছিল বেশ বড়।

লেজ ঢুকাতেই বিপদ! কাঁকড়া শক্ত করে লেজ কামড়ে ধরে। এমন জোরে কামড় যে খরগোশ ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে—“উঁহ মাগো! কাঁকড়া আমার লেজ ছিঁড়ে ফেলছে গো! বাঁচাও, বাঁচাও!”

শিয়ালের তৎপরতা

শিয়াল তখন অল্প দূরে। খরগোশের চিৎকার শুনে ছুটে আসে। দেখে সর্বনাশ! কাঁকড়া লেজ ছাড়ছে না। শিয়াল তাড়াহুড়ো করে খরগোশের কান ধরে টান দেয়—“হেঁইয়ো! হেঁইয়ো!”

কাঁকড়া পাঁজি! সে আরও শক্ত করে কামড়ে ধরে। খরগোশ ব্যথায় গলা ফাটিয়ে কাঁদে—“শিয়াল মামা, কিছু করো, নইলে মরেই যাব!”

শেষে যা ঘটল

শিয়াল এবার আরও জোরে টান দেয়। টানের চোটে কাঁকড়া কামড় ছাড়ে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে খরগোশের লেজের অর্ধেক অংশ কেটে যায়। কাঁকড়ার কাছে রয়ে যায় সেই অংশটা।

খরগোশ বাঁচে, তবে বড় ক্ষতি হয়ে যায়—লেজ ছোট হয়ে যায়, আর শিয়ালের জোরে টানাটানির কারণে তার কান লম্বা হয়ে যায়!

কাটা জায়গায় কয়েক দিন ধরে ঔষধি গাছের রস লাগাতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে ক্ষত সারলেও, খরগোশের লেজ আর আগের মতো হয়নি। কানও আর ছোট হয়নি—আজও লম্বাই রয়ে গেছে।

গল্পের শিক্ষা

এই গল্পের মাধ্যমে শেখা যায়— সাহায্য করতে হলে বুদ্ধি ও ধৈর্য প্রয়োজন। অস্থিরতা অনেক সময় আরও বড় বিপদ ডেকে আনে।

অতিরিক্ত তথ্য

বাংলা লোকগল্পে শিয়াল ও খরগোশ খুব জনপ্রিয় চরিত্র। অনুরূপ গল্প আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পাওয়া যায়। এই গল্পের মূল লক্ষ্য শিশুদের আনন্দ দেওয়া এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান।

ইন্টারনেট সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দেশের লোককাহিনিতেও খরগোশের লেজ ছোট হওয়া ও কান লম্বা হওয়ার এধরনের ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে।

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.