টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) কী, কেন দরকার ও অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম [২০২৫ আপডেট]

টিন সার্টিফিকেট বা TIN Certificate হলো করদাতার পরিচয়পত্র, যা অনলাইনে NBR ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে পাওয়া যায়। জানুন টিন সার্টিফিকেট কী, কেন প্রয়োজন,

বর্তমানে বাংলাদেশে যে কেউ ব্যবসা, চাকরি বা কোনো আর্থিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকলে টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে প্রয়োজন হয়। এটি আপনার Tax Identification Number (TIN) বা কর শনাক্তকরণ নম্বরের প্রমাণপত্র, যা সরকারের আয়কর বিভাগ (NBR) প্রদান করে থাকে।

টিন সার্টিফিকেট থাকার মাধ্যমে আপনি দেশের একজন নিবন্ধিত করদাতা হিসেবে পরিচিত হন এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো — টিন সার্টিফিকেট কী, কেন এটি দরকার, এবং অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার সহজ নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট কী এবং কেন দরকার?

আপনি দেশের একজন করদাতা এবং আপনার একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (Tax Identification Number) আছে এরকম একটি সনদকেই টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) বলা হয়।

১০ ডিজিটের টিআইএন নম্বরটি কর প্রদানকারী হিসেবে আপনার একটি পরিচিতি নম্বর যেটি দিয়ে আপনাকে শনাক্ত করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্টান এই TIN Number দিয়ে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারে।

 Etin

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট বের করার জন্য প্রথমে https://secure.incometax.gov.bd লিংকে ভিজিট করে Register করতে হবে। তারপর Username ও Password দিয়ে লগইন করে TIN Application মেন্যু থেকে নতুন TIN Registration করে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

এছাড়া আপনার যদি পূর্বের টিন থাকে তা দিয়েও নতুন ই-টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

ধাপ ১: একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

টিআইএন করার জন্য ভিজিট করুন- secure.incometax.gov.bd এটি এনবিআর এর ই টিন রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট। মেন্যু থেকে Register লিংকে ক্লিক করুন।

এখানে ই টিন ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট করতে হবে। একাউন্টটি ভবিষ্যতে আপনার কর অঞ্চল পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন বা টিন সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

ইউজারনেইমটি ইউনিক রাখার জন্য নাম এবং সংখ্যার মিশ্রণে দিতে পারেন। পাসওয়ার্ড ও নাম ও সংখ্যার মিশ্রণে দিবেন এবং এটি যেন কমপক্ষে ৮ ক্যারেক্টারের হয়।

আরও পড়ুন:অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন কীভাবে | Online Tax Return e-tin-certificate-registration

ধাপ ২: এক্টিভেশন কোড ভেরিফিকেশন

এরপর আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে একটি ৬ ডিজিটের Activation Code পাঠানো হবে। কোডটি দিয়ে আপনার একাউন্ট সচল (Activate) করুন।

e-tin-certificate-registration-2

ধাপ ৩: টিন সার্টিফিকেট আবেদন ফর্ম পূরণ

একাউন্ট চালু হওয়ার পর, পুনরায় লগ ইন করুন। লগইন করার পর বাম পাশের উপর থেকে, Tin Application অপশনে ক্লিক করুন।

tin-certificate-download আরও পড়ুন:আয়কর নির্দেশিকা ২০২৫–২০২৬ | NBR গাইড ও ডাউনলোড লিংক

করদাতার ধরণ নির্বাচন

এখানে করদাতার ধরণ (Taxpayer's Status) বাছাই করবেন। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, Individual Bangladeshi সিলেক্ট করুন।

tin-certificate-registration

আয়ের প্রধান উৎস নির্বাচন

এরপর আপনার আয়ের প্রধান উৎস নির্বাচন করতে হবে। চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে Service, পেশাজীবি হলে Profession, ব্যবসা হলে Business নির্বাচন করুন।

ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা

পরের পেইজে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা চাওয়া হবে। অবশ্যই তথ্যগুলো ইংরেজিতে পূরণ করবেন।

আপনার নাম, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১৭ ডিজিট) বা স্মার্ট কার্ড নম্বর (১০ ডিজিট) ও জন্মতারিখ যেন অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হয়।

tin-certificate-bd

ধাপ ৪: টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড

আপনার টিন সার্টিফিকেট তৈরী হয়ে যাবে এবং আপনাকে এর সকল তথ্য দেখানো হবে। পরের পেইজ থেকে View Certificate ও তারপর Save Certificate বাটন ক্লিক করে e Tin Certificate PDF ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

e-tin-certificate-bd

কত টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে

টিন থাকলেই আপনাকে কর দিতে হবে না। তবে আপনাকে শুধুমাত্র আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

একজন পুরুষের বাৎসরিক আয় তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বাৎসরিক সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় হলে আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার

শুধু ব্যবসা বা চাকরী নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হয়।

  • ব্যবসা শুরু করতে ট্রেড লাইসেন্স নিতে
  • গাড়ির মালিক হতে
  • সিটি করপোরেশনের অঞ্চলে থাকা কোনো জমি, ফ্ল্যাট বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করতে
  • ক্রেডিট কার্ড পেতে
  • সঞ্চয়পত্র কিনতে
  • কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে
  • নির্বাচনে প্রার্থী হতে

টিন সার্টিফিকেটের সুবিধাসমূহ

টিন সার্টিফিকেটের প্রথম সুবিধা হলো, আপনি দেশের একজন গর্বিত করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। আপনার আয়কর দিয়ে দেশ চলবে।

এছাড়া টিআইএন থাকার আরো কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা রয়েছে যেমন:

  • সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকে আপনার জমাকৃত অর্থের আয় থেকে ১০% কর কর্তন করা হবে। যদি টিআইএন না থাকে ১৫% কর্তন করা হবে
  • ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিতে টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে
  • বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন পেশাজীবি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়
আরও পড়ুন:ফেসবুক-ইউটিউব (Facebook-Youtube) থেকে আয় করলে এখন ৭.৫% কর দিতে হবে, জানুন নতুন নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা

টিন সার্টিফিকের একটিই অসুবিধা তা হচ্ছে, আপনার করযোগ্য আয় থাক বা না থাক, আপনাকে প্রতি বছর অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।

যদি রিটান জমা না দিলে আপনার ইনকাম কালো টাকা হিসাবে গণ্য হবে।

হারানো টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড

পূর্বে টিআইএন নিবন্ধন করেছেন কিন্তু টিআইএন সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেছেন। এমতাবস্থায় আপনি নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। অনলাইন থেকে টিন সনদ বের করতে পারেন।

FAQs

কেউ মারা গেলে তার টিন সার্টিফিকেট কি হবে?

কেউ মারা গেলে তার টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন না থাকলে তার উত্তরাধীকারীরা টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।

উপসংহার

সংক্ষেপে বলা যায়, টিন সার্টিফিকেট শুধু একটি কাগজ নয় — এটি আপনার আর্থিক দায়িত্বশীলতার প্রতীক। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করা এবং নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আপনার নাগরিক কর্তব্যের অংশ।

ব্যবসা, চাকরি, ব্যাংক লেনদেন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা সঞ্চয়পত্র কেনা—প্রায় সব ক্ষেত্রেই টিন সার্টিফিকেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাই এখনই সহজেই অনলাইনে eTIN রেজিস্ট্রেশন করে নিজের টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন এবং একজন গর্বিত করদাতা হিসেবে দেশের উন্নয়নে অংশ নিন। 🇧🇩

About the author

Leo
Hey! I'm Leo. I'm always eager to learn new things and enjoy sharing my knowledge with others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.