 
কুনোব্যাঙ ও টুনটুনির বন্ধুত্ব
অনেক দিন আগে এক বনে থাকত মস্ত বড় কুনোব্যাঙ আর ছোট্ট এক টুনটুনি। দুজনের মধ্যে ভারি দোস্তি। টুনটুনি থাকত ঝোপে–ঝাড়ে, পাতায় তৈরি তার ছোট্ট বাসায়, আর কুনোব্যাঙ থাকত ওই ঝোপের নিচে, গর্তের ভেতর।
একদিন কুনোব্যাঙ বেড়াতে গেল কাছের নতুন শহরে। ফিরে এসে সে টুনটুনিকে বলল, “দোস্ত, ভারি বিপদ, আজ জবর তুফান হবে। শহরে সবাই বলাবলি করছে। আমি তো আমার গর্তের ভেতর ঢুকলেই খালাস; এখন তোমার উপায়?”
কথাটা একদম মিথ্যা; টুনটুনিকে তাক লাগানোর জন্যই বলা। নতুন শহরের খবর শুনে বেজায় ঘাবড়ে গেল টুনটুনি। সে একছুটে বেরিয়ে পড়ল, কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে।
টুনটুনির ভয়ে হানা
টুনটুনিটা হন্যে হয়ে ছুটছে। এদিকে তখন মস্ত বড় এক রংরাং পাখি উঁচু এক চিবিদগাছের মগডালে বসে মেঘের মতো পাখনা দুটো মেলে, হাওয়া খাচ্ছিল। টুনটুনি গর্ত মনে করে তাড়াতাড়ি ওটার মুখে ঢুকে গেল।
রংরাং পাখিটা হঠাৎ ভয় পেয়ে টুনটুনিটাকে উগরে দেয় আর বুকফাটা এক বিকট ডাক ছাড়ল। ঠিক তখন বাঁদর একটি মিষ্টিকুমড়া চুরি করে খাচ্ছিল; বিকট আওয়াজে কুমড়াটা হাত ফসকে নিচে পড়ে যায়। নিচের জমিতে তখন একটি হরিণ ঘাস খাচ্ছিল; কুমড়াটা পড়ল তার পিঠে।
Related Posts
বনের অন্যান্য প্রাণীর কাণ্ড
পিঁপড়া ও শুয়োরের ঘটনা
বেচারি পিঁপড়া আর পারে কী? মুরগির সঙ্গে তো পারার জো নেই। ঝোপের ভেতর শুয়োর শুয়ে ছিল কাত হয়ে। পিঁপড়াটি তাকে কামড়ে দিল কুটুস করে। শুয়োরটা লাফিয়ে উঠল, ঘাড়ের রোম খাড়া করে ‘ঘোঁত ঘোঁত’ করতে লাগল। পিঁপড়া গা ঢাকা দিল ‘সুডু সুডু’ করে।
মুরগি ও গোসাপের ঘটনা
রেগে গিয়ে শুয়োরটি ধান খেয়ে খেয়ে সাবাড় করে দিল। এরপর ধনপতি নামের রাড়ি মেয়ে নালিশ জানাল রাজার কাছে। রাজার কাছে ঘটনাটা বিচার পেল। গোসাপ এসে কাঁকালের দগদগে ঘা দেখিয়ে বলল, “হুজুর, হরিণটা মাড়িয়ে দিয়ে কী হাল করে দিয়েছে আমার পিঠখানার। এতে কার না রাগ হয়?”
রাজ্যের বিচার
রাজার কাছে উপস্থিত সবাই কাহিনী বলল। হরিণ, বাঁদর, রংরাং পাখি, মুরগি ও পিঁপড়া প্রত্যেকে অভিযোগ করল। কুনোব্যাঙকে সেপাই টানতে টানতে রাজদরবারে হাজির করল। কুনোব্যাঙ প্রাণের ভয়ে কেঁদে বলল, “দোহাই মহারাজ! আর কাউকে উড়ো খবর বলব না।”
কুনোব্যাঙের সাজা
রাজা বললেন, “এবারও প্রাণে বেঁচেছ, কিন্তু উড়ো কথার জন্য সামান্য সাজা দরকার।” কুনোব্যাঙকে পঁচিশ ঘা বেত লাগানো হলো। বেতের আঘাতে তার গা থেকে সাদা ক্ষীর বেরোতে লাগল। কাঁঠালগাছের গায়ে তা লেগেও সাদা হয়ে গেল।
শেখার বিষয়
এমনি করে কুনোব্যাঙ শাস্তি পেল আর বনের অন্য প্রাণীরা ঘটনা থেকে শিক্ষা পেল। বনের বন্ধুত্ব, ভয়, মজা ও রাজ্যের বিচারের মিশ্রণ এই গল্পকে রঙিন ও শিক্ষণীয় করে তুলেছে।
 
